Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হল ছাড়লেন শিক্ষার্থী

ঢাবির হলে গেস্টরুমে নির্যাতন

রাহাদ উদ্দিন | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে এক শিক্ষার্থীকে মিনি গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্রলীগের চার কর্মীর বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবু তালিব পরে ভয়ে হল ছেড়েছেন। এ ছাড়া ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ না নেয়ার অভিযোগ তুলে একই রাতে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থীকে হল থেকে ছাত্রলীগ বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা যায়, দীর্ঘ পাঁচ বছরের অচলায়তন ভেঙে গত ২ ফেব্রæয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলো ফিরে পায় ছাত্রলীগের হল কমিটি। তবে বহুল কাঙ্খিত এই কমিটি পাওয়ার পরই যেন তা কাল হয়ে উঠছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য। নতুন নেতৃত্ব পেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আতঙ্ক হয়ে উঠছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় কমিটি পাওয়ার পর গত ৩৮ দিনে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ না নেয়া, তথাকথিত গেস্টরুমে না বসা ও বড় ভাইদের সালাম দেয়া নিয়ে ৩ দিনের জন্য হল থেকে বের করে দেয়া, মারধর করা, মানসিকভাবে নির্যাতন করাসহ বেশ কয়েকটি নির্যাতনের ঘটনা ঘটে ঢাবির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে।

এসব ঘটনার জেরে কেউ হল ছাড়ছেন আবার কেউ মুখ বুঁজে সহ্য করে হলে থাকছেন। শিক্ষার্থীদের মানবেতর এ জীবন যাপনের ধারাবাহিকতায় গতকাল ফের ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবু তালিব। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সমাজকল্যাণ বিভাগের শেখ শান্ত আলম, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ইমদাদুল হক বাঁধন, তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শাহাবুদ্দিন ইসলাম বিজয় ও আইন বিভাগের নাহিদুল ইসলাম ফাগুন। তারা সবাই হল ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্তর ছোটভাই হিসেবে পরিচিত। মেহেদী হাসান শান্ত বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসের রাজনীতি করেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে আবু তালিবকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা। ঘটনার বর্ণনায় নির্যাতনকারীদের শিক্ষাবর্ষের একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, বঙ্গবন্ধু হলের ২০১ (ক) নং রুমে অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু তালিবকে (ভুক্তভোগী) শান্ত, বাঁধন, বিজয় ও ফাগুন হাতে না ধরে সিগারেট আগুন ধরিয়ে মুখে দিতে বলে। এবং সিগারেট শেষ হওয়া পর্যন্ত ধোঁয়া না ছেড়ে সিগারেট টানতে বলে। ভুক্তভোগী অপারগতা প্রকাশ করলে একাধিকবার স্ট্যাম্প দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, তৃতীয় বর্ষের শান্ত (নির্যাতনকারী) ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে সিগারেট খেতে দেখেন। এসময় তারা তালিবের বাবা-মা তুলেও গালিগালাজ করেন এবং তাকে হল থেকে চলে যাওয়ার কথা বলেন।

তৃতীয় বর্ষের একাধিক শিক্ষার্থী গেস্টরুমে উপস্থিত থেকে প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আরও বলেন, আবু তালিবকে এই চারজন সবচেয়ে বেশি প্যারা দেয়। এছাড়াও প্রোগ্রামে উপস্থিত না থাকার অভিযোগে ১০-১২ জন শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেয়া হয় এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে গতকাল তা খোলা হয়। ফলশ্রুতিতে ওই কক্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা থাকা সত্তে¡ও তারা এই কয়েকদিন বিভিন্ন হলে ঘুরে ঘুরে রাত কাটিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, অভিযুক্ত নির্যাতনকারীরা সবসময় গেস্টরুমে নির্যাতন করে, হ্যারাজ করে। তাদের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে দ্বিতীয় বর্ষের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে হল ছেড়ে দিয়েছেন। এই নির্যাতনগুলো করা হচ্ছে ময়মনসিংহ অঞ্চল ছাড়া বাকি অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের।
গত বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মহিদুল ইসলাম মুকুলকে ৪০১ নম্বর রুমে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে। ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা ও সিনিয়রের রুমে সিটে পা তুলে বসাকে কেন্দ্র করে স্টাম্প ও রড দিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয় তাকে। এমনকি হাতে ছুরি নিয়ে হত্যার হুমকিও দেয়া হয় তাকে। আর এসবের সমঝোতার জন্য গতকাল রাতে আবার ডাকা হয় হলের ৩০৪ নম্বর রুমে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত উর্দু বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রনি। হলে মেহেদি হাসান শান্তর রাজনীতি করে। এছাড়াও সে হল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্তরা অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাদের দাবি বঙ্গবন্ধু হলে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটে না।
এদিকে ওই হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান শান্ত ও ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাসকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল ও ম্যাসেজ করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. আকরাম হোসেন বলেন, আমাদের গেস্টরুমে একটা সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। এখানে কোনো ধরনের নির্যাতনের ঘটনা দেখিনি। চেষ্টা করতেছি কোনো প্রমাণ পাই কিনা। যাদের ব্যাপারে অভিযোগ এসেছে বিষয়গুলো আরও ভালো করে দেখব। গেস্টরুমের ফুটেজ সবসময়ই পরিদর্শন করি। আমরা দেখি দু’চারজন শিক্ষার্থী প্রায় ওখানে বসে গল্প করে। এছাড়া আর কিছুই হয় না।

