মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনের দুই রুশপন্থী অঞ্চলকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করল রাশিয়া। পশ্চিমী দেশগুলোর সতর্কতা অগ্রাহ্য করেই সোমবার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে মস্কো। রাশিয়ার টিভি চ্যানেলে এক দীর্ঘ ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাাদিমির পুতিন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, অবিলম্বে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।’ অন্য দিকে কূটনৈতিক মহলের আশঙ্কা, এই পদক্ষেপের ফলে পশ্চিমী-সমর্থিত সরকারের সঙ্গে সঙ্ঘাত শুরু হতে পারে রাশিয়ার। ইতোমধ্যে রাশিয়ার একাধিক ব্যাংকের ওপর যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য।
স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার পর পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দুইটি অঞ্চলে সৈন্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। ভিডিওতে দেখা গেছে যে, রাশিয়ার সামরিক যানবাহন ইউক্রেন সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া বলেছে, আলাদা হয়ে যাওয়া অঞ্চল দুইটিতে ‘শান্তি রক্ষার’ কাজ করবে তাদের সৈন্যরা। ২০১৪ সাল থেকেই এসব এলাকার বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তা করছে রাশিয়া। যদিও ‘শান্তি রক্ষার’ এই ঘোষণাকে ‘ফালতু কথা’ বলে বর্ণনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তাদের অভিযোগ, রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি করছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তার দেশ কাউকে বা কোন কিছুর জন্যই ভীত নয়। রাশিয়ার এই পদক্ষেপের জের ধরে যুক্তরাজ্যসহ একাধিক দেশ নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে।
এ সিদ্ধান্তের ফলে ইউক্রেনকে ঘিরে ইউরোপে উত্তেজনা এখন চরমে উঠেছে। এর একদিকে আছে রাশিয়া, যারা ইউক্রেনের সীমান্তে প্রায় লাখ খানেক সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে বলে দাবি করছে পশ্চিমা দেশগুলো। এর পাল্টা নেটো জোটও তাদের সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। ইউক্রেনে কোন অভিযান চালালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা-সহ নানা ব্যবস্থার হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা। গত কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম ইউরোপ আবার একটি বড় আকারের যুদ্ধের মুখোমুখি - এমন আশঙ্কা করছেন অনেকে। সোমবার পুতিন টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে বলেছেন, মস্কো পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। দীর্ঘ এক বক্তব্যে পুতিন ইউক্রেনের সম্পর্কে বলেন, এটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোনি যেটা ‘পুতুল সরকারের’ মাধ্যমে চলছে। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন কোন দিনই প্রকৃত রাষ্ট্র ছিল না এবং আধুনিক ইউক্রেন রাশিয়ার দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে।’
ইউক্রেনকে নেটোর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ধারণাকে তিনি রীতিমত আক্রমণাত্মক ভাবে বলেন ‘এটা সরাসরি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি’। পুতিন যুক্তি দেন, নেটো রাশিয়ার নিরাপত্তার বিষয়টা আমলে নেয়নি। ভাষণ শেষ করার সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন যে, রাশিয়াপন্থী বিদ্রোহীদের দখলে থাকা অঞ্চলগুলোকে স্বীকৃতি দেবে রাশিয়া। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইউক্রেনকে বিদ্রোহীদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করা বন্ধ করতে হবে, না হলে এর পরিণতি মোকাবেলা করতে হবে। এর কিছু পরেই বিদ্রোহী অঞ্চলকে স্বীকৃতি দিয়ে তিনি দুইটা ডিক্রিতে সই করেন। সেখানে বলা হয়েছে রাশিয়ার সেনাবাহিনী সেখানে ‘শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবে’। তবে ‘শান্তিরক্ষার কাজে নিয়োজিত’ থাকার অর্থ আসলে কী - সেটি নির্দিষ্ট করে বলেনি রাশিয়া। কিন্তু রাশিয়া এবং ইউক্রেনের বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিন এখন ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ ইউক্রেনের বিদ্রোহী এলাকাতে রুশ সৈন্য পাঠাতে পারবে।
এই স্বীকৃতি দীর্ঘ টানাপড়েনের অবসান ঘটাবে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। কারণ, ২০১৪ সালে রাশিয়া ক্রিমায়াকে দখল করার পর বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অন্য অংশের মত আবার ভিন্ন। এ নিয়ে তারা বড় সঙ্ঘাতের আঁচ করছেন। আবার এর ফলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলির সঙ্গে শান্তিচুক্তি শেষ হল এবং ইউক্রেন অঞ্চলে সেনাও পাঠাতে পারবে রাশিয়া। দুই অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ, যাদের কাছে রাশিয়ার পাসপোর্ট রয়েছে, তাদের সুরক্ষার্থে এই পদক্ষেপ বলে ব্যাখ্যা দিতে পারেন পুতিন। ফলত, ইউক্রেনের উপর পরোক্ষ ভাবে চাপ বাড়ছে। তাদের হাতে দুটি বিকল্প। হয় দুই অঞ্চলের অধিকার ছেড়ে দিতে হবে, নয়ত রাশিয়া সেনা বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেন-সঙ্কটের আবহে কয়েক দিন আগে স্বঘোষিত দোনেৎস্ক পিপলস্ রিপাবলিকের জরুরি মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া একটি বিবৃতিতে বলা হয়, প্রায় সাত লাখ মানুষকে তারা রাশিয়ার সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। ওই অঞ্চলে ইউক্রেন গোলাবর্ষণ করছে বলে অভিযোগ করা হয়।
ডিক্রিতে সই করার অর্থ কী?
