Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাকিবদের সময় কি তবে শেষ!

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০২২, ১২:০৪ এএম

সঙ্কটটার শুরু এবারের আইপিএল নিলামকে কেন্দ্র করেই। বিশ্বের সবচাইতে জমজমাট এই ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটে বরাবরই সবার পছন্দের নাম সাকিব আল হাসান। শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতসহ এই সত্য সার্বজনীন। তবে বিপিএলে দারুণ ফর্মে থাকার পরও এক অদৃশ্য কারণে দল বাড়লেও সাকিবের প্রতি আগ্রহী হয়নি ১০ ফ্রাঞ্চাইজির কেউই! অগত্যা, বিশ্বের সেরা এই অলরাউন্ডারকে ছাড়াই আগামী ২৬ মার্চ থেকে মাঠে গড়াতে যাচ্ছে পঞ্চদশ আইপিএল। মুস্তাফিজ যদিও দিল্লির হয়ে অংশ নিচ্ছেন, তবুও এবারের আসর নিয়ে বাংলাদেশের আগ্রহ অনেকটাই কমে যাবে এটা বলা বাহুল্য।
তবে আমাদের প্রসঙ্গ আইপিএল নয়, আইপিএলে দল না পাওয়া সাকিব। এর পর থেকেই তার মন খারাপ। দেশের ক্রিকেটের সবচাইতে বড় বিজ্ঞাপন নিজেই নাকি ক্রিকেটে আগ্রহ পাচ্ছেন না, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তাকে দুই সংস্করণের দলে রাখা হলেও তিনি নিজে সেখানে যেতে ইচ্ছুক নন। সাকিব জানান, ক্রিকেটটা আপাতত তিনি উপভোগ করছেন না। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতও নন। তার প্রভাব কিছুটা দেখা গেছে সদ্য শেষ হওয়া আফগানিস্তান সিরিজে। যে সাকিব একা হাতে বরিশালকে ফাইনালে তুললেন, সেই তিনিই কি-না দুই সিরিজেই ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে! অথচ নিজের ছুটি চেয়ে করা আবেদনের যুক্তিতে বলেছেন, টানা ক্রিকেটের ধকল কাটাতে আসন্ন দুটি বিশ্বকাপকে (২০২২ অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি ও ২০২৩ ভারতে ওয়ানডে) সামনে রেখে সাদা বলে গুরুত্ব দিতেই তার এই ‘রেস্ট’ দরকার।
ক্রিকেটাররা রেস্ট নিতেই পারেন। এর আগেও নানা কারণে বাংলাদেশের হয়ে খেলায় ছুটি নিয়েছেন সাকিব। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ড সফরেও শুরুতে তার নাম ছিল। পরে সাকিব নিজেকে সরিয়ে নেন। তখন জানিয়েছিলেন পরিবারকে সময় দিতে তার আমেরিকা যাওয়া দরকার। অবশ্য বাংলাদেশ দল নিউজিল্যান্ড যাওয়ার পরও বেশ কয়েকদিন পরিবার ছাড়া দেশে বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন এই শীর্ষ ক্রিকেটার। ব্যপারটা শেষ হতে পারতো ওখানেই। তবে গত রোববার রাতে আরেকটি বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংয়ে অংশ নিতে দুবাই যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের কাছে বিস্ফোরক কিছু মন্তব্যই নতুন করে উষ্কে দিয়েছে ‘সাকিবের ছুটি কাহিনী’। তারপর থেকেই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে সেই আগুন। যাতে পুড়তে বসেছে অনেক ক্রিকেটারের ‘যখন তখন ছুটি’ নেয়ার স্বপ্ন।
