মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনে অভিযানের মধ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার পারমাণবিক বাহিনীকে সতর্ক করে দিয়ে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার রাশিয়ার সাথে ‘পূর্ব শর্ত ছাড়া’ আলোচনা করতে সম্মত হয়েছেন।
গতকাল ইউক্রেইনের সঙ্গে আলোচনার জন্য রাশিয়ার একটি প্রতিনিধি দল বেলারুশে পৌঁছেছে বলে মস্কো জানানোর পর জেলেনস্কি বলেছিলেন, যে দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে আক্রমণ হয়েছে, সেখানে কোনো বৈঠকে তারা যাবেন না। তবে অন্য কোনো স্থানে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসতে আপত্তি নেই তার। এর পরেই রুশ পারমাণবিক শক্তিকে ‘বিশেষ সতর্কাবস্থায়’ রাখতে নির্দেশ দেন পুতিন। আদেশ রাশিয়ার কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীর জন্য এটাই সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কাবস্থা। এ প্রেক্ষিতে বিনা শর্তে আলোচনায় সম্মতি দেন জেলেনস্কি। বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কোর সাথে ফোনে আলাপ করার পর জেলেনস্কি তার অফিসিয়াল টেলিগ্রাম চ্যানেলে ঘোষণা করেছেন. ‘আমরা সম্মত হয়েছি যে, ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল প্রিপিয়াত নদীর কাছে ইউক্রেনীয়-বেলারুশিয়ান সীমান্তে পূর্বশর্ত ছাড়াই রাশিয়ান প্রতিনিধি দলের সাথে দেখা করবে।’
এর আগে, পুতিন রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তিকে বিশেষ সতর্কাবস্থায় রাখার জন্য রুশ সামরিক বাহিনীকে আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার প্রতি ‘অবন্ধুসুলভ পদক্ষেপ’ নিয়েছে এবং ‘বেআইনি নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করেছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে বর্তমানে এ অস্ত্র ব্যবহারের ইচ্ছে রয়েছে - বলছেন বিবিসির বিশ্লেষক গর্ডন কোরেরা। তিনি বলছেন, এর অর্থ হচ্ছে, মস্কো একটি সতর্কবার্তা দিচ্ছে, এবং সতর্কাবস্থার মাত্রা বাড়ানোর ফলে কৌশলগত অস্ত্র নিক্ষেপ আরো দ্রুতগতিতে করা সহজতর হতে পারে। রাশিয়ার কাছে পরমাণু অস্ত্রের যে মজুত আছে তা পৃথিবীর বৃহত্তম। কয়েকদিন আগেই রুশ নেতা ইউক্রেন অভিযান শুরুর সময় এক হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, ‘কেউ এতে বাধা দেবার চেষ্টা করলে এমন পরিণতি হবে যা তার ইতিহাসে কখনো দেখা যায়নি।’
খারকিভের পতন: দক্ষিণের মেলিতোপোল দখল করে নেবার পর গতকাল ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে রাশিয়ান সেনাবাহিনী। খারকিভের কর্তৃপক্ষ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। শনিবার রাতভর মিসাইল হামলার পর গতকাল রাশিয়ান বাহিনী খারকিভে প্রবেশ করে। রাশিয়ান সেনারা প্রথমে শহরের প্রতিরোধ বেষ্টনী ভেদ করে এবং সেখানে তাদের সাথে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর লড়াই হয়। মিসাইল হামলায় একটি নয় তলা আবাসিক ভবন ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার জরুরি বিভাগ। ভবনটির বেজমেন্টে আশ্রয় নেয়ার কারণে ৬০ জনের মতো বাসিন্দার প্রাণ রক্ষা হয়েছে। তবে বয়স্ক একজন নারী মারা গেছেন।
বিবিসির সংবাদদাতা পল এ্যাডামস জানিয়েছেন, প্রকৃত অর্থে খারকিভ শহরেই রুশ ও ইউক্রেনীয় সৈন্যদের মধ্যে প্রথমবারের মত রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ বা ‘স্ট্রিট ফাইটিং’ হয়েছে। শহরটি থেকে প্রকাশ পাওয়া কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তার কোণায় কোণায় ইউক্রেনের সৈন্যরা রকেটচালিত গ্রেনেড নিক্ষেপ করছে, এবং রুশ সৈন্যরা সাঁজোয়া যানের পেছনে পেছনে পায়ে হেঁটে এগুচ্ছে। পল এ্যাডামস লিখছেন, গত কয়েকদিনে রুশ কৌশল ছিল বড় শহরগুলো এড়িয়ে চলা, এবং দৃশ্যতঃ তাদের ইচ্ছা