পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
পানির বিভিন্ন উৎস আমাদের জীবনধারার প্রধান অনুষঙ্গ। প্রাণ-প্রকৃতির প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে দুষণমুক্ত পর্যাপ্ত পানির উপর। দেশের প্রায় সব নদ-নদী, খালবিল, হাওর-পুকুরসহ ভূ-উপরিস্থিত পানির উৎস দূষণ-দখলের শিকার হয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। অফুরন্ত পানির উৎস নদীমাতৃক বাংলাদেশে পানির এমন সংকট কয়েক দশক আগে কেউ কল্পনা করেনি। এই সংকট গঠাৎ করেই শুরু হয়নি, রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রায় সব জনপদ এখন সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে। সুপরিকল্পিত উপায়ে অবস্থার পরিবর্তনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারলে এই সংকট ভবিষ্যতে আরো তীব্র আকার ধারণের পাশাপাশি বড় ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। ঢাকা ওয়াসা এখনো শহরের সব নাগরিকের জন্য চাহিদা মত সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারছে না। প্রতিদিন কোটি কোটি লিটার পানির ঘাটতি নিয়ে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, তার শতকরা ৭০ ভাগের বেশি ভূ-গর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয়। অথচ শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে একেকটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে সারফেস ওয়াটারকে পরিশোধন করে সরবরাহ করার জন্য। তারপরও ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর থেকে চাপ কমানো যাচ্ছে না। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হচ্ছে, তা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করছে।
মাত্রাতিরিক্ত ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন যেকোনো জনপদের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বিগত বছরগুলোতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বিপজ্জনক গতিতে নিচে নেমে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর রাজধানীর পানির স্তর এক মিটার করে নেমে যাচ্ছে। যে পরিমান পানি উত্তোলন করা হচ্ছে এবং শূন্যতার সৃষ্টি হচ্ছে তা প্রাকৃতিক নিয়মে পূরণ হচ্ছে না। এর ফলে ভূ-গর্ভে ফাঁপা স্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভূমি ধস ও ভূমিকম্প সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এমনিতেই রাজধানী ভূমিকম্প প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত। মাঝারি মানের ভূমিকম্প হলে হাজার হাজার ভবন মুহূর্তে ধসে পড়বে এবং কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। গতকাল প্রকাশিত একটি ইংরেজী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জাতিসংঘ ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টে বিশ্বের যে দেশগুলো বিপজ্জনকভাবে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করে চাহিদা মেটাচ্ছে সে তালিকার শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সারাবিশ্বে যত গ্রাউন্ড ওয়াটার তোলা হয় তার শতকরা ৬০ ভাগের বেশি উত্তোলিত হয়, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুরস্কসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। ২০১০ সালের এক রিপোর্টে জানা যায়, বাংলাদেশে ৩০ বর্গকিলোমিটার পরিমান ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হয়েছিল যার, শতকরা ৮৬ ভাগই ব্যবহৃত হয়েছে কৃষির সেচকাজে। উত্তোলিত ভূ-গর্ভস্থ পানির মাত্র ১০ ভাগ নাগরিক গৃহস্থালি সরবরাহ লাইনে এবং শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঢাকার ভূ-গর্ভেন পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাওয়া অত্যন্ত শঙ্কার বিষয়। এক্ষেত্রে ওয়াসা তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। ২০১০ সালে ‘ঘুরে দাড়াও ঢাকা ওয়াসা’ শ্লোগান সামনে রেখে ২০২১ সাল নাগাদ ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার শতকরা ৭০ ভাগ থেকে ৩০ ভাগে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছিল। ওয়াসা এ প্রতিশ্রæতি রক্ষা করতে পারেনি। বরং এক দশকে ভূ-গর্ভস্ত পানির ব্যবহার কমিয়ে আনার বদলে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের হার বছরে ৩২ কিউবিক কিলোমিটার। মাত্রারিক্ত গ্রাউন্ডওয়াটার উত্তোলনের কারণে পানিশূন্যতা, আর্সেনিক দূষণসহ নানাবিধ সংকটের কথা বলা হয়েছে রিপোর্টে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পানি সংকট, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির নিরাপত্তা ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে। ইতিমধ্যে বায়ুদূষণ, পানিদূষণসহ নানামুখী সংকটে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অনুপযোগী শহরের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ঢাকার চারপাশের নদনদীসহ দেশের সব নদনদী ও জলাধারগুলোকে দূষণ ও দখলমুক্ত করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য। শিল্প ও নাগরিক বর্জ্যে নদ-নদী দূষণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঠেকাতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। বৃষ্টি ও বর্ষার পানি কিভাবে ধরে রাখা যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। জলাধার, পুকুর ও লেক সংস্কার করে পানি ধরে রাখতে হবে। উন্নততর পানি শোধনাগার স্থাপন করে নদীর পানি ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।