Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনা শুরু

সমাধানের রূপরেখা নিয়ে দেশের পথে আলোচকরা : রাজনৈতিক মীমাংসা বাস্তবায়নের আহ্বান চীনের : ৩৬ দেশের জন্য রাশিয়ার আকাশসীমা বন্ধ : ব্রাজিল-রাশিয়া ভাই ভাই - বলসোনারো

মুহাম্মদ সানাউল্লাহ/ইশতিয়াক মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২ মার্চ, ২০২২, ১২:১২ এএম

কোনো কূটনৈতিক অগ্রগতির কম প্রত্যাশার মধ্যে গতকাল রুশ ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে সবচেয়ে বড় স্থলযুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে আলোচনার সূচনা করেছেন। আলোচনা শেষে সমাধানের রূপরেখা নিয়ে নিজ নিজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দেশের পথে রয়েছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম দু’দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে বেলারুশের সীমান্ত শহরে প্রথম মুখোমুখি আলোচনা অুনষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিনিধি দলগুলো একটি দীর্ঘ টেবিলে একপাশে নীল-হলুদ ইউক্রেনের পতাকা এবং অন্যদিকে রাশিয়ান তেরঙ্গা নিয়ে বৈঠকে বসেন। আলোচনায় ইউক্রেন তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছিল, রাশিয়ান প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক পুতিনের উপদেষ্টা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের অফিস প্রধানের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক বলেছেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেন তাদের আলোচনার সময় সমাধানের কিছু রূপরেখা দিয়েছে।

পোডোলিয়াক গতকালের আলোচনার পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ, ইউক্রেনীয় এবং রাশিয়ান প্রতিনিধিদল প্রথম দফা আলোচনা করেছে, যার মূল লক্ষ্য ছিল একটি যুদ্ধবিরতি এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ড জুড়ে যুদ্ধ বন্ধ করার বিষয়ে আলোচনা করা। পক্ষগুলো বেশ কয়েকটি অগ্রাধিকারমূলক সমস্যা নির্ধারণ করেছে যার নির্দিষ্ট সমাধান ছিল রূপরেখা’।
তিনি বলেন, ‘এসব সিদ্ধান্ত যে কোনো উপায়ে বাস্তবায়িত হতে পারে এবং কিছু যৌক্তিক সমাধান হতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য, দলগুলো পরামর্শের জন্য তাদের রাজধানীতে ফিরেছে। দলগুলো অদূর ভবিষ্যতে দ্বিতীয় দফা আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে, যাতে এসব বিষয়ের জন্য একটি বাস্তব ফলোআপ দেওয়া হবে।
গতকাল বৈঠক শুরুর আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রুশ সৈন্যদের অস্ত্র সংবরণের আহ্বান জানিয়েছেন। একইসাথে তিনি ইউক্রেনকে দ্রুত সদস্যপদ দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি অনুরোধ করেছেন। এদিকে, রাশিয়ার স্থল বাহিনীর অসংখ্য সামরিক যান ও ট্যাঙ্কবহর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি কোম্পানির স্যাটেলাইটে তোলা ছবি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
রাশিয়া ঘোষণা করেছে যে তারা নিষেধাজ্ঞার প্রতিশোধ হিসাবে কানাডা এবং ইউরোপের বেশিরভাগ দেশসহ ৩৬টি দেশো জন্য তার আকাশসীমা বন্ধ করে দিচ্ছে। এ পদক্ষেপ অনেক বাহককে এশিয়ার রাউন্ডআবউট রুটে উড়তে বাধ্য করবে।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন গতকাল নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেছেন, চীন সরকার ইউক্রেনের সঙ্ঘাতের পক্ষগুলোকে আলোচনার পথে ফিরে আসার এবং ইউক্রেন সঙ্কটের একটি রাজনৈতিক মীমাংসা বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কূটনৈতিক আলোচনার পথে ফিরে আসার জন্য এবং একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য সব পক্ষকে আহ্বান জানাই। আমরা আলোচনা ও পরামর্শের মাধ্যমে ইউক্রেন সমস্যার একটি ব্যাপক নিষ্পত্তি করার পরামর্শ দিই’।
রুশ সেনারা ইউরোপের বৃহত্তম যেপোরযিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল করেছে বলে রাশিয়া যে দাবি করেছিল ইউক্রেনের কর্মকর্তারা সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইউক্রেনের রাষ্ট্র-চালিত পারমাণবিক কোম্পানি এনারগোটম, সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সকে বলেছে, মস্কোর এ ধরনের দাবি ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’।