ছিল রাজধানী কিয়েভে ঢুকে সরকার পরিবর্তন ঘটানো। খারকিভের ক্ষেত্রে হয়তো সেই কৌশলে একটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। খারকিভ শহরটি রুশ সীমান্তের একেবারে কাছে, এবং বরাবরই এ আশঙ্কা ছিল যে রুশ অভিযান হলে এ শহরটিই হয়তো প্রথম বিপদে পড়বে। এদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণ ও যুদ্ধের কারণে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালানো লোকের সংখ্যা এখন ৩ লাখ ৬৮ হাজারে পৌঁছেছে। বিবিসির সংবাদদাতাদের খবর অনুযায়ী, ইউক্রেন থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজারেও বেশি লোক পালিয়ে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে, গত তিন দিনে ইউক্রেন থেকে রোমানিয়ায় পালিয়েছে ৪৩ হাজারেরও বেশি মানুষ।
ইউক্রেনে রুশ আক্রমণে মদত যোগাবে চেচেন যোদ্ধারা: পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও রাশিয়ার চেচনিয়া অঞ্চলের নেতা রামযান কাদিরভ গতকাল জানিয়েছে, তিনি ইউক্রেনে তার যোদ্ধাদের পাঠিয়েছেন, যারা রুশ সৈন্যদের সাথে হাত মিলিয়ে যুদ্ধ করবে। অনলাইনে পোস্ট করা এক ভিডিওতে রামযান কাদিরভ বলেন, চেচেন বাহিনী এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের একটি সামরিক স্থাপনা সফলভাবে দখল করেছে। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় এই প্রজাতন্ত্রের নেতা রুশ প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ একজন মিত্র। রাশিয়ার আক্রমণকে সমর্থন করে কাদিরভ বলেছেন, ইউক্রেনের ওপর হামলা চালানোর যে সিদ্ধান্ত পুতিন নিয়েছেন তা মস্কোর শত্রুদের ইউক্রেনের মাটি ব্যবহার করে রাশিয়ার ওপর হামলা চালানোর সুযোগ প্রতিহত করবে।
এদিকে, রাশিয়ার হামলার মধ্যে গতকাল থেকে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ শহর জুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে, যা সোমবার সকাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। কিয়েভের কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘যেসব নাগরিককে এসময় রাস্তায় দেখা যাবে, তাদের শত্রু পক্ষের অন্তর্ঘাতী বাহিনীর সদস্য হিসাবে বিবেচনা করা হবে।’ এর আগে একটি ঘোষণায় জানানো হয় কারিফউ জারি থাকবে প্রতি দিন স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করে না চীন: নিষেধাজ্ঞা কোন সমস্যা সমাধান করতে পারে না। রোববার জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকের সাথে ফোনালাপের সময় এই মন্তব্য করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, টেলিফোনে আলাপকালে ওয়াং বলেন, চীন ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং রাশিয়াকে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, কার্যকর এবং টেকসই ইউরোপীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য সংলাপ পুনরায় শুরু করতে সমর্থন করেছে। ‘চীন সমস্যা সমাধানের জন্য নিষেধাজ্ঞার ব্যবহারকে সমর্থন করে না এবং আন্তর্জাতিক আইনে কোন ভিত্তি নেই এমন একতরফা নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছে।’
গতকাল জারি করা ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে ইউরোপিয় কাউন্সিলের উচিত নতুন সংঘাতের উদ্রেক না করে বর্তমান সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধানে অবদান রাখা।’ চীন বলপ্রয়োগ ও নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দিয়ে অভিব্যক্তি ব্যবহারে বাধা দিচ্ছে, তিনি যোগ করেছেন। জবাবে ইউক্রেনের বিষয়ে চীনের ‘বিশেষ দায়িত্বের’ উপর জোর দিয়েছেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক। উল্লেখ্য, চীন গত শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি খসড়া প্রস্তাবে ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল, যেখানে ইউক্রেনে মস্কোর আক্রমণের নিন্দা করার কথা বলা হয়েছিলো। চীনের এই পদক্ষেপটি পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা দেখানোর জন্য একটি জয় হিসাবে দেখেছে।
