Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

রাজধানীর আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। এইসঙ্গে ঘটছে ছিনতাই, রাহাজানি ও ডাকাতি। নিত্যপণ্যের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবন এমনিতেই দুর্বিষহ। এছাড়া যানজটসহ অসহনীয় পরিবেশ বিপর্যয়ে মানুষের দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার অবধি নেই। এই বহুমুখী সংকট-সমস্যার মধ্যেই জীবনের নিরাপত্তা পর্যন্ত এখন সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপুকে রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুর আমতলা মসজিদ এলাকায় প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। জাহিদুল ইসলাম ঘাতকচক্রের প্রধান টার্গেট হলেও তাদের এলোপাথাড়ি গুলিতে সামিয়া আফসান নামের এক কলেজছাত্রীও নিহত হয়েছে। রাজনৈতিক বিবাদ, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা এই বেপরোয়া গুলিবর্ষণ ও খুনের ঘটনার কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন মহলের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ, সংঘাত, হানাহানি এবং সবকিছু বেতোয়াক্কাকরণ মনোভাব কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, খুনের এ ঘটনা তার সাক্ষ্য দেয়। ইতোমধ্যে জাহিদুল ইসলামের খুনের সঙ্গে জড়িত মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশ নামের একজনকে বগুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিবির মতে, মাসুমই জাহিদুলকে গুলি করে। তাকে ভাড়া করা হয়েছিল। যাহোক, এই জোড়াখুনের ঘটনা রাজধানীসহ সারাদেশেই ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়েছে। এর মধ্যেই গত রোববার শেওড়াপাড়া এলাকায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ‘গরিবের ডাক্তার’ হিসেবে খ্যাত আহমেদ মাহি বুলবুল নামের এক দন্ত চিকিৎসক নিহত হয়েছেন। ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বুলবুল নোয়াখালী যাচ্ছিলেন। পথে রিকশায় তাকে ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। এর আগে শনিবার বিকালে সবুজবাগে এক গৃহবধুকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকাণ্ডের আগে তারা গৃহবধুর দুই সন্তানের মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে রাখে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি বাপ্পী নামের একজনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

জীবনের চেয়ে মূল্যবান আর কিছু হতে পারে না। সেই জীবনেরই যখন নিরাপত্তা থাকে না, তখন কোনো কিছুই আসলে থাকে না। কোনো কিছুই ভালো লাগে না। ভীতি, শংকা, হতাশা সবকিছু গ্রাস করে ফেলে। এই যে নানা প্রকার অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু বা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, তাতে মানুষ বিচলিত ও আতংকিত না হয়ে পারে না। পুলিশের তথ্যই বলছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে রাজধানীতে খুন বেড়েছে। ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি ইত্যাদি যে বেড়েছে, পত্রপত্রিকার খবর তার প্রমাণ। অজ্ঞানপার্টির দৌরাত্ম্যের কথাও উল্লেখ করা যায়। পত্রপত্রিকার কয়েকদিন আগের তথ্যমতে, প্রতিদিন অন্তত ১০ জন অজ্ঞানপার্টির শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ছিনতাই-রাহাজানি, বিশেষ করে ভোরবেলা মারাত্বক রূপ নিয়েছে। আইনশৃংখলা সুরক্ষা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আইনশৃংখলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের। যদি খুন, ছিনতাই, রাহাজানি, ডাকাতি ইত্যাদি বেড়ে যায়, আইন-কানুন বেতোয়াক্কা করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় তবে ধরে নিতে হবে আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত তাদের অমনোযোগ, অবহেলা, দায়িত্বহীনতা ও কর্তব্যপালন ব্যর্থতাই এজন্য দায়ী। কোনো অজুহাতেই তারা এ দায় এড়িয়ে যেতে বা অস্বীকার করতে পারে না। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, কেবল রাজধানী ঢাকা কিংবা বড় শহরগুলোতেই নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও আইনশৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি লক্ষ করা যাচ্ছে। খুন, সন্ত্রাস, মারামারি, হানাহানি সমানে চলছে। এসবের একটা বড় অংশই ঘটছে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ-কোন্দল ও প্রভাব প্রতিষ্ঠার তৎপরতা ও তার জেরে। অন্যদিকে আইনের প্রতি মানুষের সম্মান ও মান্যতা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে হ্রাস পেয়েছে। ক্ষমতার দাপট এবং সমতা ও ন্যায়বিচার না পাওয়া এর কারণ। অবলীলায় মানুষ মানুষকে খুন করছে, অপরের সম্পদ লুট করছে এবং আরো নানারকম ঘৃণ্য অপরাধ করছে। এক খবরে দেখা গেছে, চলতি বছর প্রথম দু’ মাসে সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে ৭ জন খুন হয়েছে। ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধও বাড়ছে।

আইনশৃংখলা ও নাগরিক নিরাপত্তা স্বাভাবিক অবস্থায় স্থিতিশীল রাখতে হলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষকে সর্বদা সক্রিয় ও তৎপর থাকতে হবে। অর্পিত দায়িত্ব সততার সঙ্গে, নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতে হবে। অনেকেই মনে করেন, আমাদের পুলিশের পক্ষে আইনশৃংখলা সুরক্ষা ও নাগরিক নিরাপত্তা বিধান করা অসম্ভবপর কোনো কাজ নয়। পুলিশ ইচ্ছা করলে এবং হস্তক্ষেপ বা প্রভাব মুক্তভাবে দায়িত্ব প্রতিপালনের সুযোগ পেলে অল্পদিনের মধ্যেই সুষ্ঠু আইনশৃংখলা এবং নাগরিকদের নিরাপদ জীবনযাপন উপহার দিতে পারে। তাদের মতে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুলিশের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে পুলিশ এতো ব্যস্ত থাকে যে, আইনশৃংখলা ও নাগরিক নিরাপত্তা যথাযথভাবে নিশ্চিত করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। পুলিশের রাজনৈতিক ব্যবহার হ্রাস এবং আইনের শাসন কায়েমে দৃঢ় হলে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে। বলা বাহুল্য, সুশাসন বা আইনের শাসন আইনশৃংখলার জন্য যেমন, তেমনি নাগরিক নিরাপত্তার জন্যও অপরিহার্য। করোনাদুর্যোগের পর দেশের সর্বক্ষেত্রেই স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উৎপাদনক্ষেত্র, যাতায়াত, পর্যটন ইত্যাদি সবই পুরোদমে চালু হয়ে গেছে। এসময় সুষ্ঠু আইনশৃংখলা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি ও অপরিহার্য। আমরা আশা করবো, সরকার বাস্তবতার নিরিখে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং আইনশৃংখলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে। নাগরিক জীবনে শান্তি, স্বস্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা করার কোনো বিকল্প নেই।

 

 



 

Show all comments
  • jack ali ৩০ মার্চ, ২০২২, ১২:২৪ পিএম says : 0
    আমরা মুসলিম আমরা কেন মাদক খাব ...............
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নাগরিক নিরাপত্তা
আরও পড়ুন