এর আগে গতকাল রাশিয়া বলেছিল যে, তাদের সৈন্যরা কেন্দ্রটি দখল করেছে এবং স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেনকভ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘রাশিয়ান সেনারা যেপোরযিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশেপাশের এলাকা সম্পূর্ণভাবে পাহারা দিচ্ছে এবং নিয়ন্ত্রণ করছে।’ তিনি আরো বলেন, কর্মীরা কেন্দ্রটির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছে এবং তেজস্ক্রিয়তা স্বাভাবিক মাত্রায় রয়েছে।
রুশ সৈন্যরা রাজধানী থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান নেওয়া সত্ত্বেও, কিয়েভ ইউক্রেনের হাতেই রয়েছে এবং শহরে দুই দিনের কারফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে। উত্তর-পূর্বের চেরনিহিভ শহরে রাতভর রাশিয়ার সেনারা ভারী গোলাবর্ষণ করেছে, কিন্তু এটি এখনো ইউক্রেনের হাতে রয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে যে, ইউক্রেনে আক্রমণের সময় তাদের বাহিনী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যদিও কয়েকদিন ধরে তারা দাবি করেছে যে, তাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
এদিকে, রাতে বেশ কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেলোরুশের শাসক আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো তার কিছু সৈন্যকে রুশ আক্রমণে যোগ দেওয়ার জন্য মোতায়েন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অন্যদিকে রাশিয়ার অর্থনীতিতে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নিয়ন্ত্রণে মস্কোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধি করেছে এবং বিদেশীদের কাছে থাকা সিকিউরিটি বিক্রিতে দালালদের নিষেধ করেছে।
ডোনেটস্ক পিপলস রিপাবলিক (ডিপিআর)-এর মিশন যৌথ নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় কেন্দ্র (জেসিসিসি) গতকাল সোমবার বলেছে, ইউক্রেন সশস্ত্র বাহিনীর ইউনিটগুলো ডোনেটস্কে আর্টিলারি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। মিশনটি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছে, মস্কোর স্থানীয় সময় বেলা ১টা ২০ মিনিটে ব্যাপক গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে, যখন ইউক্রেনীয় সৈন্যরা ডোনেটস্কে ১৫ ১২২ মিমি শেল নিক্ষেপ করে। ১টা ৪০মিনিটে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী ১৫২ মিমি ক্যালিবারের আরো ৩৫টি শেল নিক্ষেপ করে। মিশন বলেছে, বেলা ৩টায় তারা আবার ডোনেটস্কে গোলা বর্ষণ করে, দুটি ১৫২ মিমি শেল, পাশাপাশি চারটি ১২০ মিমি শেল নিক্ষেপ করে।
১৭ ফেব্রুয়ারি ডনবাসে যোগাযোগের লাইনে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ডোনেটস্ক এবং লুগানস্ক পিপলস রিপাবলিক কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর সবচেয়ে ভারী গোলাবর্ষণের খবর দিয়েছে, যার ফলে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং বেসামরিক অবকাঠামো সুবিধাগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ২৪ ফেব্রুয়ারি একটি টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ডনবাস প্রজাতন্ত্রের নেতাদের অনুরোধের প্রতিক্রিয়ায় তিনি একটি বিশেষ সামরিক অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে, রোববার স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গ্রহণ করা ছবির ভিত্তিতে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টেকনোলজিস জানায়, ৫ কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ ওই বহরটিতে কয়েকশ সামরিক যান রয়েছে এবং তারা প্রায় ৬৪ কিলোমিটার দূর থেকে কিয়েভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট দ্বারা সংগৃহীত চিত্রগুলো ইউক্রেনের সীমান্তে রাশিয়ান বাহিনীর গঠন এবং চলমান আক্রমণকে তুলে ধরেছে, যা পূর্বে শুধুমাত্র সরকারি উৎস থেকে সহজলভ্য ছিল এমন গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করে। বহরটির ইউক্রেনের ইভানকিভ শহরের উত্তরপূর্ব দিকে অবস্থান করছে আর এতে জ্বালানিসহ অন্যান্য রসদ এবং ট্যাঙ্ক, সাঁজোয়া যান ও স্বয়ংক্রিয় কামান রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা। ম্যাক্সার বলেছে, উপগ্রহ থেকে নেওয়া ছবিতে আন্তোনভ বিমানবন্দরে সম্প্রতি চালানো বিমান হামলার ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হয়েছে এবং বিমানবন্দরটির ভেতরে ও কাছে তুমুল লড়াই চলার দৃশ্য উঠে এসেছে।
কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে কয়েক সপ্তাহ ধরে রাশিয়ার সেনা সমাবেশ অনুসরণ করে আসছে ম্যাক্সার, তবে কোম্পানিটির প্রকাশ করা ছবিগুলো রয়টার্স স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি।
এদিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান নিয়ে আলোচনার জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ গতকাল এক বৈঠকে বসে। অ্যান্থনিও গুতেরেস তার প্রারম্ভিক বক্তৃতায় বলেন, ইউক্রেনে লড়াই অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এটা স্থল, আকাশ ও পানিপথে ছড়িয়ে পড়ছে। এটা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। অধিবেশনে ভাষণে রাশিয়ার অ্যাম্বাসেডর ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, তাদের দেশের ইউক্রেন দখলের কোনো অভিপ্রায় নেই। অভিযানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ডনবাসের জনগণকে রক্ষা করা এবং ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ এবং ডিনাজিফিকেশনের কাজগুলো বাস্তবায়ন করা। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লজ্জাজনকভাবে অস্ত্র দিয়ে ভরিয়ে দেয়া এবং ইউক্রেনের সাধারণ জনগণকে যুদ্ধে জড়ানোর উস্কানি দেয়ার জন্য অভিযুক্ত করেন। পশ্চিমা দেশগুলো সেখানে বুদবুদ তৈরির চেষ্টা করছে যা কখনও সফল হবে না’।
ফরাসি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ গতকাল এক ফোনালাপে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে মানুষের জানমালের ওপর হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন। প্রায় দেড় ঘণ্টার ফোনালাপে তিনি ইউক্রেনে অভিযান বন্ধ এবং একটি যুদ্ধবিরতির পশ্চিমা আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। এলিসি প্রাসাদ এক বিবৃতিতে একথা বলেছে। ফোনালাপটি হয় বিকেলে, বেলারুশে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি আলোচনার আগে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট জানিয়েছে, তারা রাশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করছে। তারা রাশিয়ার ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের পরিচালকের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রাশিয়ার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পশ্চিমা পদক্ষেপের ফলে রুবলের দাম ২৫ শতাংশেরও বেশি পড়ে গেছে। সুইজারল্যান্ড তার নিরপেক্ষতার দীর্ঘদিনের নীতি থেকে বেরিয়ে এসে তার দেশের রাশিয়ার সম্পদ জব্দের ঘোষণা দিয়েছে। ব্রিটিশ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার অধিকাংশ পদাতিক সৈন্য কিয়েভের ১৮ কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশ করেছে, তবে ইউক্রেন বাহিনী তাদের গতি রোধের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘে পোল্যান্ডের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তার দেশ ইউক্রেনে অধ্যয়নরত জাতিনির্বিশেষে সকল ছাত্রের জন্য তাদের সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং যাদের ইচ্ছা পোল্যান্ডেই শিক্ষা অব্যাহত রাখতে পারে। ইতোমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের দেশে প্রথম শরণার্থী শিশুর জন্ম হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভজেনি ইভানভ গতকাল সাংবাদিকদের বলেছেন, রাশিয়া ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করার পরিকল্পনা করছে না। ‘না’, এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন। ইভানভ আরো বলেন, ইইউ এখনও রাশিয়ানদের ভিসা প্রদান সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেয়নি।
‘এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি’- তিনি বলেন। ‘আমরা বিবৃতি শুনেছি, তবে এটি একটি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। কারণ দেশগুলো পৃথকভাবে এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না’।
‘সরকারি সিদ্ধান্তগুলো কিছু বিধিনিষেধ প্রবর্তন করেছিল: উদাহরণস্বরূপ, কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য এখন ভিসা প্রয়োজন’, তিনি বলেছিলেন। ‘এর আগে উভয় পক্ষের কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা ভিসামুক্ত ভ্রমণ করতে পারতেন’।
