Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর থেকে চাপ কমাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২২, ১২:০২ এএম

পানির বিভিন্ন উৎস আমাদের জীবনধারার প্রধান অনুষঙ্গ। প্রাণ-প্রকৃতির প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে দুষণমুক্ত পর্যাপ্ত পানির উপর। দেশের প্রায় সব নদ-নদী, খালবিল, হাওর-পুকুরসহ ভূ-উপরিস্থিত পানির উৎস দূষণ-দখলের শিকার হয়ে এক বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। অফুরন্ত পানির উৎস নদীমাতৃক বাংলাদেশে পানির এমন সংকট কয়েক দশক আগে কেউ কল্পনা করেনি। এই সংকট গঠাৎ করেই শুরু হয়নি, রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রায় সব জনপদ এখন সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে। সুপরিকল্পিত উপায়ে অবস্থার পরিবর্তনে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে না পারলে এই সংকট ভবিষ্যতে আরো তীব্র আকার ধারণের পাশাপাশি বড় ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। ঢাকা ওয়াসা এখনো শহরের সব নাগরিকের জন্য চাহিদা মত সুপেয় পানি সরবরাহ করতে পারছে না। প্রতিদিন কোটি কোটি লিটার পানির ঘাটতি নিয়ে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে, তার শতকরা ৭০ ভাগের বেশি ভূ-গর্ভ থেকে উত্তোলন করা হয়। অথচ শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে একেকটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে সারফেস ওয়াটারকে পরিশোধন করে সরবরাহ করার জন্য। তারপরও ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর থেকে চাপ কমানো যাচ্ছে না। এতে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নেমে যে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হচ্ছে, তা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করছে।

মাত্রাতিরিক্ত ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন যেকোনো জনপদের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বিগত বছরগুলোতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বিপজ্জনক গতিতে নিচে নেমে যাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর রাজধানীর পানির স্তর এক মিটার করে নেমে যাচ্ছে। যে পরিমান পানি উত্তোলন করা হচ্ছে এবং শূন্যতার সৃষ্টি হচ্ছে তা প্রাকৃতিক নিয়মে পূরণ হচ্ছে না। এর ফলে ভূ-গর্ভে ফাঁপা স্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে ভূমি ধস ও ভূমিকম্প সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এমনিতেই রাজধানী ভূমিকম্প প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত। মাঝারি মানের ভূমিকম্প হলে হাজার হাজার ভবন মুহূর্তে ধসে পড়বে এবং কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হবে। গতকাল প্রকাশিত একটি ইংরেজী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের জাতিসংঘ ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টে বিশ্বের যে দেশগুলো বিপজ্জনকভাবে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করে চাহিদা মেটাচ্ছে সে তালিকার শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সারাবিশ্বে যত গ্রাউন্ড ওয়াটার তোলা হয় তার শতকরা ৬০ ভাগের বেশি উত্তোলিত হয়, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুরস্কসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। ২০১০ সালের এক রিপোর্টে জানা যায়, বাংলাদেশে ৩০ বর্গকিলোমিটার পরিমান ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হয়েছিল যার, শতকরা ৮৬ ভাগই ব্যবহৃত হয়েছে কৃষির সেচকাজে। উত্তোলিত ভূ-গর্ভস্থ পানির মাত্র ১০ ভাগ নাগরিক গৃহস্থালি সরবরাহ লাইনে এবং শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকার ভূ-গর্ভেন পানির স্তর ক্রমে নিচে নেমে যাওয়া অত্যন্ত শঙ্কার বিষয়। এক্ষেত্রে ওয়াসা তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। ২০১০ সালে ‘ঘুরে দাড়াও ঢাকা ওয়াসা’ শ্লোগান সামনে রেখে ২০২১ সাল নাগাদ ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার শতকরা ৭০ ভাগ থেকে ৩০ ভাগে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছিল। ওয়াসা এ প্রতিশ্রæতি রক্ষা করতে পারেনি। বরং এক দশকে ভূ-গর্ভস্ত পানির ব্যবহার কমিয়ে আনার বদলে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের রিপোর্ট অনুসারে, বাংলাদেশে ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলনের হার বছরে ৩২ কিউবিক কিলোমিটার। মাত্রারিক্ত গ্রাউন্ডওয়াটার উত্তোলনের কারণে পানিশূন্যতা, আর্সেনিক দূষণসহ নানাবিধ সংকটের কথা বলা হয়েছে রিপোর্টে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পানি সংকট, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির নিরাপত্তা ক্রমেই হুমকির মুখে পড়ছে। ইতিমধ্যে বায়ুদূষণ, পানিদূষণসহ নানামুখী সংকটে ঢাকা বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অনুপযোগী শহরের তালিকায় স্থান পেয়েছে। এ অবস্থার পরিবর্তন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। ঢাকার চারপাশের নদনদীসহ দেশের সব নদনদী ও জলাধারগুলোকে দূষণ ও দখলমুক্ত করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া অপরিহার্য। শিল্প ও নাগরিক বর্জ্যে নদ-নদী দূষণের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঠেকাতে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। বৃষ্টি ও বর্ষার পানি কিভাবে ধরে রাখা যায়, তার ব্যবস্থা করতে হবে। জলাধার, পুকুর ও লেক সংস্কার করে পানি ধরে রাখতে হবে। উন্নততর পানি শোধনাগার স্থাপন করে নদীর পানি ব্যবহারের উপযোগী করে তোলার পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

