মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান ইতোমধ্যে একটি ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছে। এটি বিশ্বের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে খাধ্য সঙ্কটের পাশাপাশি, আরও কিছু বিপর্যয় ডেকে আনবে। এই বিপর্যয়গুলো তিনভাবে অনুভূত হবে। বর্তমান শস্যের চালানে ব্যাঘাত, ইউক্রেন ও রাশিয়ায় কম খাদ্য শস্যের কম ফলন বা ভবিষ্যত ফসলের অপ্রাপ্যতা এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশে উৎপাদন হ্রাস পাওয়া। এর ফলে খাদ্য ও জ্বালানির এই উচ্চ মূল্য বিশ^ব্যাপি অনান্য পণ্যের ব্যাপক মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি, মূল্যস্ফীতিকেও বাড়িয়ে তুলবে। আর বাড়িয়ে তুলবে অর্থনৈতিক সঙ্কট ও মানবিক বিপর্যয়।
যুদ্ধকালীন সময়ে বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ¦ালানি ও সারের মজুদ কম থাকায় কৃষ্ণ সাগরের গমের বড় আমদানিকারকরা, প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা সরবরারের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। ফেব্রæয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা দ্বারা সঙ্কলিত একটি খাদ্য-মূল্য সূচক সর্বকালের সর্বোচ্চে পৌঁছে, এবং খাদ্য-অনিরাপদ হিসাবে বিবেচিত লোকের সংখ্যা ছিল ৮ কোটি বলে উল্লেখ করা হয়। যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। শিগগিরই সংখ্যা এই আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি হতে পারে। একসাথে রাশিয়া এবং ইউক্রেন বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহের ১২ শতাংশ রফতানি করে থাকে। তারা বার্লি এবং ভুট্টা থেকে শুরু করে স‚র্যমুখী পর্যন্ত অনেক তেলবীজ এবং খাদ্যশস্যের শীর্ষ পাঁচটি রফতানিকারকদের মধ্যে অন্যতম, যা মানুষ ও পশুখাদ্য। ইউক্রেনের বন্দরগুলো বন্ধ। ইউক্রেনের উত্তরে এবং পরবর্তীতে পোল্যান্ডের মধ্যকার বাণিজ্য পথটি ব্যবহারিক ক্ষেত্রে খুব বড় একটি সমস্যা।
ভবিষ্যত ফলন একটি আরও বড় উদ্বেগের কারণ। ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে ফলন এবং জমিতে রোপণ কম হবে। গম এবং বার্লির ফলনও সার এবং কীটনাশকের অভাবের কারণে হ্রাস পাবে। ভুট্টা এবং সূর্যমুখী, যেগুলোর রোপণ সাধারণত খুব তাড়াতাড়ি শুরু হয়, সেগুলোও পরিস্থিতির কারণে বপন করা যাবে না। লিওনিড সেন্টিলো, মধ্য ইউক্রেনে যার খামারে বছরে ৭ হাজার টন গম জন্মায়, বলেন যে, ডিজেল এবং উদ্ভিদ-সুরক্ষা পণ্যের স্থানীয় বাজার দর গত দুই সপ্তাহে ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
রাশিয়া একাই বিশে^ সার তৈরির মূল উপাদানগুলোর সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী, যা ছাড়া ফসল নষ্ট হয় বা পুষ্টি হারায়। কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়া থেকে শস্য সংগ্রহের চেষ্টা করা জাহাজগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে। খাদ্যের বিকল্প উৎসগুলোও অপ্রতুল। রাশিয়ায় ঝুঁকি উৎপাদন হ্রাস নয় বরং অবরুদ্ধ রফতানি। যদিও রাশিয়ার খাদ্য রফতানি এখনও নিষেধাজ্ঞাধীন নয়, তবে পশ্চিমা ব্যাঙ্কগুলি ব্যবসায়ীদের ঋণ দিতে নারাজ। পশ্চিমা সরকারগুলো দ্বারা জরিমানা বা গণমাধ্যম দ্বারা লজ্জিত হওয়ার ভয় ব্যবসায়ীদেরকে দূরে রাখছে। রাবোব্যাঙ্কের মাইকেল ম্যাগডোভিটজ বলেন, ইউক্রেন এখন দুষ্প্রাপ্য এবং রাশিয়া অস্পৃশ্য।