হাউস টিউটর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মোহাম্মদ রাকিব উদ্দিন ভ‚ঁইয়া বলেন, হলে কি হচ্ছে না হচ্ছে ২৪ ঘণ্টাই কি আমরা এগুলো দেখব নাকি? আমাদের তো ক্লাস রয়েছে, পরিবার রয়েছে।



 

Show all comments
  • MD Akkas ১২ মার্চ, ২০২২, ১২:২৩ এএম says : 0
    জয় বাংলা।
    Total Reply(0) Reply
  • Zobair Ur Rahman Khondoker ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৪ এএম says : 0
    ছাত্রলীগ মানেই কি অসভ্যতা ?? দেখার কি কেউ নেই
    Total Reply(0) Reply
  • সুলগ্ন রায় শুভ ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৪ এএম says : 0
    আমি বুঝতে পারি না,, ভার্সিটি তে কিভাবে narrow mind এর পোলাপাইন গুলা chance পায়
    Total Reply(0) Reply
  • Rajib Hossain ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৪ এএম says : 0
    ঠিক ৭৫এর পূর্ব প্রেক্ষাপটের নমুনা মনে হইতেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Golam Arif ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৫ এএম says : 0
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উচিত হাতে চুড়ি পড়ে হিজড়াদের দলে ভর্তি হওয়া। ছাত্ররা এত আতঙ্কে আছে, কিছুই করেনা প্রশাসন
    Total Reply(0) Reply
  • Mehedi Hasan ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৫ এএম says : 0
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম একটি বিদ্যালয়।। বিদ্যালয় বলতেও ঘৃনা হয়। এখানে ছাত্রদের নির্যাতন, রেগিন, রাজনীতি। ঘৃণা করি এমন প্রতিষ্ঠানকে।। এজন্যই পাকিস্তানের মতো দেশের বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের মেধা তালিকায় স্থান পায় অথচ এই দেশের বিশ্ববিদ্যালয় অধঃপতন।
    Total Reply(0) Reply
  • Seli Seli ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৫ এএম says : 0
    সমাজের প্রতিটি স্তরে নৈতিক অবক্ষয়, পারিবারিক ও সুশিক্ষার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক আবরারকে মেরেছে এমন অনেক বাবা মায়ের সন্তান নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Md Nasiruddin Soboj ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৬ এএম says : 0
    বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর নাম আতঙ্ক।
    Total Reply(0) Reply
  • Jamil Ahmed ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৬ এএম says : 0
    নামগুলি ভালো করে লিখে রাখেন ভাই, এরা যেনো দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে। এই নামগুলি পরে কাজে আসবে। ।
    Total Reply(0) Reply
  • Asif Chowdhury ১২ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৬ এএম says : 0
    গ্রাম থেকে উঠে এসে ফ্রি থেকে নিজেকে রাজা ভেবে ফেলে কিছু কতিপয় শিক্ষার্থী নামক জানোয়ার।পারিবারিক শিক্ষার অভাব এদের।
    Total Reply(0) Reply
  • Yousman Ali ১২ মার্চ, ২০২২, ১০:৫১ এএম says : 0
    ছাত্রলিগের প্যাকেট খারাপ এদেরকে চিনে রাখ
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ১২ মার্চ, ২০২২, ১১:৫৪ এএম says : 0
    যতদিন পর্যন্ত এই আল্লাহ বিদ্রোহী দেশদ্রোহী সরকার আমাদের দেশ চালাবে ততদিন পর্যন্ত আওয়ামিলীগের গুন্ডারা সারা বাংলাদেশের মানুষের পরম অত্যাচার করবে এবং অতীতেও তারা করেছে শিক্ষাঙ্গনে যারা কোন ধরনের খারাপ কাজ করতে চায় না তাদেরকে জোর করে আওয়ামী লীগে নিয়ে খারাপ কাজ করায় আর যদি নারাজ করে তাহলে তাদেরকে চরম অত্যাচার করে এবং ভয় দেখায় যে আবরারের মতো তাদের পরিণতি হবে আল্লাহ এই দেশ থেকে এই নরপিচাশদের কে শেষ করে দাও এবং আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠিত করে দাও তাহলে আমরা স্বাধীনভাবে এদেশে বেঁচে থাকতে পারবো
    Total Reply(0) Reply
  • মিজান বিন রাজ্জাক ১২ মার্চ, ২০২২, ৩:১৪ পিএম says : 0
    আমাদের সন্তানদের কি নৈতিক শিক্ষা দিতে পেরেছি। আর বড় কথা হল যে রাজনীতির কথা বলা হচ্ছে এখানে নৈতিকতার জায়গা কোথায়। এখানে তো পাশবিকতার চর্চা হয়। লাগাবেন তেঁতুুল গাছ আর ফল চাইবেন ফজলি আম। তা কখনও হবার নয়। রাজনীতির ধারা পাল্টাতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢাবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