পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হত্যার পর শুটার মাসুম জয়পুরহাট সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা
রাজধানীর শাজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপু ও কলেজছাত্রী সামিয়া আফরান প্রীতি হত্যার ঘটনায় শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবির দাবি, গ্রেফতারকৃত মাসুম ভাড়াটিয়া একজন শুটার। টিপুকে সরাসরি গুলি করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় সে। হত্যাকাÐের পর শুটার মাসুম সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করে। জোড়া খুনের সাথে জড়িত মাসুমের সহযোগীসহ অন্যান্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ওই সহযোগী খুনের সময় শুটার মাসুমকে মটরসাইকেলে পালাতে সহযোগিতা করে। রাজধানীর গোড়ান এলাকায় মাসুমের ডিস ব্যবসা আছে। মাসুম মোহাম্মদপুর আর্ট কলেজ থেকে গ্রাফিক ডিজাইনে পড়াশোনা শেষ করে। মাসুম গোড়ান এলাকায় স্থানীয় ছাত্রলীগের সঙ্গেও জড়িত ছিলো।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, শুটার মাসুম বলেছে, আমার টার্গেট ছিল টিপুকে হত্যা করা। তাই আমি অস্ত্রের ট্রিগার চেপে রেখেছিলাম। একাধারে গুলি বের হচ্ছিল। প্রীতিকে টার্গেট করে গুলি করিনি। প্রীতির শরীরে যে গুলি লেগেছে সেটা আমি জানতাম না। হত্যার পরেরদিন টিভি দেখে জেনেছি। তাকে আমি গুলি করতেও চাইনি। আমার টার্গেট ছিল কেবল টিপু। গতকাল রোববার দুপুরে মাসুমকে গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে হাজির করে ডিবি। তবে গণমাধ্যমের সামনে কিছু বলেনি মাসুম। গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাসুম গ্রেফতারসহ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
ডিবির এই মুখপাত্র বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানায়, হত্যাকাÐের তিনদিন আগে শুটার মাসুম ও তার এক সহযোগী হত্যা করার জন্য টিপুর নাম পায়। আর তখন থেকে সেন তার সহযোগীকে নিয়ে রেকি শুরু করে। হত্যাকাÐের আগের দিনও তারা মোটরসাইকেল নিয়ে এজিবি কলোনির ভেতরে অবস্থান করছিলো টিপুকে হত্যার জন্য। সেদিন সুযোগ না পাওয়ায় পরদিন হত্যা মিশন শেষ করে তারা। কিলিং মিশনে ছিলো মাসুম এবং তার সহযোগী ছিলো মোটরসাইকেল চালানোর দায়িত্বে। ঘটনার পরদিন একটি গাড়ি নিয়ে মাসুম জয়পুরহাট চলে যায়। গ্রেফতারকৃত মাসুম চাঁদপুরের মতলবের কাইশকানির মো. মোবারক হোসেনের ছেলে। সে রাজধানীর পশ্চিম মাদারটেকের ৬০/১৫ বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতো।
তিনি বলেন, তদন্তে নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ওই গাড়ির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আটক করার পর তাদের তথ্যের ভিত্তিতে শনিবার ২৬ মার্চ রাতে জয়পুহাট থেকে শুটার মাসুমকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ।
ডিবি কর্মকর্তা বলেন, গত ২৪ মার্চ রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে শাহজাহানপুর থানাধীন আমতলা এলাকা থেকে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম টিপু তার ড্রাইভার মনির হোসেন মুন্না এবং দুই বন্ধু মিরাজ ও আবুল কালামকে নিযে এজিবি কলোনি কাচাবাজার সংলগ্ন গ্র্যান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট থেকে মাইক্রোবাসে করে বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। বাসায় যাওয়ার পথে অজ্ঞাতনামা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি করে জাহিদুল ইসলাম টিপু ও তার ড্রাইভার এবং রিকশা আরোহী সামিয়া আফরান জামাল প্রীতিকে গুরুতর জখম করে। তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জাহিদুল ইসলাম টিপু ও রিকশা আরোহী প্রীতিকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় শাহজাহনপুর থানায় একটি মামলা হয়। গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে।
ডিবি কর্মকর্তা হাফিজ আক্তার বলেন, ঘটনার দিন ২৪ মার্চ একজন ফোন করে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মাসুমকে জানায়, টিপু তার অফিসে (রেস্টুরেন্ট) অবস্থান করছেন। সংবাদ পেয়ে মাসুম দ্রæত টিপুর রেস্টুরেন্টের কাছ থেকে টিপুকে অনুসরণ করে গুলি করার জন্য প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু টিপু অনেক লোকজনের মধ্যে থাকায় গুলি করতে না পেরে টিপুর গাড়ি অনুসরণ করে সে। টিপুর গাড়ি শাহজাহানপুর রেললাইনের আগে আমতলা রাস্তায় যানজটে আটকে পড়লে মাসুম গাড়ির চালকের পাশের আসনে বসা টিপুকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর দুই বন্ধুর সহযোগিতায় নিরাপদ স্থানে আত্মগোপনে চলে যায় শুটার মাসুম। পরে সেন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারে টিপুর মৃত্যুর সংবাদ। একই সঙ্গে নিরপরাধ রিকশা আরোহী প্রীতির মৃত্যুর সংবাদও পায় সে। এরপর মাসুম জয়পুরহাটে চলে যায়। সেখানে সীমান্ত পার না হয়ে বগুড়ায় চলে যায়। পরদিন সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে তার অবস্থান নিশ্চিত হবার পর বগুড়া জেলা পুলিশের সহযোগিতায় মাসুমকে গ্রেফতার করা হয়।
কারা মাসুমকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ আক্তার বলেন, কারা কন্টাক্ট করেছে, তাদের কয়েকজনের নাম সে বলেছে। টাকা নেয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সুবিধা পাইয়ে দেয়া, তার নামে মামলা তুলে নেয়ার সুবিধার বিষয় থাকতে পারে। এখন তদন্তে জানা যাবে মোটিভ। আর কারা ছিল, কী কারণে খুন, পেছনে কারা জড়িত তা জানার চেষ্টা চলছে।
হত্যাকাÐে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি, তবে কীসের ভিত্তিতে বলছেন মাসুমই টিপুকে হত্যা করেছে এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবি কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে নিশ্চিত হয়েছি, সে কিলিং মিশনে ছিলো। ঘটনার পর ৫/৬ ঘণ্টার মধ্যেই নিশ্চিত হই, সেই কিলিং মিশনে সেসহ দুজন ছিলো। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। পালানোর সময় তার কর্মকাÐ, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, মোটরসাইকেলের ব্যবহার সব মিলিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়েই তাকে গ্রেফতার করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির প্রধান বলেন, মাসুম বলেছে, তার নামে ৬/৭ টি মামলা আছে। এরমধ্যে একটি মার্ডার মামলাও আছে। এ কারণে সে সবসময় পালিয়ে থাকতো। সে ফেরারি ছিলো। বাসায় স্ত্রী কন্যা রয়েছে, স্কুল শিক্ষক বাবা আছে। তবে মাসুম কারও সাক্ষাৎ করতো না। রাজধানীর গোড়ান এলাকায় মাসুমের ডিস ব্যবসা আছে। মাসুম মোহাম্মদপুর আর্ট কলেজ থেকে গ্রাফিক ডিজাইনে পড়াশোনা শেষ করে। মাসুম গোড়ান এলাকায় স্থানীয় ছাত্রলীগের সঙ্গেও জড়িত ছিলো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।