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক হবে বিশ্বব্যাপী কৃষিতে যুদ্ধের প্রভাব। বৃহত্তর রাশিয়া প্রাকৃতিক গ্যাস এবং পটাশসহ গুরুত্বপূর্ণ সার উপাদানগুলোর একটি বড় সরবরাহকারী। ২০২১ সালে ক্রমবর্ধমান জ¦ালানি চাহিদা ও পরিবহন খরচ এবং ২০২১ সালে বেলারুশের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে সারের দাম ইতোমধ্যেই প্রকারভেদে দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেড়েছে, যা বিশ্বে পটাশের ১৮ শতাংশ উৎপাদন করে। পরামর্শক সংস্থা ক্রু’র হামফ্রে নাইট সতর্ক করেছেন, ‘যেহেতু রাশিয়া পটাশের বৈশ্বিক উৎপাদনের ২০ শতাংশ সরবরাহ করে থাকে, নিশ্চিতভাবে এর মূল্য আরও বাড়বে। এবং তাই এই মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব বিশ্বের প্রতিটি কৃষি অঞ্চলে অনুভ‚ত হবে।’
গত ৮ ও ৯ মার্চ যথাক্রমে রাশিয়া এবং ইউক্রেন গম রফতানি নিষিদ্ধ করেছে। আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি, ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্কও সম্প্রতি তাদের দিনগুলোতে খাদ্য-রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে। প্রতি বছর পশুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত ১৬ কোটি টন গমের কিছু মানুষের ব্যবহারের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে, তবে তার প্রতিস্থাপন অন্যান্য প্রধান উপাদানগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে।
ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ভারতের বিশাল কৌশলগত মজুদ ১০ থেকে ১৫ টন হতে পারে, যা একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ, কিন্তু সেসব ইউক্রেন এবং রাশিয়ার সম্মিলিত বার্ষিক রপ্তানির এক তৃতীয়াংশেরও কম। কেউ কেউ দ‚র থেকে বাজার স্থিতিশীল করে রাখার চেষ্ট করতে পরে। তবে তাতেও বাধা রয়েছে, যেমন, অস্ট্রেলিয়ার বাম্পার গমের রফতানি প্রচেষ্টা তার খামার এবং বন্দরগুলোর সরবরাহ ব্যবস্থায় মধ্যে আটকে রয়েছে। সারের ঘাটতি পূরণ করা আরও কঠিন কারণ নতুন পটাশ খনি তৈরি হতে ৫-১০ বছর সময় লাগে।
এরফলে, শিগগিরই মানুষের আয়ের অনেক বড় অংশ খাদ্য সংস্থানের জন্য ব্যয় হবে। এই ধাক্কাটি মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং এশিয়ার কিছু অংশে সবচেয়ে তীব্রভাবে অনুভ‚ত হবে, যেখানে প্রায় ৮ কোটি মানুষ কৃষ্ণ সাগরের গমের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। এর মধ্যে রয়েছে তুরস্ক, যা দক্ষিণ ভ‚মধ্যসাগরের বেশিরভাগ অংশে ময়দা সরবরাহ করে। মিশর সাধারণত তার ৭০ শতাংশ গম রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে ক্রয় করে। বাকি ৩০ শতাংশের অর্ধেকই একা লেবান গম আমদানি করে। ইউক্রেনের ভুট্টা, সয়াবিন এবং উদ্ভিজ্জ তেল ছাড়া অন্য অনেকেই খুব কাজ চালাতে পারে।
ভার্দে এগ্রিটেকের ক্রিস্টিয়ানো ভেলোসো বলেন, ‘মাংস এবং কৃষি পণ্যের অন্যতম বিশাল উৎপাদক ব্রাজিল রাশিয়া বা বেলারুশ থেকে তার পটাশের ৪৬ শতাংশ আমদানি করে। সার এবং জ্বালানির উচ্চতর মূল্য সর্বত্র কৃষকদের প্রান্তিক আয়কে সঙ্কুচিত করবে। এবং অবশেষে এই ব্যয়ভার ভোক্তাদের ঘাড়ে চড়াও হবে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।