চেক প্রজাতন্ত্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভিট রাকুসান রোববার বলেছেন যে, দেশটি প্রস্তাব করবে যে, ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের জন্য ইইউ সদস্য দেশগুলো রাশিয়ানদের সেনজেন ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেবে।
ইইউ দেশগুলো এর আগে ভিসার জন্য অনুমোদিত নয় এমন কূটনৈতিক পাসপোর্টের রাশিয়ান ধারকদের জন্য সীমা প্রবর্তন করতে সম্মত হয়েছিল। ইইউ দেশে প্রবেশ করার সময় তাদের অতিরিক্ত যাচাইকরণের প্রয়োজন হবে।
এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ অভিযান সম্পর্কে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে অবহিত করেছেন। তাদের টেলিফোন কথোপকথনের পর গতকাল রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
‘সের্গেই ল্যাভরভ তার সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতিপক্ষকে বিশেষ সামরিক অভিযানের আলোকে ইউক্রেনের পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার সম্ভাবনা সম্পর্কে আমাদের নীতিগত পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করেন। দুই শীর্ষ কূটনীতিক ব্যাপক রুশ-ইউএই সম্পর্কের আরও উন্নয়নের বর্তমান বিষয় নিয়েও আলোচনা করেছেন। মন্ত্রণালয় বলেছে ‘রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর আবুধাবি রাষ্ট্রীয় সফরের সময় উপনীত চুক্তিগুলোর বাস্তব বাস্তবায়নের উপর এবং রাশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ঘোষণাপত্র, যা ২০১৮ সালের ১ জুন মস্কোতে স্বাক্ষরিত হয়েছিল বিশেষ মনোযোগ নিবদ্ধ করা হয়’। টেলিফোন কলটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছিল।
রাজধানী কিয়েভে গতকাল উত্তেজনাপূর্ণ শান্ত অবস্থা বিরাজ করে। মানুষ কঠোর কারফিউয়ে দুই রাত আটকে থাকার পর খাবার ও পানি কিনতে লাইনে দাঁড়ায়। তবে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, আবাসিক এলাকায় গোলাগুলো হচ্ছে, শক্তিশালী বিস্ফোরণে অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংগুলো কাঁপছে। খারকিভের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অন্তত সাতজন নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছে। রাশিয়ান সামরিক বাহিনী আবাসিক এলাকাকে লক্ষ্যবস্তু করার কথা অস্বীকার করেছে।
ব্রাজিল এবং রাশিয়া ভাই ভাই : ব্রাজিলের কট্টর-ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে উপহাস করেছেন। রোববার একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, জেলেনস্কির জনগণ তাদের আশা-ভরসা একজন কমেডিয়ানের হাতে সঁপে দিয়েছিল। বলসোনারো রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করতে অস্বীকার করেছেন এবং রোববার বলেছেন যে, ব্রাজিল এ সঙ্ঘাতে ‘নিরপেক্ষ’ থাকবে। তিনি আরো বলেছেন, ব্রাজিল এবং রাশিয়া ‘কার্যত ভাই ভাই’।
বেলারুশ- যারা রাশিয়ান সৈন্যদের জন্য ইউক্রেনে ঢোকার পথ করে দিয়েছে - তারা এখন রাশিয়ান আক্রমণে সহায়তা করার জন্য ইউক্রেনে নিজস্ব সৈন্য পাঠানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছে। বেশ কিছু প্রতিবেদনে একথা বলা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, বেলারুশ সেনা মোতায়েনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা আজ থেকে শুরু হতে পারে।
‘পশ্চিমা দেশগুলো ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণ বন্ধের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে এবং রাশিয়াকে কোনো বিকল্প ছাড়াই ছেড়ে দিয়েছে’- সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা বুথাইনা শাবান আল আখবারিয়া টিভি চ্যানেলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘পশ্চিম ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণের বিষয়ে তার প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে এবং রাশিয়ার জন্য কোন বিকল্প রাখেনি’। ‘রাশিয়া যদি পদক্ষেপ না করত (ইউক্রেনে একটি বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করার জন্য), এটি আরো গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারত’- উল্লেখ করেছেন শাবান। তিনি যোগ করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কি তার প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোকে রাশিয়ার সাথে জোট করতে দেবে’?
উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিবৃতিতে বলেছে, মার্কিন আধিপত্যবাদী নীতি এবং রাশিয়ার বৈধ নিরাপত্তা স্বার্থের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর উপেক্ষাই ইউক্রেনের পরিস্থিতির মূল কারণ। কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি উত্তর কোরিয়ার একজন কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ‘ইউক্রেনের সঙ্কট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমের আধিপত্যবাদী নীতি থেকে উদ্ভূত হয়েছে, যারা অন্য দেশের প্রতি ইচ্ছাকৃতভাবে এবং স্বেচ্ছাচারীভাবে আচরণ করছে’। সূত্র : ইন্টারফ্যাক্স, তাস, বিবিসি, রয়টার্স, এপি।

 



 

Show all comments
  • Md Imteaz ১ মার্চ, ২০২২, ৬:৩৪ এএম says : 0
    যারা ইউক্রেন রাশিয়ার ইস্যু নিয়ে মানবতার গল্প শোনাচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে কথাগুলো লজ্জা করেনা আজ NATO সংস্থার... ? এই মানবতা কোথায় ছিলো আফগানিস্তান, ইরাক,সিরিয়া,ফিলিস্তিনে হামলার সময়... ধ্বংস হোক সে সব শক্তি যারা আমার মুসলিম মা, ভাই,বোন এবং ছোট বাচ্চাদের হত্যা করেছে... আজ কেন পশ্চিমারা এভাবে আর্তনাদ করছে...? আমি উইক্রেনের বিপক্ষেও না আবার রাশিয়ার পক্ষেও না... আমি চাই আমেরিকা এবং NATO সংস্থার উচিৎ শিক্ষা... আমি ইউক্রেনের মানুষের কান্না দেখে একটুও বিচলিত নই,কারন আমি ইরাক,ফিলিস্তিন,সিরিয়া,লিবিয়ান,কাস্মীরী বৃদ্ধ নারী শিশুদের বিবস্ত্র আহাজারি দেখে দেখেই বড় হয়েছি।আবেগ দিয়ে দুনিয়া চলেনা,,,,,,
    Total Reply(1) Reply
    • MD.Baharul islam ১ মার্চ, ২০২২, ৮:২৮ এএম says : 0
      sakol bidormi mosulmaner shatro
  • Rasel Hasan ১ মার্চ, ২০২২, ৬:৩৪ এএম says : 0
    এ শান্তি আলোচনা রাশিয়ার কৌশল মাত্র আর কিছু নয়, রাশিয়া ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট কে পদত্যাগ করতে বলবে,
    Total Reply(0) Reply
  • RT Ananna ১ মার্চ, ২০২২, ৬:৩৫ এএম says : 0
    রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে বেশি বিপদে পড়েছে বিশ্ব মোড়লেরা। যুদ্ধে মুসলিম নেই, তাই কাকে জঙ্গি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা
    Total Reply(0) Reply
  • Skander Hossen ১ মার্চ, ২০২২, ৬:৩৫ এএম says : 0
    এই মূহুর্তে যুদ্ধ বিরতিতে গেলে রাশিয়া বড়ো ভুল করবে।রাশিয়ার উচিৎ যুদ্ধটা শেষ পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া।কারণ পশ্চিমাদের মিত্র ভলিডিমির জেলেনেস্কি সাহেবকে উচিৎ শিক্ষা দেয়া দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Ibrahim Hossen ১ মার্চ, ২০২২, ৬:৩৫ এএম says : 0
    অভিনন্দন, আলোচনা ফলস্বরূপ হোক এ-ই কামান। উভয়পক্ষের জন্য রইলো শুভকামনা
    Total Reply(0) Reply
  • Feroz Chowdhury ১ মার্চ, ২০২২, ৬:৩৬ এএম says : 0
    আলোচনা শুরু হয়েছে এটা ভাল খবর।তবে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।কারন পুতিন যে কোন মূল্যেই জয় নিশ্চিত করতে চাইবে কারন পুতিনের পেছনে ফেরার সব রাস্তা বন্ধ অপক্ষে ইউক্রেনের মিত্ররা ইউক্রেনকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেছে এবং করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Monsur Alan ১ মার্চ, ২০২২, ৬:৩৭ এএম says : 0
    পুতিনতো এটা আগেই বলেছিল, দীর্ঘ ক্ষয় ক্ষতির পর শুভ বুদ্ধির উদয় হলো ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টর, এমেরিকা ন্যাটো তথা পশ্চিমা বিশ্ব এরা কারোই প্রকৃত বন্ধু নয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Anowar Bin Malek Prodhan ১ মার্চ, ২০২২, ৬:৩৭ এএম says : 0
    এই যে ভদ্রলোক গুলো বসে আছে তাদের বাহ্যিক দিক দেখে কেউ কল্পনাও করতে পারবে না যে তাহারা ভিতরগত দিক থেকে কতটা হিংস্র।
    Total Reply(0) Reply
  • Afchar Saykat ১ মার্চ, ২০২২, ৬:৩৭ এএম says : 0
    রাশিয়ার হাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক নিউক বম্ব আছে আর তাদের মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম অন্যতম শক্তিশালী। নিষেধাজ্ঞায় একেবারেই বেগতিক অবস্থা দেখলে এগুলো ব্যবহার করতে দ্বিধা করবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • L.R. Naeem ১ মার্চ, ২০২২, ৬:৩৮ এএম says : 0
    এত তাড়াতাড়ি যুদ্ধবিরতি আশা করি না। ইজরায়েলের একনিষ্ঠ সমর্থক ইউক্রেন এর অবস্থা ফিলিস্তিন ইরাক সিরিয়া লিবিয়া ও আফগানিস্তানের মতো হওয়ার পর যুদ্ধবিরতি হওয়া উত্তম।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