আফগানিস্তান সিরিজ চলাকালে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানান, সাকিব দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজে খেলবেন। এরপর তাকে রেখেই আসন্ন সফরের ওয়ানডে ও টেস্ট দল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু রোববার সাকিবের নতুন বক্তব্যের পর তার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাওয়া নিয়ে ফের সংশয় তৈরি হয়েছে। মনে হচ্ছে সাকিব তার নিজস্ব পরিকল্পনা নিয়ে ক্যারিয়ারের সমাপ্তির দিকে এগুচ্ছেন। কিন্তু এই তারকা অলরাউন্ডারকে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে বারবার তৈরি হওয়া দোলাচলে কি করা উচিত, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে পরিস্থিতির দাবিতে সবচাইতে বড় প্রশ্নটি ছুড়ে দিয়েছেন পাপন। গুলশানে নিজ বাসায় গণমাধ্যমের কাছে বিসিবি বস বলেছেন, সাকিব কেন আইপিএল খেলতে চাচ্ছিলেন তা বুঝতে পারছেন না তিনি, ‘এটা কীভাবে জানব? কে জানে? মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকলে আইপিএল খেলতে চাচ্ছিল কেন? আমি বুঝলাম না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকলে তো বলত, “আমি আইপিএলও খেলব না”। ধরুন, ওকে আইপিএলে নেওয়া হলো। তখন কি ও বলত যে ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত? আমার মাথায়ই ঢুকছে না।’
মন চাইলে খেলব, আবার মন চাইলে খেলব না। সাকিবের এমন মানসিকতার কড়া সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও। তিনি জানান, কারো বিরতি নিতে ইচ্ছে হলে পুরোদমে বিরতি নিতে পারে। কিন্তু জাতীয় দলের পরিকল্পনায় বারবার উলটপালট করার সংস্কৃতি এবার বন্ধ করতে হবে। তার মতে সিনিয়র সবাইকে ছাড়াই এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবার সময় এসে গেছে, ‘আমার মনে হয় এখন হাই টাইম, বোর্ডের একটা ফুলস্টপ করা উচিত। যথেষ্ট হয়েছে। বারবার এমন হতে পারে না যে, আমি চাইলাম খেললাম, চাইলাম খেললাম না। এখন শুধু সাকিবের কথা বলছি না, সবাইকে ছাড়াই ভাবার সুযোগ এসেছে।’
সাকিব কি শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন? নাকি ওয়ানডে সিরিজটা ছুটি কাটিয়ে টেস্ট খেলবেন? নাকি পুরো সিরিজেই থাকবেন অনুপস্থিত? এখনো পর্যন্ত কোন কিছুই স্পষ্ট নয়, আপাত দৃষ্টিতে বিসিবি তাকিয়ে আছে সাকিব আবার কি বলেন। তবে বিসিবি বস জানিয়েছেন, তারা কোন তারকা খেলোয়াড়ের কাছে এখন আর জিম্মি নন। বরং বোর্ড প্রেসিডেন্টের মতো অভিজ্ঞদের ছাড়াই সামনে এগিয়ে যাওয়ার বাস্তবতাও দেখছেন তিনি, ‘এখানে সাকিব না খেললেও কোন সমস্যা না, আই ডোন্ট কেয়ার। আমি মনে করি বিসিবিও কনসার্ন না, আমরা চাই যে সাকিব খেলুক। কিন্তু ওর যদি মনে না চায় যে কোন এক ফরম্যাট খেলবো না বা দুই ফরম্যাটে খেলব না তো সে বলুক। একটা সময় আমিও ভয় পেতাম যে এই ছেলেগুলো না থাকলেও বাংলাদেশ দল কোথায় যাবে। কিন্তু এখন আমি আর ভয় পাই না।’
সাকিব নিজের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা বিসিবির সঙ্গে আলাপ না করেই ঠিক করাতেই সংকটের তৈরি বলে ধারণা খালেদ মাহমুদের। তিনি কড়া ভাষায় হুশিয়ারি করে বলেন, কোন ক্রিকেটারেরই বিসিবিকে খবরদারি করার অধিকার নাই,’ ইউ কান্ট ডিক্টেট বিসিবি। ইফ ইউ ডোন্ট প্লে, ডোন্ট প্লে। তোমার বিরতি নিতে মন চায় পুরো দমে নাও, কেউ তো তোমাকে আটকাচ্ছে না। আমাদের প্রেসিডেন্টও এটাই বলতে চান। উনি আস্তে বলেছেন, আমি জোরে বললাম। শেষ কল অবশ্যই বিসিবির। ওরা বিসিবির প্রোডাক্ট। বিসিবি ওদের প্রোডাক্ট না। বিসিবির জন্যই ওরা। ওরা মেইন স্টেকহোল্ডার হতে পারে কিন্তু ওদের পেছনে অনেক ইনভেস্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওপর তো কেউ না।’