অনেক বছর আগে যখন রাশিয়া প্রথম পূর্ব ইউক্রেনে সৈন্য সমাবেশ ঘটায় তখন মস্কোই মূলত এই বিদ্রোহী অঞ্চল সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু তাদের স্বাধীনতার ব্যাপারে পুতিনের এই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ‘ইতিহাস বদলে দেয়া’ একটি মুহূর্ত। প্রথমত, এটা মূলত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়া শান্তি প্রক্রিয়াকে মেরে ফেলা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় পুতিন নিজেও অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। একই সঙ্গে পূর্ব ইউক্রেনে একটা বড় ধরনের সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা তৈরি করেছে। আর এই ডিক্রিতে সই করার অর্থ হল এটা পরিষ্কার যে ভøাদিমির পুতিন ইতিমধ্যে ঐসব বিদ্রোহী এলাকায় সৈন্য পাঠাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের ফরেন সেক্রেটারি লিজ ট্রুস টুইট করে বলেছেন, এক ফোনালাপে ইউরোপিয়ান ফরেন পলিসি প্রধান জোসেপ বোরেল একমত হয়েছেন যে ব্রিটেন এবং ইইউ ‘পুতিনের শাসনকালের উপর দ্রুত নিষেধাজ্ঞা দেবে এবং ইউক্রেনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াবে।’ তিনি ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবারের সাথেও আলাপ করে পূর্ণ সমর্থন প্রস্তাব করেছেন। আর যুক্তরাজ্য তার বন্ধু-রাষ্ট্রদের নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরিকল্পনা করছে আমেরিকা
হোয়াইট হাউজ বলছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সঙ্গে কথা বলেছেন এবং রাশিয়ার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউজ জানাচ্ছে, বাইডেন বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কাছে তাদের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে পুনরায় নিশ্চিত করেছেন যে ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা বজায় থাকবে। বাইডেন আরো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে একত্রিত হয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরিকল্পনা করছে। হোয়াইট হাউজ আরো জানাচ্ছে, বাইডেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এবং জামানির চ্যান্সেলরের সঙ্গে আলোচনা করছেন -কীভাবে তাদের প্রতিক্রিয়াকে সমন্বয় করা যায় সেটা নিয়ে।
এদিকে, রাশিয়ার পাঁচটি ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। এগুলো হলো রোসিয়া, আইএস ব্যাংক, জেনারেল ব্যাংক, প্রোমসভায়াজ ব্যাংক এবং ব্ল্যাক সি ব্যাংক। এগুলো রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংক। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এই নিষেধাজ্ঞা জারির ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে রাশিয়ার তিনজন ব্যক্তির সকল সম্পদের পরেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তারা হলেন গেনেডি তিমচেনঙ্কো, বরিস রোটেনবার্গ এবং ইগোর রোটেনবার্গ।
যুক্তরাজ্যে থাকা তাদের সকল সম্পদ জব্দ অবস্থায় থাকবে। তারা যুক্তরাজ্যে যাতায়াত করতে পারবেন না। যুক্তরাজ্যের কোন নাগরিক তাদের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্য করতে বা সম্পর্ক রাখতে পারবেন না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য এবং তার সহযোগী মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করবে। অন্যদিকে, জার্মানির চ্যান্সেলার ওলাফ শোলৎজ বলেছেন, রাশিয়ার সর্বসাম্প্রতিক পদক্ষেপের পর নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্প চালুর অনুমোদন জার্মানি দেবে না। রাশিয়া ও জার্মানির মধ্যে এই পাইপলাইনের কাজ শেষ হয়েছে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে, কিন্তু পাইপলাইনটি এখনও চালু হয়নি। সূত্র : বিবিসি নিউজ, এএফপি, রয়টার্স।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।