Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাশিয়ার তেল-গ্যাসের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২২, ৮:২৯ এএম

ইউক্রেনে হামলার কারণে রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ওপর এবার নিষেধাজ্ঞা দিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি থেকে জ্বালানি পণ্য দুটি আমদানির ওপর গতকাল এ নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে বাইডেন প্রশাসন। এর মাধ্যমে রাশিয়ার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি জ্বালানি খাতের ওপর খড়গ চালাল ওয়াশিংটন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আয়ের প্রধান উৎসে আঘাত হানল দেশটি।

নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, রাশিয়ার অর্থনীতির মূল শিরায় (আয়ের প্রধান উৎস) আঘাত আনার ঘোষণা দিচ্ছি আমি। আমরা রাশিয়া থেকে সব ধরনের জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি নিষিদ্ধ করছি। এর অর্থ হলো রাশিয়ার কোনো জ্বালানি তেলবাহী জাহাজ আর যুক্তরাষ্ট্রের বন্দরে ভিড়তে পারবে না।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রের এমন নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার ওপর আপাতত তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকরা। পণ্যবাজারবিষয়ক রিসার্চ ফার্ম ডিটিএনের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ট্রয় ভিনসেন্ট বলেন, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর একেবারেই কম নির্ভরশীল। দেশটি থেকে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জ্বালানি তেল আমদানি করে না তারা। সর্বশেষ গত বছর রাশিয়া থেকে ৮ শতাংশের মতো জ্বালানি তেল এনেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি জানুয়ারি পর্যন্ত রাশিয়া থেকে কোনো জ্বালানি তেলবাহী জাহাজই আসেনি যুক্তরাষ্ট্রে।
ট্রয় ভিনসেন্টসহ অন্য বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র মূলত ইউরোপের মিত্র দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে চেয়েছিল। কারণ সেটিই ফলপ্রসূ হতো। কারণ ইউরোপের দেশগুলো রাশিয়ার জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ওপর সবচেয়ে নির্ভরশীল। কিন্তু আপাতত সেটি সফল না হওয়ায় একাই নিষেধাজ্ঞা দিল বাইডেন প্রশাসন।

এর আগে গত রোববার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানান, রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে। এজন্য ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এছাড়া এককভাবে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার জন্য কংগ্রেসনাল কমিটির সম্মতির জন্য হোয়াইট হাউজ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন হুমকি আসার পর পরই এ নিয়ে মুখ খোলেন রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী আলেকজেন্ডার নোভাক। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইউরোপের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দেন তিনি। তার ভাষায়, রাশিয়ার জ্বালানি তেল আমদানির ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধের শামিল। এটি জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারে বিপর্যয় ডেকে আনবে। প্রয়োজনে তার দেশ জার্মানির সঙ্গে যুক্ত নর্ড স্ট্রিম-১ গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ করে দেবে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে রুশ উপপ্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা এলে সেটি জ্বালানি তেলের বাজারকে আরো অস্থির করে তুলবে। এ নিষেধাজ্ঞায় জ্বালানি পণ্যটির দাম ব্যারেলপ্রতি ৩০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এ সময় তিনি ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের জন্য রাশিয়ার নেয়া নর্ড স্ট্রিম-২ প্রকল্প নিয়ে কথা বলেন। গত মাসে এ প্রকল্পের অনুমোদন বাতিল করে জার্মানি। নর্ড স্ট্রিম প্রকল্পের চুক্তির বিষয়টি উল্লেখ করে আলেকজেন্ডার নোভাক বলেন, আমাদের যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে। নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইন দিয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারেন তারা। কিন্তু আপাতত এ সিদ্ধান্ত তারা নিচ্ছেন না। তবে পশ্চিমাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে যেকোনো সময় তারা সে পথে হাঁটতে পারেন।

এর আগে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আলোচনায় জ্বালানি পণ্যটির দাম রেকর্ড সর্বোচ্চে পৌঁছে। গত সোমবার জ্বালানি তেলের বাজার আদর্শ ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১৩৯ ডলার ছাড়িয়ে যায়। আর মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম ব্যারেলপ্রতি ১৩০ ডলার অতিক্রম করে। দুটো বেঞ্চমার্কেই জ্বালানি পণ্যটির দাম ২০০৮ সালের জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ রেকর্ডে পৌঁছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের ১৩ তম দিন চলছে। এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশের পর ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়ান সেনারা। এ অভিযানের অংশ হিসেবে স্থল, আকাশ ও জলপথে ইউক্রেনে হামলা চালানো হচ্ছে। অভিযান শুরুর পর ইউক্রেনের সেনাবাহিনীও প্রতিরোধের চেষ্টা চালাচ্ছে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত চলছে। সূত্র : বিবিসি, সিএনএন



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