Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফরিদপুরের নদ-নদী অস্তিত্ব সঙ্কটে

আনোয়ার জাহিদ | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০২২, ১২:০২ এএম

ভারতের ফারাক্কার মরণ বাঁধের ফলে বাংলাদেশের নদ-নদী এখন মৃত্যুর মুখে। ফারাক্কার মরণ ছোবলে দেশের প্রমত্তা পদ্মা নদীর বুকে এখন ধূ ধূ বালু চর। কোথাও কোথাও এ চরে হচ্ছে চাষাবাদ। ফরিদপুর শহরমুখী অংশেও পদ্মার বুকে জেগেছে ৪ কিলোমিটার ডুবোচর। এর ফলে পদ্মার প্রধান শাখা নদী কুমার, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ, ভুবনেশ্বর, চন্দনা, বাড়াশিয়াও এখন মৃত প্রায়। এসব নদীতে নেই পানি প্রবাহ। দখলে-দূষণে এসব নদী আজ জীর্ণ-শীর্ণ মরা খালে পরিণত হয়েছে। এসব নদীতে পানি না থাকায় বেকার হয়ে পড়ছে শাতাধিক জেলে। তারা পেশা পরিবর্তন করে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া দখলদাররা কুমার নদীর দুই পাড় দখল করে দোকান পাট ও বাসাবাড়ি নির্মাণ করায় নদী হারিয়েছে তার চির চেনা রূপ। এক সময়ের ¯্রােতস্বিনী কুমার নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। শহরের ময়লা আবর্জনার ঠাঁই হচ্ছে নদীর বুকে। কুমার নদী এখন ময়লা আবর্জনার ভাগারে পরিণত হয়েছে।

কুমার নদীর প্রাণ ফেরাতে ৬০ কিলোমিটার খনন করলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দুই পাড় ধ্বসে তা আবার ভরাট হয়ে গেছে। অপরিকল্পিত খনন এবং অনিয়মের ফলে এ খননে কোন সুফল আসেনি।
ফরিদপুর জেলা সদরের ডিক্রীরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিন্টু ফকির এবং নর্থচ্যানেল আওয়ামীলীগের সভাপতি মোফাজ্জেল হোসেন, ইনকিলাবকে বলেন, মদনখালীর পদ্মা-কুমার নদীর প্রধান সংযোগস্থল তথা, ফরিদপুর কুমার নদীতে পানি প্রবেশের উৎস মুখটি পদ্মার পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে ৩/৪ বছর আগে।

পদ্মার সাথে আংশিক সংযোগ আড়িয়াল খাঁ, কুমার- ভুবনেশ্বর নদীর দুইদিকে থেকে এসে মিলিত হয়েছে। এ দুই নদীর পানিও অনেক কমে গেছে। নদীর বুকে কোন প্রবাহ নেই। কুমার নদী, চন্দনা, বারাশিয়া, মধুমতি, ভুবনেশ্বরর এই ৫টি নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়ছে এ অঞ্চলের কামার, কুমার, তাঁতী, জেলে ও নৌকার মাঝিরা। সেই সাথে নৌকার ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীসহ ২০ পেশার শ্রমিজীবি মানুষ। এসব পেশার মানুষগুলো, ফরিদপুর সিএন্ডবি ঘাট হয়ে, মদনখালী মোহনা থেকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সামগ্রী নিয়ে অল্প খরচে নিরাপদে ও আরামে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে ভাঙ্গা, সদরপুর, নগরকান্দা, মধুখালী, সালথা উপজেলা সদরের হাট বাজারে ব্যবসা করতো। কয়েক হাজার পরিবার এভাবে জীবন জীবিকা চালাতো। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সিএন্ডবি ঘাটের ৩ শতাধিক নৌ শ্রমিকও বেকার হয়ে পড়েছে। এক সময় কুমারসহ ৫টি নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে মাঠে ফসলের বাম্পার ফলন হতো। প্রতি বছর জোয়ারের পানিতে নিচু এলাকা এবং ফসলের মাঠে ভরে যেত পদ্মার নতুন পানিতে। পদ্মার পানির সাথে নতুন পলি আসায় ফসল ভাল হতো। পানির সাথে নানান প্রজাতির দেশী মাছ এসে ভরে যেত গ্রামগঞ্জের ডোবা নালা বিল ও হাওড়। পানিতে ভেসে যাওয়া হাওড়-বিলে শত শত জেলে নানন প্রজাতির দেশি মাছ ধরে বিক্রি করতো স্থনীয় হাট-বাজারে। বিল হাওরের শামুক এবং ঝিনুক কুঁড়িয়ে বহু মানুষ জীবিকানির্বাহ করতো। নদী শুকিয়ে এসবই এখন বিলুপ্তির পথে।

মরণ বাঁধ ফারাক্কার কারণে পদ্মার বুকেও পানি নেই। প্রমওা পদ্মার বুকে ফরিদপুর অংশে জেগে উঠছে শত শত ডুবোচর। এতে এ অঞ্চলের ৭টি নদী শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফরিদপুর অঞ্চলের নদী, পুকুর বিল হাওড় এখন পানি শূন্য। আমন এবং ইরি মৌসুমে মাঠের পাশে পুকুর ডোবা হাওড় বিলে পানি না থাকায় ফসলের মাঠও পানির অভাবে ফেটে চৈচির হয়ে যায়। এর ফলে ফসল উৎপাদনের খরচও অগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে গেছে।

নদী শুকিয়ে যাওয়া এক শ্রেণীর দখলদার নদীপাড় ভরাট করে দখল করছে। নদীর দুই পাড়ে চলে দখলের মহোৎসব। নদীর জমি দখল করে যে যার মত পাকা ঘরবাড়ি এবং নদীর মধ্যে বাঁশদিয়ে মাচা বানিয়ে টঙ ঘর তৈরী করছে। সদর থানার মিষ্টি পট্টিতে দখলের এই চিত্র সবচেয়ে বেশি।

বছর পাঁচেক আগেও বর্ষায় নদীতে বেশ পানি প্রবাহ দেখা যেত। এখন বর্ষা মৌসুমেও পানির প্রবাহ প্রচন্ড রকমের বাধাগ্রস্ত হয়। পানি প্রবাহ না থাকায় ফরিদপুর হাজীশরীয়তুল্লা বাজার ব্রীজের দুই পাড়েই পাল্লা দিয়ে শহরের ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। নদী এখন ময়লার ভাগারে পরিণত হয়েছে। গৃহস্থালির ময়লা আর্বজনা, গরু ছাগল হাঁস মুরগীর বর্জ্য, কাঁচাবাজারের ময়লা এবং পলিথিন ও প্লাস্টিক জাতীয় আবর্জনা ফেলায় ৫০ বছরের পাকা ঘাটটিও আর্বজনায় ডুবে গেছে। ময়লা আবর্জনার পঁচা দুর্গন্ধে বাজারের পরিবেশ ভয়াবহ দুষণের শিকার হচ্ছে।
অপরিকল্পিত ভাবে নদী খনন, দখল, ভরাট ও দূষণের ব্যাপারে ইনকিলাবের সাথে কথা হয় ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে। তিনি বললেন, সকল বিষয় অবগত হলাম। খুব শীগ্রই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদ-নদী

১১ জানুয়ারি, ২০২২
৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