Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘আমরা কোরবানির ছাগল হয়ে গেছি’

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ মার্চ, ২০২২, ১২:১৬ এএম

গত বছরের মধ্য আগস্টে ভারতের উত্তর প্রদেশের মথুরায় তিন মুসলিম ভাইয়ের খাবারের দোকানে হামলা চালিয়েছিল একটি হিন্দুত্ববাদী দলের সদস্যরা। হামলাকারীদের দাবি, হিন্দুদের ভগবানের নামে মুসলিম তিন ভাই মুনাফা কামাচ্ছে। শ্রীনাথ দোসা কর্নার নামের ওই খাবারের দোকানের অন্যতম মালিক আবিদ বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ওরা (হামলকারীরা) বলেছিল তোমরা যে হিন্দু নও সেটা না জেনে হিন্দুরা এখানে খাচ্ছিল।’ হিন্দুদের তীর্থস্থান মুথরার মন্দির থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারে শ্রীনাথ দোসা কর্নারটি অবস্থিত। এই এলাকার প্রত্যেকটি খাবারের দোকানই হিন্দু দেব-দেবির নামে। একমাত্র ব্যতিক্রম আবিদদের দোকানটি। এখন এর নাম আমেরিকান দোসা কর্নার। হামলার ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর আবিদ মামলা করেছিলেন। এরপর এক হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তবে ছয় মাস পর মামলা প্রত্যাহার করে নেন তিনি। কারণ ‘তিনি আর কোনো ঝামেলায় জড়াতে চান না।’ বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টির নেতা জমিরুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা হিন্দুদের সঙ্গে কাজ করি, তাদের সঙ্গে ব্যবসা করি, আমরা একে অপরের বিয়ের অনুষ্ঠানে পারিবারিকভাবে যোগ দেই। কিন্তু বিদ্বেষের রাজনীতির উত্থান ঘটেছে এবং নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এটি আরও বেড়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কুরবানির ছাগল হয়ে গেছি- আমাদের খাইয়ে মোটাতাজা করা হয় এবং এরপর দলের জন্য জবাই করা হয়। মানুষকে উত্তেজিত করতে মুসলিম বিরোধী আবেগ জাগানো হয় এবং নির্বাচনে তারা জয় পায়। নির্বাচন শেষ হলে যার যার ঘরে সবাই ফিরে যায়।’ ২০১৪ সাল থেকে উত্তর প্রদেশে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানো হচ্ছে। এর এ কাজটি করছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এই রাজ্যটিতে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পদে মনোনয়ন দিয়েছিল মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত যোগি আদিত্যনাথ। যোগি আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই একটি গ্রামে পোস্টার লাগানো হয়, যাতে মুসলমানদের চলে যাওয়ার কথা বলা হয়। এটি ছিল ভারতের প্রথম রাজ্য, যেখানে ধর্মান্তরকরণের বিরুদ্ধে একটি আইন পাস করে। কোনো হিন্দু নারী মুসলমান পুরুষকে বিয়ে করলে তাকে হয়রানি ও জেলে পাঠাতে ব্যবহার করা হয় এই আইনটি। বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী মুসলিমদের মারধর করা হয় এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়, যতক্ষণ না সুপ্রিম কোর্ট এটিকে অবৈধ ঘোষণা করে। মহামারি চলাকালে বিজেপি নেতারা মুসলিম পুরুষদেরকে ‘করোনা জিহাদ’ বা ভাইরাস ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিলেন। নিত্যদিনের এসব বৈষম্য ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছিল, যা মুসলমানদেরকে প্রান্তিক করে তুলছে। রাজ্যটিতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা চার কোটি, যা মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদী শাসনের অধীনে তারা ‘দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক’ হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন এসব মুসলিম। আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্বের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুফতি জাহিদ আলি খান বলেছেন, যোগি আদিত্যনাথ ‘বিজেপি রাজনীতিকের মতো আচরণ করেন, একজন সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে নয়। তিনি ক্ষমতায় আসার পর মুসলমানরা আতঙ্কে জীবনযাপন করছে। আমাদের সন্তানরা যখন বাড়ি থেকে বের হয়, নারীরা তখন তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করতে থাকে। রাজ্যে বিজেপির এক আইনপ্রণেতা বলেছেন, তিনি পুনর্নির্বাচিত হলে মুসলমানদের মাথায় টুপি পরা বন্ধ করে দেবেন এবং হিন্দুদের ব্যবহৃত সিঁদুর তাদের মাথায় দেবেন। গত মাসে এক হিন্দু ধর্মীয় নেতা মসজিদ ও ইমামদের ওপর হামলারও আহ্বান জানিয়েছেন। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