Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউক্রেনকে ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থা দিচ্ছে না তুরস্ক : প্রেসিডেন্ট এরদোগান

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০২২, ১০:৩৮ পিএম

রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থা ইউক্রেনকে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে তুরস্ক। দেশটির প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান রাজধানী আঙ্কারায় শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে এরদোয়ান বলেন, এই ব্যাপারটি মিমাংসিত। এটা আমাদের সম্পত্তি এবং আমাদের নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এটি প্রয়োজন। সুতরাং, এই অস্ত্র ইউক্রেনে যাচ্ছে না।-আরটি

পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলনে যোগ দিতে ব্রাসেলসে গিয়েছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার ব্রাসেলস থেকে ফিরে রাজধানী আঙ্কারায় সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। ইউক্রেনে সামরিক অভিযানরত রুশ বাহিনীকে ঠেকাতে এর আগে দেশটিতে এস-৪০০ ক্ষেণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থা পাঠানোর জন্য তুরস্ককে আহ্বান জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিনিময়ে এরদোগানকে ছাড়কৃত মূল্যে বিভিন্ন মার্কিন প্রতিরক্ষা সামগ্রী কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়টি স্বীকার করে এরদোগান বলেন, চলতি সপ্তাহে আমার মুখপাত্র এ বিষয়ে তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) কাছে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে একটি লেখা পাঠিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ফাহরিত্তিন আলতুন। সেখানে তিনি এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থা ইস্যুতে তুরস্কের অবস্থান তুলে ধরেন। পাশাপাশি রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাসমূহ প্রত্যাহার করে দেশটির সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের বিষয়েও গুরুত্ব দেন।

২০১৮ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থা ক্রয় করেছিল তুরস্ক। রাশিয়া থেকে প্রতিরক্ষা সামগ্রী কেনার দায়ে তুরস্ককে তৎকালীন এফ-৩৫ কর্মসূচি থেকে বাদ দিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রাসেলসের সম্মেলনে ন্যাটোর সদস্যরাষ্ট্রগুলোকে রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান। পাশাপাশি বলেন, এই বিষয়ে রাশিয়ার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা জারির পক্ষপাতী নয় তুরস্ক। ‘(নিষেধাজ্ঞা জারি না করার) কারণ খুবই সহজ; আমি আমার জনগণকে তুষারহিম শীতে কষ্ট পেতে দিতে পারি না। তেমনি, আমাদের শিল্পকারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধও রাখতে পারি না আমি,’— সংবাদ সম্মেলনে বলেন এরদোগান।

ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার দ্বন্দ্বের সূত্রপাত মূলত ন্যাটোকে ঘিরেই। পশ্চিমা দেশগুলোর এই সামরিক জোটকে কেন্দ্র করে ২০০৮ সাল থেকে দ্বন্দ্ব চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। ওই বছরই ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিল ইউক্রেন। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী সদস্য’ মনোনীত করার পর আরও বাড়ে এই দ্বন্দ্ব। ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনকে চাপে রাখতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।

কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী। অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মঙ্গলবার ২৭তম দিনে পৌঁছেছে এই অভিযান। এর মধ্যে ইউক্রেনের দু’টি শহর খেরসন ও ইজিয়ামের দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী।

তবে এই যুদ্ধের শুরু থেকেই স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়েছে তুরস্ক। ইউক্রেনে আগ্রাসনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও এখন পর্যন্ত এ পথে হাঁটেনি ন্যাটোর একমাত্র এশীয় এই সদস্যরাষ্ট্র। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির পরিবর্তে কূটনৈতিক আলোচনার ভিত্তিতে রাশিয়া-ইউক্রেন সমস্যা সমাধানের প্রতি শুরু থেকেই গুরুত্ব দিয়ে আসছে তুরস্ক। সম্প্রতি দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর আনতালিয়ায় রাশিয়া ও ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকও আয়োজন করেছিল আঙ্কারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তুরস্ক

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