মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সম্প্রতি বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত সাংবাদিকদের সংগঠন অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট (ওসিসিআরপি) সমস্যাযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত সুইস ব্যাঙ্কের কিছু অ্যাকাউন্টে ৮শ’ কোটি ডলারের বেশি অর্থ কেলেঙ্কারীর তথ্য হাতে পেয়েছে। জার্মান সংবাদপত্র ‘সুডয়চে সায়টুঙ’কে সরবরাহ করা ওসিসিআরপি’র ‘সুইস সিক্রেটস’ নামে পরিচিত এ বিশাল কেলেঙ্কারীর শীর্ষে উঠে এসেছে আফগানিস্তানে রাশিয়ার আগ্রাসন মোকাবিলায় জামাতুল মুজাহিদীন নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠায় কৃতিত্বের অধিকারী এবং পাকিস্তানের সাবেক জেনারেল জিয়াউল হকের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও দেশটির সাবেক গোয়েন্দা প্রধান জেনারেল আখতার আবদুর রহমান খানের নাম।
ওসিসিআরপি’র প্রণীত নথি অনুসারে, ‘আফগানিস্তানে রাশিয়ার উপস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াইরত মুজাহিদদের জন্য পাঠানো সউদী এবং মার্কিন অর্থ সিআইএ’র সুইস ব্যাংক অ্যাকাউন্টে যায়। প্রতিবেদন অনুসারে, ‘প্রক্রিয়াটির শেষ প্রাপক ছিল আখতারের নেতৃতে (তৎকালীন) পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ (আইএসআই)।’
এদিকে, নিউইয়র্ক টাইম্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতাকারী বেশ কয়েকটি দেশের সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং তাদের সন্তানদের অর্থও ক্রেডিট সুইসে জমা ছিল। পত্রিকাটির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে জেনারেল আখতার আবদুর রহমান খান সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের মুজাহিদীনদের লড়াইকে সমর্থন করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের কাছ থেকে শত শত কোটি নগদ ডলার এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করেছেন।’
সুডয়চে সায়টুঙ অনুসারে, জেনারেল আখতারের তিন ছেলের নামে ১৯৮৫ সালে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল, যদিও জেনারেল কখনও সাহায্যের অর্থ চুরির অভিযোগের মুখোমুখি হননি। ফাঁস হওয়া নথি বলছে, ‘অ্যাকাউন্টটিতে ৩৭ লাখ ডলার রয়েছে।’ একটি ওসিসিআরপি’র প্রতিবেদন আরো সুনির্দিষ্ট করে দাবি করেছে, ‘১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি আখতার আফগান জিহাদীদের হাতে সিআইএ নগদ পৌঁছে দিতে পারদর্শী ছিলেন। এ সময়েই তার তিন ছেলের নামে ক্রেডিট সুইস অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।’
ওসিসিআরপি-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্রেডিট সুইস-এ আখতার পরিবারের দুটি অ্যাকাউন্টের মধ্যে একটি আখতারের তিন ছেলের যৌথ, যা ১৯৮৫ সালের ১ জুলাই খোলা হয়েছিল। সেই বছরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান মুজাহিদদের উদ্দেশ পাঠানো অর্থের গন্তব্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ২০০৩ সালে এই অ্যাকাউন্টের মূল্য ছিল কমপক্ষে পাঁচ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক (তৎকালীন ৩৭ লাখ ডলার)। ১৯৮৬ সালের জানুয়ারিতে খোলা দ্বিতীয় একটি অ্যাকাউন্টে ২০১০ সালের নভেম্বর নাগাদ ৯ মিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্কেরও বেশি অর্থ ছিল (তৎকালীন ৯২ লাখ ডলার)।
ওসিসিআরপি’র নথিতে মাদক পাচার, অর্থ পাচার এবং দুর্নীতিতে কুখ্যাত সুইস ব্যঙ্ক গ্রাহকদের গোপন সম্পদের তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের তথাকথিত পানামা পেপারস, ২০১৭ সালের প্যারাডাইস পেপারস এবং গত বছরের প্যান্ডোরা পেপারস অনুসরণ করে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে ফাঁস হওয়ার তালিকায় ব্যক্তিদের তালিকায় জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এবং সাবেক মিসরীয় শক্তিশালী নেতা হোসনি মুবারকের দুই ছেলে এবং ভেনেজুয়েলার কর্মকর্তাদের দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে।
এছাড়া, তথ্যগুলোতে ঘুষের অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হংকংয়ের একজন শেয়ার ব্যবসায়ী, ফিলিপিনো প্রেমিকাকে হত্যার নির্দেশ দেয়া এক বিজনেস টাইকুন, একজন ফিলিপিনো মানব পাচারকারী এবং মিসর থেকে ইউক্রেন পর্যন্ত বিস্তৃত অসাধু রাজনীতিবিদদের নাম রয়েছে। এছাড়াও এতে একটি ভ্যাটিকান-মালিকানাধীন অ্যাকাউন্টের তথ্য রয়েছে, যা লন্ডনে একটি কথিত প্রতারণামূলক প্রকল্পের নামে ৩৫ কোটি ডলার হাতিয়ে নিতে ব্যবহৃত হয়েছিল। এটি একজন কার্ডিনালসহ বেশ কয়েকজন অভিযুক্তকে ফৌজদারি বিচারের মুখাপেক্ষি করেছে।
ওসিসিআরপি’র পাওয়া তথ্য থেকে আরো জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে ১৫ জন গোয়েন্দা ব্যক্তিত্ব বা তাদের ঘনিষ্ঠ পরিবারিবারিক সদস্যদের ক্রেডিট সুইস-এ অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এ প্রসঙ্গে ক্রেডিট সুইস বলেছে যে, সুইজারল্যান্ডের কঠোর গোপনীয়তার আইন এটিকে তার গ্রাহকদের সম্পর্কে অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করার অনুমতি দেয় না। তবে একটি বিবৃতিতে এটি ‘ব্যাঙ্কের কথিত ব্যবসায়িক অনুশীলন সম্পর্কে অভিযোগ এবং অনুমান’কে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। সূত্র : ডন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।