পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশে করোনা কি বিদায় নেওয়ার পথে? অন্তত বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং অণুজীব বিজ্ঞানী বিজন শীল তাই মনে করেন। ভারতের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশে তাদের শীর্ষ ভাইরোলজিস্টরা যা মনে করেন তাতে মনে হচ্ছে, সেখান থেকেও করোনা বিদায় নেওয়ার পথে। পাকিস্তানেও করোনা অস্তাচলের পথে। ভারতের জনসংখ্যা ১৩০ কোটি। পাকিস্তানের ২২ কোটি। বাংলাদেশের ১৭ কোটি। মোট ১৬৯ কোটি। এই তিনটি দেশের মোট আয়তন ১৬ লক্ষ ৬০ হাজার বর্গমাইল। পৃথিবীর একটি বিশাল অংশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠি থেকেই করোনা বিদায় নিতে চলেছে। অবশ্য একটি ভিন্নমতও আছে। যারা ভিন্ন মত পোষণ করেন, তাদের সংখ্যা যত না বিজ্ঞাননির্ভর, তার চেয়েও বেশি নির্ভর অর্থনৈতিক সূচকের ওপর। তারা মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক তত্ত¡ ও পরিভাষা ব্যবহার করেছেন। আমি যদি ঐসব থিওরি ব্যবহার করি তাহলে আজকের লেখা নীরস হয়ে যাবে। তাই সহজ সরলভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছি।
নাগরিক প্ল্যাটফর্ম নামক একটি সংগঠনের আলোচনা সভায় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য স্বলিখিত একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। ঐ প্রবন্ধে তিনি বলেন যে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) ২৮টি সূচকের সাথে বাংলাদেশের অনেক মিল রয়েছে। এসব সূচকের মধ্যে মাঝারি ও তীব্র মাত্রায় করোনার প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। সরল ভাষায় এসব সূচকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারি জনগোষ্ঠি, কৃষিবহিভর্‚ত অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থান, লেখাপড়া না জানা বেকার জনগোষ্ঠি, স্যানিটেশন সুবিধা, জ্বালানি সুবিধা ইত্যাদি। এসব গোষ্ঠির ওপর করোনার অভিঘাত মাঝারি থেকে তীব্র বলে মনে করা হয়। তীব্র মনে করা হলেও এ সম্পর্কে সরকারিভাবে তথ্য ও পরিসংখ্যানের যে শুধু অভাব আছে, তাই নয়, এ সম্পর্কে তথ্য ও পরিসংখ্যান নাই বললেও চলে। এ সম্পর্কে সুদীর্ঘ টেকনিক্যাল আলোচনার পর এই মর্মে উপসংহার টানা হয় যে, কোভিড হাল্কা বা তীব্র, যে মাত্রাতেই থাকুক না কেন, বাংলাদেশে ২০২২ ও ২০২৩ সালেও কোভিড-১৯ থাকবে।
বিপরীত মতের আলোচনায় যাওয়ার আগে আমার নিজস্ব একটি জিজ্ঞাসা রয়েছে। সেটি হলো, শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়ে মানুষকে করোনায় বিপর্যস্ত করা হলো কেন? কেন এই দুই বছরে পৃথিবী নামক এই গ্রহটির ৬৮ লক্ষের বেশি মানুষকে প্রাণ হারাতে হলো? এই লেখার সময় ইন্টারনেট থেকে জানা গেল যে, জাতিসংঘের তথ্য মতে, বিশ্বব্যাপী করোনায় মৃতের সংখ্যা ৬৮ লক্ষের বেশি হলেও বাস্তবে মৃত্যু হয়েছে ১ কোটি ১৯ লক্ষ। যাই হোক, পৃথিবীর প্রতিটি দেশকে করোনা একযোগে আক্রান্ত করলো কেন? চিকিৎসাবিজ্ঞান এর কোনো উত্তর দিতে পারে নাই। চিকিৎসাবিজ্ঞান, তথা বিজ্ঞানে তো এর কোনো উত্তর নাই। বিজ্ঞানের বাইরে কি কোনো উত্তর আছে?