Show all comments
  • নাবিল আব্দুল্লাহ ২৩ মার্চ, ২০২২, ৯:৫৯ এএম says : 0
    মাত্রাতিরিক্ত ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন যেকোনো জনপদের জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdullah Al Mamun ২৩ মার্চ, ২০২২, ১০:০৩ এএম says : 0
    বৃষ্টি ও বন্যার পানি ধারণ করতে হবে। নদ-নদীর পানি সংরক্ষণ করে পরিশোধন করে ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nahid Hossain ২৩ মার্চ, ২০২২, ১০:০৪ এএম says : 0
    সমুদ্রের লোনা পানিকেও পরিশোধন করে ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kamrul Hasan ২৩ মার্চ, ২০২২, ১০:০৪ এএম says : 0
    পানি খাতে ব্যয় বরাদ্দ বৃদ্ধি করে গবেষণা বাড়ানোর পাশাপাশি নদ-নদী ও লোনা পানিকে খাবার উপযোগী করতে হবে। তা না করতে পারলে নিকট ভবিষ্যতেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বেঁচে থাকার নিয়ামক পানি সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
    Total Reply(0) Reply
  • Tanvir Ahmed ২৩ মার্চ, ২০২২, ১০:১১ এএম says : 0
    উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি ছোট-বড় নদ-নদী সংস্কার করতে হবে। আর বড় বড় নদীগুলোকে ড্রেজিংয়ের আওতায় এনে গভীর করতে হবে। যেন বন্যার পানি ধরে রেখে লো-লিপ পাম্প বসিয়ে নদীর দুই প্রান্ত থেকে পানি তুলে সেচকার্য চালানো যায়। তাহলে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর অনেকাংশেই চাপ কমে আসবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Umme Taiaba ২৩ মার্চ, ২০২২, ১০:০৮ এএম says : 0
    উজানের পানি স্বাভাবিকভাবে না পাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ওপর চাপও বাড়ছে। ফলে পানির স্তর প্রতিনিয়তই নিচে নামছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য বর্ষাকালে বৃষ্টি ও বন্যার পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Jahidul Hasan ২৩ মার্চ, ২০২২, ১০:০৮ এএম says : 0
    তিস্তাসহ অভিন্ন ৫৪টি নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা এখন অতীব প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mahbubul Alam ২৩ মার্চ, ২০২২, ১০:১১ এএম says : 0
    জীবন রক্ষাকারী পানির ব্যবহারে আমাদের অতিমাত্রায় সচেতন হতে হবে এবং পানির অপচয় রোধ করতে হবে। কারণ পানি অফুরন্ত নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Nazrul Islam ২৩ মার্চ, ২০২২, ১০:১১ এএম says : 0
    একদিন পানিও শেষ হয়ে আসবে। এজন্য ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের পথেই আমাদের হাঁটতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে পানির সংকট মোকাবেলা করা অনেকাংশেই কঠিন হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল হাই রঞ্জু ২৩ মার্চ, ২০২২, ১০:১২ এএম says : 0
    পদ্মার পানি পরিশোধনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনা উচিত। এমনিতেই বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ায় এখানকার পানির স্তর অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি গভীরে। সঙ্গত কারণেই ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া জরুরি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন