মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
তার কাছে এটাও নির্বাসন দণ্ড! করাচি থেকে ফোনে কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন কলকাতা কন্যা। সাক্ষাৎ রাজকন্যাও বটে! আওয়াধের শেষ স্বাধীন নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের আপন নাতির নাতনি তিনি। কলকাতায় বাবা সাহাবজাদা ওয়াসিফ মির্জা তখন মৃত্যুশয্যায়। করাচির শ্বশুরবাড়ি থেকে জন্মভূমিতে ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন ওয়াকার আরা বেগম!
দুই ছেলে এবং মেয়ে কানাডায়। করাচিতে ওয়েকার এবং তার স্বামীকে তারা বার বার ডাকছিলেন, এসো কানাডা ঘুরে যাও! কিন্তু কলকাতার পার্ক সার্কাসের ওরিয়েন্ট রোয়ের বাড়িটা, বাবা স্নেহচ্ছায়া পাগলের মতো টানছিল বড় মেয়েকে। বাবার শরীরটা ভাল নেই! আগে বাবার সঙ্গে দেখা করা, তার পর বাকি সব! কিন্তু নিয়মমাফিক ভিসার আবেদন করাই সার! গত এপ্রিলে আর্জি জানানোর পাঁচ-পাঁচটা মাস পরে পাসপোর্টটুকু ফেরত দেয় ভারতীয় হাই কমিশন। তাতে ভিসার ছাপ নেই।
কান্না ভেজা স্বরে ওয়াকার আরা বেগম বলছিলেন, ‘সেপ্টেম্বর, অক্টোবরে কোভিডের প্রকোপ কম ছিল। তখন ভিসা দিলেও আব্বুকে শেষ দেখা দেখতে পেতাম! আমার এমনই কপাল নিজের বাবাকে.....!’ গত ২৫ জানুয়ারি মারা গিয়েছেন হয়েছেন ৮৭ বছর বয়সি সাহাবজাদা ওয়াসিফ মির্জা। ওয়াজিদ আলি শাহ এবং তার অন্যতম স্ত্রী আখলিল আরা মুমতাজ মহলের পুত্র মির্জা মুহাম্মদ বাবর কলকাতায় ডাক্তারি করতেন। তার পুত্র গাজানফর মির্জার বড় ছেলে সাহাবজাদা।
লখনউ থেকে কলকাতায় নির্বাসিত অওয়ধের রাজা ওয়াজিদ আলি শাহ পরে লখনউয়ে ফেরার সুযোগ পেয়েও ফিরতে চাননি। গজল, ঠুমরি, কত্থক কিংবা হোলির গান, নাটকের মহিমায় মেটিয়াবুরুজেই গড়ে তুলেছিলেন নতুন লখনউ। তার বিভিন্ন স্ত্রীর সন্তানসন্ততির বংশধরেরা এখন সারা দুনিয়ায় ডালপালা মেলেছেন। দেশভাগ বা ১৯৬৪-র গোষ্ঠী অশান্তির আবহে সাহাবজাদের বাবাও স্রোতের উল্টো পথে কলকাতায় থেকে যান। আত্মীয়স্বজনেরা অনেকেই অন্যত্র চলে যাচ্ছিলেন। মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব এবং ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্ধ ভক্ত সাহাবজাদে তা ভাবতে পারেননি।
তার কন্যা ওয়াকারের শ্বশুরবাড়িও আদতে কলকাতার। ১৯৬৪-র গোলমালের দিনে তারা প্রথমে পুব পাকিস্তান, পরে ১৯৭১-এ করাচিতে চলে যান। ১৯৮৩-তে বিয়ে হয় ওয়াকারের। এর পরেও কয়েক বার কলকাতায় এসেছেন তিনি। শেষ আসা ২০১৬-য়! কিন্তু ভিসা নিয়ে ভারতে ঢুকতে এমন অসম্ভবের দেওয়াল আগে কখনওই দেখেননি। “কাগজে-কলমে পাকিস্তানি হলেও আমি কিন্তু মনেপ্রাণে ভারতীয়। এখন মনে হয়, করাচিতে খাঁচায় বন্দি আছি। কলকাতায় জন্ম, ইস্কুল, ছোটবেলা…! মনে মনে আমি রোজই কলকাতায় ঘুরে আসি”, ফোনে আনন্দবাজারকে বলছিলেন প্র্যাট মেমোরিয়ালের স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী ওয়েকার।
ঠিক এখনই কলকাতার সিন্ধি পঞ্চায়েত হলে সাহাবজাদা মির্জার স্মরণসভায় প্রার্থনা করছেন রামকৃষ্ণ মিশনের আলমবাজার মঠের সন্ন্যাসী থেকে পাদ্রী, মুসলিম বা শিখ, পার্সি, বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিনিধি সুহৃদবর্গ। ওয়াজিদ আলি শাহের সর্ব ধর্ম সহিষ্ণুতার আদর্শই যেন দ্বিখণ্ডিত এই ভারতে। সূত্র: এবিপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।