মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেন সীমান্ত থেকে আরো সেনা ও ট্যাংক সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। তবে ন্যাটোর দাবি, মস্কো এখনো সাবেক সোভিয়েত দেশটি ঘিরে সেনা সমাবেশ বাড়াচ্ছে এবং সঙ্কট সমাধানে সমঝোতার কোনো ইচ্ছা নেই রাশিয়ার। গত বুধবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের কাছাকাছি দক্ষিণ ও পশ্চিম সামরিক জেলায় মহড়া শেষ হওয়ায় তাদের আরো সেনা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রমাণস্বরূপ তারা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যাতে দেখা যায়, বেশ কিছু ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি ইউনিট ক্রিমিয়া থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে এক জ্যেষ্ঠ পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তা দাবি করেছেন, রাশিয়ার চূড়ান্ত সামরিক মহড়া এখনো চলছে এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রুশ আগ্রাসনের ঝুঁকি ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে থাকবে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, সামরিক উত্তেজনা কমার এখন পর্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য কোনো সঙ্কেত নেই। রাশিয়া কোনো ধরনের সতর্কবার্তা দেয়া ছাড়াই যেকোনো সময় ইউক্রে আক্রমণ করতে পারে।
এদিকে, ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, সেনা প্রত্যাহারকে তারা স্বাগত জানাবেন। তবে সেনা ও ট্যাংকের নড়াচড়া মানেই এমনটি ঘটছে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি বলেন, আমরা কোনো রুশ সেনা প্রত্যাহার দেখিনি। আমরা যা দেখছি তা হলো, তারা সৈন্য সংখ্যা বাড়িয়েছে এবং আরও সেনা সেই পথে রয়েছে। সুতরাং, এখন পর্যন্ত কোনো উত্তেজনা কমেনি।
ক্রেমলিন অবশ্য বলছে, ন্যাটোর এই মূল্যায়ন পুরোপুরি ভুল। আয়ারল্যান্ডে নিযুক্ত মস্কোর রাষ্ট্রদূত বলেছেন, পশ্চিম রাশিয়ার সেনারা আগামী তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে যাবেন। রাশিয়া বরাবরই বলে আসছে, তাদের ইউক্রেন আক্রমণের কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে সাবেক সোভিয়েত দেশটির পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগদান ঠেকাতে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে মস্কো। এর আগে, কয়েক সপ্তাহের টানটান উত্তেজনার পর মঙ্গলবার ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয় রাশিয়া। এর মাধ্যমে পশ্চিমাদের সতর্কবার্তা মিথ্যা প্রমাণিত এবং একটি গুলি না ছুড়েও তাদের চরম লজ্জা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে মস্কো।
ইউক্রেনের সরকারি বাহিনী রুশপন্থী বিদ্রোহী যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। কামানের গোলা, গ্রেনেড এবং মেশিনগান ব্যবহার করে চার দফায় রুশপন্থি যোদ্ধাদের ওপর এই হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে তারা। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। পূর্বাঞ্চলীয় ইউক্রেনের রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় তাদের ভূখণ্ডের ওপর মোট চার দফায় হামলা করেছে ইউক্রেনের সরকার। স্ব-ঘোষিত লুহানস্ক পিপল’স রিপাবলিকের প্রতিনিধিদের ইস্যু করা একটি বিবৃতিতে এই দাবি করা হয়।
এদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এই অভিযোগের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইউক্রে। এছাড়া ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বিষয়ক সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর দ্য সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)-র পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ওএসসিই মূলত পূর্ব ইউরোপের পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে থাকে। তবে সম্প্রতি বেশ কিছু পর্যবেক্ষককে তারা ওই অঞ্চল থেকে সরিয়ে নিয়েছে।
এক জ্বালাময়ী বিবৃতিতে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বারবার যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কর্মকর্তাদের রীতিমতো তুলোধুনো করেছেন। তিনি বলেছেন, ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে, ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমা যুদ্ধ প্রোপাগান্ডা ব্যর্থ হয়েছিল। রুশ এ কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, রাশিয়া একটি গুলি না ছুড়েও পশ্চিমাদের লজ্জা দিয়েছে ও ধ্বংস করে দিয়েছে।
রুশ কর্মকর্তাদের এ ঘোষণার আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় দেশগুলো বারবার সতর্কবার্তা দিয়েছে, রাশিয়া যেকোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। গত শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে অজ্ঞাত কর্মকর্তাদের বরাতে দাবি করা হয়েছিল, মঙ্গলবারের মধ্যেই ইউক্রে আক্রমণ করতে পারে রুশ সেনারা।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভানও চলতি সপ্তাহ বলেছেন, তাদের সূত্র ও গোয়েন্দা তথ্যের হিসাব মোতাবেক, রাশিয়ার বিশাল সামরিক অভিযান যেকোনো দিন শুরু হতে পারে। আর তা শীতকালীন অলিম্পিক শেষ হওয়ার আগেই ঘটবে বলে দাবি করেছিলেন তিনি। রাশিয়া মূলত কিয়েভ-ন্যাটো বন্ধুত্বে নিরাপত্তা আশঙ্কার কথা জানিয়ে ইউক্রেন সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ বাড়িয়েছে। ইউক্রেন এখনো ন্যাটোর সদস্য নয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা এই সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে। ন্যাটোর পক্ষ থেকেও কিয়েভকে বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছে। ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে পশ্চিমা সেনারা রাশিয়া সীমান্তের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে মস্কোর।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের দাবি, পশ্চিমা জোটের সঙ্গে ইউক্রেনের ঘনিষ্ঠতা বাড়লে দেশটি ন্যাটো ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাঁটি হয়ে উঠতে পারে, যা হবে রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। এটি ঠেকাতে ইউক্রে সীমান্তে এক লাখের বেশি সৈন্যসহ ভারী সমরাস্ত্র মোতায়েন করে মস্কো। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত কিয়েভের রাষ্ট্রদূত ভাদিম প্রিস্টাইকো কাছে গত সোমবার জানতে চাওয়া হয়েছিল, ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার ইচ্ছা থেকে কিয়েভের সরে আসার কোনো সম্ভাবনা রয়েছে কিনা।
জবাবে তিনি বিবিসি ইউক্রেনকে বলেন, যেভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে ও সেদিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তাতে আমরা সরে আসতেও পারি। প্রিস্টাইকোর এ মন্তব্যের পরের দিনই ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় রাশিয়া। সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।