 



 

Show all comments
  • ম নাছিরউদ্দীন শাহ ৯ মার্চ, ২০২২, ১:১২ এএম says : 0
    বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে যদি প্রশ্ন করেন সাকিবের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অবিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান এবং দেশের ক্রিকেট গুরুত্বপূর্ণ এই খেলোয়ারের মর্যাদা সম্মানজনক স্থানে মূল‍্যায়ন করেছেন বিসিবি। টি টুয়েন্টি ওয়ানডে টেষ্ট্রেও বাংলাদেশের ক্রিকেট কে নেতৃত্ব দেওয়ার অধিনায়কের মত সম্মানজনক স্থান দায়িত্ব দেওয়া হলো না। কিসের যুক্তিতে?? আইপিএল বিশ্বের ক্রিকেট বিনোদনের নাম। পৃথিবীর ক্রিকেট রনাঙ্গনের নাম। মেধা যোগ্যতাই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বিশ্বের মাঝে পরিচিতির নাম সাকিব আল হাছান। সমালোচনা করা সহজ। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস আর একটি সাকিব সৃষ্টি তৈরী হবে কিনা সন্দেহ? আইপিএল এই সাকিব অবশ্যই দল পেতেন বিসিবির কারণে পাননি। কারণ সবার জানা। বাংলাদেশ ক্রিকেট রাজপুত্র বিশ্ব ক্রিকেটের এই অমুল‍্যবান সম্পদ সাকিব আল হাছানের বিরুদ্ধে কথা বলতে অবশ্যই অবশ্যই যার যার অবস্থান যোগ্য বিবেচনা করবেন। এই সাকিব ভারতীয় হলো। আইপিএল সব্বোউচ্ছ দামি এক জন ক্রিকেটার হতো। অষ্ট্রেলিয়ার হলেও তাই হতো। আমাদের কাছে সাকিব আল হাছানের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরিসংখ্যান যোগ্যতা মেধা দক্ষতা কিছুর দান নেই। যদি সাকিব কে এই কটি সিরিজের অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হতে বাংলাদেশের ক্রিকেট লাভ হতো। সাকিব নেতৃত্বের কারণে সম্মানজনক অবস্থানের কারণে অবশ্যই ক্রিকেট বাংলাদেশের সাথেই থাকতেন। এটি আমার ব‍্যাক্তিগত মতামত। সাকিব দল পাননি সেটি জন্যে বাংলাদেশের ক্রিকেট কর্মসূচি দায়ী। বাংলাদেশের পক্ষে টেষ্টে না খেলার জন্যেই পাপন চাচারা দয়াকরে ভদ্রতা বজায় রাখুন। ক্রিকেট বিশ্বের মহারাজাদের একজন সাকিব একদিনে হয়নি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের স্বার্থেই সাকিবের সাথে ভদ্রলোকের মত আচরণ করুন। লক্ষ কোটি সাকিব ভক্ত অনুরাগীর বিনীত অনুরোধ। কাজেই সাধু সাবধান।
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Zillur Rahman ৯ মার্চ, ২০২২, ১:৩১ এএম says : 0
    অতিরিক্ত অহংকারী এবং অর্থলোভী একজন খেলোয়াড়। তার মনে রাখা উচিত ছিল, বাংলাদেশ দলে খেলেই সে এ অবস্থানে এসেছে। দেশের সকল মানুষ তাকে ভালোবেসেছে এবং সমর্থন করেছে। জনগনের ভালোবাসা ধরে রাখতে সে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohoshin Habib Chowdhury ৯ মার্চ, ২০২২, ১:৩২ এএম says : 0
    বিসিবি এখনও ব্যাবহার শিখেনি। একজন দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তার কথা, আচরণ, শব্দের ব্যবহারে আরও সহনীয় হওয়া উচিত। আর সাকিবকেও শিখতে হবে অনেক। সব কিছুরই সুন্দর সমাপ্তি দেয়া যায়। মুই কি "হনুরে" মানুষকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmed Shoab ৯ মার্চ, ২০২২, ১:৩২ এএম says : 0
    একটা নতুন প্লেয়ারকে কমপক্ষে ১ বছর সময় দিন In & out খেলা বন্ধ করুন নতুবা পঞ্চপান্ডব এর বিকল্প কখনও বের হবেনা। আর যে কোন বিদেশি ট‍্যুরের আগে ঐ দেশের উইকেট কি রকম হতে পারে সেটা অনুযায়ী গেমপ্লান করে ভালো প্রস্তুতির ব‍্যাবস্থা করা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mira Islam ৯ মার্চ, ২০২২, ১:৩২ এএম says : 0
    স্বার্থপর এবং বেয়াদব একটা খেলোয়ার।দূর্বল দেশের সাথে খেললে সব ঠিক কঠিন দেশ হলেই তালবাহানা। সাধারণ মানুষের ভালোবাসার মূল্য দিতে জানে না।
    Total Reply(0) Reply
  • salman ৯ মার্চ, ২০২২, ৭:১৭ এএম says : 0
    ai sartho por Choto lok, Taka lovi tar Month li Beton bondho kore dewa uchit. J na khelbe, tar beton o kata jabe, ta hole ai choto lok ta khelbe.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাকিব

২৯ অক্টোবর, ২০২২
১৩ অক্টোবর, ২০২২
৯ অক্টোবর, ২০২২
৮ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