দুই
করোনা কেন একযোগে সমগ্র পৃথিবীর ওপর আঘাত হানলো সে সম্পর্কে আমরা এই কলামের শেষে আরও কিছু কথা বলবো। আমরা দেখেছি, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে এসেছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এটি ছিল খুব ডেঞ্জারাস। লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হয়েছে এবং অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। তারপরেই আসে চতুর্থ ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। এই ভ্যারিয়েন্ট ছিল খুব মৃদু। মৃত্যুর হার খুব কম। সরকারিভাবে বলা হয়নি যে, বাংলাদেশে ডেল্টায় কত জনের মৃত্যু হয়েছে, আর ওমিক্রনে কত জনের মৃত্যু হয়েছে। অনেক ওমিক্রন আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতেই পারেনি যে তার ওমিক্রন হয়েছে। প্রসঙ্গত আমার পরিবারের উদাহরণ দিচ্ছি।
আমার ডেল্টা হয়েছিল গত বছরের অক্টোবর মাসে। আমাকে ইউনাইটেড হসপিটালে ভর্তি হতে হয়েছিল। সে কথা ইতোপূর্বে ‘ইনকিলাবের’ এই কলামে লিখেছি। এর আগে অ্যাস্ট্রাজেনেকার দুই ডোজ টিকা নিয়েছিলাম। তারপরেও ডেল্টা হলো। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি ফাইজারের বুস্টার ডোজ নেই। খুবই ভাল ছিলাম। ১৭ জানুয়ারি আমার ছেলেমেয়ে এবং নাতিনাতনিরা বিদেশ ফিরে যাবে বলে টেস্ট করায়। সাথে আমাকেও করতে বলে। দেখা যায়, আমি পজিটিভ। অর্থাৎ দ্বিতীয় বার করোনায় আক্রান্ত। এবার আমার কোনো উপসর্গ ছিল না। ঘরের মধ্যে থেকে দিব্যি পেশাগত কাজ কাম করি এবং ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র মোতাবেক ঔষধ খাই। ১০ দিন পর টেস্ট করি। রেজাল্ট নেগেটিভ। আগের বার নেগেটিভ হতে সময় লেগেছিল ২৭ দিন। এবার ১০ দিন। একই অবস্থা আমার জামাতা, নাতিনাতনী এবং কন্যার। ওদের করো কোনো উপসর্গ ছিল না, এমনকি, কোনো সমস্যাও হয়নি। আমরা বলি, এটা ছিল, করোনার Parting Kick.
এরমধ্যে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি এবং মার্চের প্রথম সপ্তাহে এক ধরণের করোনা এসেছিল এবং এখনও আছে। বিশেষজ্ঞরা এটার নাম দিয়েছেন Stealth Omicron. অর্থাৎ অদৃশ্য ওমক্রিন। সংগোপনে আসে। এবং সংগোপনে চলে যায়। এই অদৃশ্য ওমিক্রন সনাক্ত করেছে আইইডিসিআর। আর তাদের গবেষণার পর অণুজীব বিজ্ঞানী বিজন কুমার শীল বলেছেন যে দেশে হার্ড ইমিউনিটি (Herd immunity) অর্জিত হয়েছে। তাই সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার এত কম। বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার ছিল যথাক্রমে ২৫৭ ও ৫। অথচ জানুয়ারিতেই শনাক্তের সংখ্যা উঠেছিল ১৬ হাজারে।
বিজন শীলের মতে, হার্ড ইমিউনিটি অর্জন সম্ভব হয়েছে দুই প্রকারে। একটি হলো ব্যাপক টিকাদান। আরেকটি হলো বিপুল সংখ্যক মানুষের করোনায় আক্রান্ত হওয়া। অসংখ্য মানুষ এখন আর সর্দি-কাশি বা জ্বর হলে টেস্ট করাতে আগ্রহী হয় না (যদিও কাজটি ভাল নয়)। শারীরিকভাবে দিব্যি ফিট, কিন্তু টেস্টে পজিটিভ- তারাও নিজে নিজেই ঔষধ খেয়ে নিচ্ছে। তারা বাংলাদেশেই তৈরী ‘মনুভির’ অথবা ‘প্যাক্সোভির’ খাচ্ছে। মনুভির সকালে ৪ টা এবং রাতে ৪ টা- মোট ৮টি ক্যাপসুল ৫ দিনে ৪০ টি খাবেন। দাম ২ হাজার টাকা। প্যাক্সোভির ৩+৩ সমান ৬ গুনন ৫ দিন, অর্থাৎ ৩০টি খাবে। প্যাক্সোভিরের দাম আমি জানি না। যাদের বয়স ৪০ অথবা তার বেশি, তারা সাথে খাবে একটি Blood thinner.. সর্বোচ্চ ১ মাস। ১+০+১। এই ব্যবস্থাপত্র আমার নয়। বাংলাদেশে যে ৩ জন চিকিৎসককে করোনার শ্রেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ হিসাবে বিবেচনা করা হয় তাদের একজনের Prescription এটি।
তিন
আসমুদ্র হিমাচলের দেশ ভারত। ১৩০ কোটি মানুষের দেশ। যে দেশে আক্রান্ত হয়েছে ৪ কোটি ২৯ লক্ষ মানুষ, মৃত্যু হয়েছে ৫ লক্ষ ১৫ হাজার, সেই দেশে গত ৯ মার্চ সংক্রমণের সংখ্যা ৩ হাজার ৯৯৩ জন। জনসংখ্যার তুলনায় এটি এতই নগন্য যে এটিকে কোনো শতকরা হিসাবেই ফেলা যায় না। ভারতের অন্যতম শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট টি জ্যাকব জন জানিয়েছেন যে, ভারতে চতুর্থ ঢেউ আসার কোনো সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। তার মতে, যেসব ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে সেসব থেকে মনে হচ্ছে যে, ভারত থেকে কোভিড বিদায় নিচ্ছে। তবে তারপরেও তিনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য ভারতীয় জনগণকে পরামর্শ দিয়েছেন।
বাংলাদেশে, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তথ্য মতে, এ পর্যন্ত সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ৮ কোটি মানুষকে। বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে ৫০ লক্ষ মানুষকে। সরকারি তথ্যে বলা হয়েছে যে, সাড়ে ১৯ লক্ষ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। এই বিপুল সংক্রমণের ফলেই হার্ড ইমিউনিটি তৈরী হয়েছে বলে চিকিৎসকরা মনে করেন।
চার
করোনা যদি প্রস্থানের পথে যাত্রা শুরু করে থাকে তাহলে সেটি কি শুধুমাত্র বেশি করে টিকাদান এবং বেশি সংক্রমণের কারণে হয়েছে? উত্তর খুঁজতে হলে আরও গোড়ায় যেতে হবে। এর উৎপত্তি হলো কিভাবে? আমরা জানি, চীনের উহান প্রদেশে। কিন্তু কোন্ বস্তু বা প্রাণী থেকে এলো এই ভাইরাস? কোনো উত্তর নাই। চীন নিজে ভাইরাসটি তৈরী করে কি ছড়িয়ে দিয়েছে? জাতিসংঘ এবং আমেরিকা চীনে গিয়ে তদন্ত করেছে। কিন্তু কোনো কিছু পায় নাই।
এর আগে, যুগ যুগ আগেও অনেক মহামারী পৃথিবীতে এসেছিল। কিন্তু এবার যেভাবে পৃথিবীর প্রতিটি দেশে ছড়িয়েছে তেমনটি আর অতীতে হয় নাই। এর রহস্য কোথায়? বিজ্ঞান দিয়ে তো কারণ বের করা গেল না। তাহলে কি বের করা যাবে দর্শন দিয়ে? ধর্ম দিয়ে? আমি অত বড় পন্ডিত নই। কিন্তু এলবার্ট আইনস্টাইনকে বিগত ১ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি করে গেছেন সেই কালজয়ী উক্তি: Science without religion is lame, religion without science is blind. অর্থাৎ ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান খোঁড়া, আবার বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ। তিনি আরো বলেছেন, The more I study science, The more I believe in God অর্থাৎ আমি যতই বিজ্ঞান অধ্যায়ন করি, ততই আমি আল্লাহতে বেশি বিশ্বাস করি। দেখুন তো, করোনার উৎস ধর্মে নিহিত আছে কি না।
Email: [email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।