Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মালয়েশিয়ায় কবে কর্মী যাবে?

| প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২২, ১২:৪৮ এএম

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে জনশক্তি রফতানি সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সাড়ে তিন মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত একজন কর্মীও মালয়েশিয়া পাঠাতে পারেনি। এমন তথ্য আছে, মালয়েশিয়া ইতোমধ্যে প্রায় দেড় লাখ ভিসা প্রস্তুত করে রেখেছে। অথচ, সেখানে কর্মী পাঠানোর তেমন কোনো উদ্যোগ-আয়োজনই করতে পারেনি সরকার। এই বিলম্বহেতু বাজারটি অন্য দেশ, বিশেষত নেপালের দিকে ঝুঁকে যেতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন। এর মধ্যেই মালয়েশিয়া নেপাল থেকে কর্মী নিয়োগের সত্যায়ন কার্যক্রম শুরু করেছে। সবকিছু ঠিক থাকা সত্ত্বেও মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর কার্যক্রম শুরু করতে এতো দেরি লাগার কারণ কী, স্বভাবতই সে প্রশ্ন উঠতে পারে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, বায়রার একজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার যাতে না খোলে তার জন্য নাকি কলকাঠি নাড়ছেন। খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কয়েকশ’ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠাচ্ছে। তারা এ জন্য কর্মীপিছু তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করছে। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমবাজারের পরিবর্তে আগ্রহী কর্মীরা মালয়েশিয়ায় যেতে চাইবে বা চাইতে পারে একারণে যে, যাওয়ার খরচ মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে মালয়েশিয়ায় কম। এমতক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে যেতে আগ্রহী কর্মীর সংখ্যা কমে যেতে পারে এবং রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর লাভের খাতায় টান পড়তে পারে। এ আশংকা থেকেই একটি সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার না খোলার পক্ষে কাজ করছে। বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্র্র্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়। জানাই যদি, তবে রিক্রুটিং এজেন্সি সিন্ডিকেটের কারসাজি নস্যাৎ করে দ্রুততম সময়ে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না কেন? এটা যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের পাশাপাশি সরকারেরও শোচনীয় ব্যর্থতা হিসেবে গণ্য।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য অন্তত ৪০ মাস বন্ধ ছিল। কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে দু’দেশের এজেন্সিগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ বাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। তারপর অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে চেষ্টা-তদবির করে এবং নীতিমালার পরিবর্তন ঘটিয়ে তবেই তা খোলার ব্যবস্থা হয়েছে। সেটাও কার্যকর উদ্যোগের অভাব, গড়িমসি ও অবহেলার কারণে এখনো অনিশ্চয়তার গর্ভেই আটকে আছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মালয়েশিয়ায় বিপুল সংখ্যক বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন। করোনাদুর্যোগ কমার পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মালয়েশিয়াতেও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ফের শুরু হয়েছে, পর্যটন পুরোদমে চালু হয়েছে, কৃষিতেও জোয়ার সৃষ্টির পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব খাতে দ্রুত তার কর্মীর প্রয়োজন। বাংলাদেশ তার বিদেশিকর্মীর একটা বড় উৎস। অন্যান্য দেশ থেকেও সে কর্মী আমদানি করে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যদি কর্মী পাঠাতে বিলম্ব করে, তাহলে সে অন্যান্য দেশ থেকে কর্মী আমদানি করবে, বাংলাদেশের দিকে চেয়ে থাকবে না। এতে মালয়েশিয়ার ক্ষতি হবে না, ক্ষতি হবে বাংলাদেশের এবং সে ক্ষতি হবে অপূরণীয়। বাংলাদেশে রফতানিযোগ্য কর্মীর সংখ্যা বিশাল। তারা বেকার। দেশে তেমন কর্মসংস্থান নেই। বিদেশে কর্মী রফতানির যে সম্ভাবনা আছে, তা কাজে লাগাতে পারলে বেকার সমস্যার যেমন উপশম হতে পারে, তেমনি রেমিট্যান্সের পরিমাণ স্ফীত হওয়ার সুযোগও সৃষ্টি হতে পারে। যা দুটি দেশের জন্য জরুরি ও অপরিহার্য। সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে এবং মালয়েশিয়াসহ এশিয়ার দেশে দেশে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা, কদর ও সুনাম রয়েছে। এই বাস্তবতা সামনে রেখে কর্মী রফতানিতে উপযুক্ত অগ্রাধিকার দেয়া হলে বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা আরো বেগবান, আরো দ্রুত ফলপ্রসূ হবে।

মালয়েশিয়া আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার। এখানে বর্তমানে অন্তত ১০ লাখ বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছে। এইসঙ্গে কিছু অবৈধভাবে যাওয়া কর্মীও সেখানে কাজ করছে বলে জানা যায়। তাদের বৈধতা, বৈধ কর্মীদের পাসর্পোট ও অন্যান্য সেবার বন্দোবস্ত করা সে দেশে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসের দায়িত্ব ও কর্তব্য। অভিযোগ রয়েছে, দূতাবাস থেকে অনেক সময় প্রয়োজনীয় সহায়তা ও সেবা পাওয়া যায় না। প্রবাসী কর্মীদের নানারকম হয়রানি ও দুর্ভোগে পড়তে হয়। এদিকে খেয়াল রাখতে সরকারের পররাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের আরও উদ্যোগী ও তৎপর হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে স্বার্থশিকারী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কথা আমরা বরাবরই শুনে আসছি। এই সিন্ডিকেট অনেক দেশেই শ্রমবাজার নষ্ট করেছে, কর্মীদের বিপন্ন করেছে এবং দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে আরব আমিরাতের সম্প্রসারণশীল শ্রমবাজারটির বন্ধ দুয়ার এখনো খোলেনি। মালয়েশিয়ার মতো বড় শ্রমবাজার খুলেও খুলছে না, অনিশ্চয়তাও কাটছে না। অবশ্যই জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অনৈতিক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। সিন্ডিকেটিবাজি সম্পূর্ণ রহিত করতে হবে। যারা সিন্ডিকেটবাজির সঙ্গে জড়িত, সেইসব রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মালয়েশিয়া

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন