পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দিনদিন সমাজে নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ছে। অনেকে অপমৃত্যুর শিকার হচ্ছে। অকালে ঝরে পড়ছে অমূল্য প্রাণ। দৈনিক ইনকিলাবের খবরে বলা হয়েছে, লাশ মিলছে খালে বিলে, রাস্তার ধারে এমনকি ডাস্টবিনেও। সড়ক দুর্ঘটনা, রেল লাইনে কাটা পড়ে, লঞ্চ ও নৌকা ডুবি কিংবা পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে মানুষ। এসব ঘটনায় অনেকেরই পরিচয় মেলে না। আবার পূর্বশত্রুতার জের ধরে কিংবা অপহরণের পরেও অনেককে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় যেখানে সেখানে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যাতে লাশের পরিচয় শনাক্ত করা না যায় সেজন্য লাশের চেহারাও বিকৃত করে দেয়া হয়। এসব বেওয়ারিশ লাশের একটি বড় অংশ নবজাতকের। বেওয়ারিশ লাশ দাফনের সেবায় নিয়োজিত আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের সূত্রানুযায়ী, ২০১৫ সালে সংস্থাটি ১২৮৪টি বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে। অন্যদিকে চলতি বছরে তিনমাসে দাফন করা হয়েছে ৩৪১টি লাশ। হিসাব মতে সংস্থাটি মাসে ১১০টিরও বেশি লাশ দাফন করছে। এ প্রসঙ্গে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের নির্বাহী পরিচালক কাজী আবুল হাসেম জানিয়েছেন, যেসব নবজাতকের লাশ পুলিশ উদ্ধার করেছে এবং সংস্থাটি দাফন করেছে সেগুলো অধিকাংশই পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
নাগরিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। বাস্তব অবস্থা হচ্ছে, দিন যতই যাচ্ছে নাগরিক নিরাপত্তা ততই হুমকির মুখে পড়ছে। হত্যা, গুম, খুন দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে বিস্তৃত হচ্ছে এর গতিপ্রকৃতি। ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন তিন থেকে চারটি বেওয়ারিশ লাশ পাওয়া গেছে রাজধানী ও এর আশপাশ এলাকায়। অধিকাংশ লাশই ছিল ক্ষত-বিক্ষত, গলিত ও গুলিবিদ্ধ। বুুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষা থেকে উদ্ধার হয়েছে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় লাশ। এমনকি সুটকেস বন্দী লাশও মিলেছে। পুলিশ সদর দফতরের হিসাব অনুযায়ী ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ বছরে খুন হয়েছে ২৫ হাজার মানুষ। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারি মাসে শুধুমাত্র শিশুহত্যার ঘটনা ঘটেছে ৪৫টি। অন্যদিকে ২০১৫ সাল অবধি তিন বছরে গুম হয়েছে ১৮৮ জন যার মধ্যে লাশ মিলেছে ৩২টি। নবজাতকের বেওয়ারিশ লাশের প্রাসঙ্গিক অলোচনায় আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের দায়িত্বশীল মনে করেন, এসব ঘটনায় আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ ও নৈতিক অবক্ষয়ের চিত্রই ফুটে উঠেছে। সমাজে পারিবারিক সহিংসতা বৃদ্ধির কারণেও হত্যা বা লাশ গুম করার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পারিবারিককলহ সম্পত্তি নিয়ে বিরোধও হত্যার কারণ হিসেবে যুক্ত হচ্ছে। এসবই মূলত সামাজিক অবক্ষয় ও সমাজের বিচারহীনতার নিদর্শন বহন করে। সামাজিক কারণের বাইরেও রাজনৈতিক কারণেও নিখোঁজ হওয়া বা বেওয়ারিশ লাশ অথবা লাশ না পাওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। রাজনৈতিক হত্যা, গুম, অপহরণ নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহল গত কয়েক বছর ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নামে ধরে নিয়ে যাবার পর আর খুঁজে না পাওয়া বা বেওয়াবিশ হিসেবে পাওয়ার খবরও প্রায়শঃই প্রকাশিত হচ্ছে। এনিয়ে দেশের সকল বিবেকবান মানুষই সোচ্চার। তবে পরিস্থিতির তেমন কোন উন্নতি নেই। এ জন্য ন্যায় বিচারের অনুপস্থিতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং সমাজের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ই দায়ী তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সমাজে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। কেউই স্বস্তিবোধ করছে না। একারণেই দিন দিন সমাজ অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। মানুষের মধ্যে জিঘাংসা আচরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমরা কেউই নিরাপদ থাকতে পারব না। এ থেকে উদ্ধারে আইনের শাসন ও অপরাধীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। বলাবাহুল্য, সমাজ অস্থিতিশীল হয়ে উঠলে এর নেতিবাচক প্রভাব সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতে বাধ্য। কাজেই নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এখন সময়ের সবচেয়ে দাবী। এ দায়িত্ব সরকারের। সরকারকেই জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হবে। দেশে দিন দিন লাশের মিছিল দীর্ঘ হওয়া কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।