‘সুইফট’ থেকে বাদ পড়ছে রাশিয়া, সীমিত হচ্ছে ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট’: আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থা ‘সুইফট’ থেকে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপারে একমত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্র দেশগুলো। ইউরোপিয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, পুতিন সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিদেশে নাগরিকত্ব নেয়া ঠেকাতে তথাকথিত ‘গোল্ডেন পাসপোর্টের’ বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
একটি দেশ থেকে আরেকটি দেশের ব্যাংকে আর্থিক লেনদেন করতে সুইফট ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়। তেল ও গ্যাস রফতানির মাধ্যমে রাশিয়া যে অর্থ আয় করে, সেই অর্থ আদায়ে দেশটি সুইফটের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। জার্মান সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, রাশিয়ান এসব ব্যাংকে বৈদেশিক অর্থ লেনদেন বন্ধ করাই তাদের এই উদ্যোগের মুল উদ্দেশ্য। কিন্তু রাশিয়ার সাথে ব্যবসা রয়েছে, এমন পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলোও এর ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। বেলজিয়াম ভিত্তিক সুইফট বিশ্বের এগারো হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। বিশ্বব্যাপী খুবই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখলেও কোন দেশের উপর অবরোধ আরোপের আইনি ক্ষমতা নেই প্রতিষ্ঠানটির।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইন বলেছেন, রাশিয়া যাতে তার যুদ্ধকালীন অর্থ ভাণ্ডার ব্যবহার করতে না পারে, পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো সে ব্যাপারেও কাজ করছে। সেজন্য রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাতে কোন সম্পদ বিক্রি করতে না পারে সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেই সাথে ব্যাংকটির অন্যান্য আর্থিক লেনদেন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, তথাকথিত ‘গোল্ডেন পাসপোর্টের’ বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাতে করে পুতিন সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পদশালী রাশিয়ানরা পশ্চিমা দেশগুলোতে নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানকার আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশ ও সুবিধা নেবার সুযোগ না প্রায়।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘পুতিন যাতে তার আগ্রাসনের মূল্য দেয় সেজন্য আমরা একসাথে কাজ করবো।’ এর প্রশংসা করে পাল্টা টুইট বার্তায় ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্মাল লিখেছেন, ‘অন্ধকার দিনে এটি হবে বড় সাহায্য’। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, কানাডা এসব আর্থিক বিধিনিষেধ আরোপের ব্যাপারে একমত হয়েছে। ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর এটি হবে রাশিয়ার উপর আরোপ করা সর্বশেষ অবরোধ। সুইফট ব্যবস্থা থেকে রাশিয়ার ব্যাংকগুলোকে সরিয়ে দেয়ার অর্থ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেনে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। কারণ প্রায় সব ব্যাংক এই ব্যবস্থার আওতায় লেনদেন করে। সুইফট-এর সকল লেনদেনের দেড় শতাংশ রাশিয়া থেকে হয়ে থাকে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এপি, নিউইয়র্ক টাইমস, তাস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।