মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বয়স ৪৯ বছর। আমেরিকান অভিনেতা মার্ক সিনক্লেয়ারের সঙ্গে মুখাবয়বের আশ্চর্য সাদৃশ্য। মার্ক সিনক্লেয়ার, যাকে সারা বিশ্ব চেনে ভিন ডিজেল নামে। তবে যোগী আদিত্যনাথের চেয়ে তিনি বছর পাঁচেকের বড়। উচ্চতাও খানিক বেশি।
ভিন ডিজেল ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিরিজের ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রসিদ্ধ। আর যোগী উত্তরপ্রদেশে প্রসিদ্ধ তাঁর ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ কর্মপদ্ধতির জন্য। গত পাঁচ বছরে উত্তরপ্রদেশের মুণ্ডিতমস্তক, গেরুয়াধারী এবং দু’কানে সোনার স্বাস্থ্যবান দুল পরিহিত মুখ্যমন্ত্রী যা যা করেছেন, সেই কর্মপদ্ধতিকে ‘দ্রুত এবং ক্রুদ্ধ’ বলা যায় কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, ‘অ্যান্টি রোমিও স্কোয়াড’ বা ১০০ জন পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ড করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত হেলাফেলায় নিয়েছেন আদিত্যনাথ।
পূর্বাশ্রমের নাম অজয় মোহন বিস্ত। বাবা ছিলেন ফরেস্ট রেঞ্জার। চার ভাই, তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান অজয় অঙ্কশাস্ত্র নিয়ে লেখাপড়া করেছেন। ১৯৯০ সালে রামমন্দির আন্দোলনের সময় ঘর ছাড়েন। তার পর থেকে তার আধ্যাত্মিক গুরু গোরক্ষপুরের গোরক্ষনাথ মঠের অধ্যক্ষ মহন্ত অবৈদ্যনাথ। যার তিরোধানের পর যোগীই ‘মঠাধীশ’ হয়েছিলেন। সেখান থেকে সটান ঝাঁপ রাজনীতিতে। দ্বাদশ লোকসভায় যখন গোরক্ষপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন আদিত্যনাথ, তখন তার বয়স মাত্রই ২৬ বছর। বস্তুত, দ্বাদশ লোকসভায় তিনিই ছিলেন কনিষ্ঠতম সাংসদ। পর পর পাঁচবার গোরক্ষপুর থেকে জিতেছিলেন।
লোকসভার তথ্য বলছে, সেখানে আদিত্যনাথের উপস্থিতির হার ৭৭ শতাংশ। ২৮৪টি প্রশ্ন করেছেন। ৫৬টি বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু সে সব তো সংসদের তথ্যে নথিবদ্ধ থাকবে। আদিত্যনাথের আসল উত্থান পূর্ব উত্তরপ্রদেশে ‘হিন্দু যুব বাহিনী’র সওয়ার হয়ে। সেই ডাকাবুকো এবং ডোন্ট কেয়ার বাহিনীকে নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। থানা-পুলিশও হয়েছে। কিন্তু হিন্দুত্ব প্রতিষ্ঠার ‘চ্যাম্পিয়ন’ আদিত্যনাথের সেই বাহিনীকে রোখা যায়নি। তারা লোকের হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিল। সেই বাহিনীই জন্ম দিয়েছিল সংগঠক আদিত্যনাথের। জন্ম দিয়েছিল এক তারকা বক্তারও। যা তাকে কালক্রমে লোকসভা এবং শেষমেশ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে পৌঁছে দিয়েছে।
তার মধ্যেই আদিত্যনাথের কেরিয়ার ছুঁয়ে গিয়েছে তার ‘কট্টর হিন্দুত্ব’-এর লাইন নিয়ে বিজেপি-র সঙ্গে অবনিবনা, তার জেরে ভোটে বিজেপি-র বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করানোর মতো ঘটনাও। কিন্তু হিন্দু যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে যোগীর জনপ্রিয়তা, খরখরে গলায় তার জ্বালাময়ী ভাষণ তাকে গিলতে বাধ্য করেছিল বিজেপি-কে। ২০১৭ সালে বিপুল আসন নিয়ে বিজেপি উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতায় আসার পর বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যোগীকে মুখ্যমন্ত্রী করায় একটা বিস্ময় যে তৈরি হয়নি, এমন নয়। কিন্তু যোগীর ব্যক্তিগত সততা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ছিল না (এখনও নেই)। পাঁচ বছরের শাসনকালে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আমলাদের কাজকর্মে স্বাধীনতা দিয়েছেন বলেই শোনা যায়। অন্তত পশ্চিমবঙ্গের এক প্রবীণ আমলার লখনউয়ে কর্মরত ব্যাচমেটের কথা বিশ্বাস করতে হলে।
কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে দেশের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্যের (২০১২ সালে লোকসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ২০ কোটি) বিধানসভা ভোটে সেই যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রীর ‘ঘোষিত মুখ’ নন। গত বারও ছিলেন না। মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে আগুয়ান একাধিক সতীর্থকে রুখে দিয়ে লখনউয়ের কালিদাস মার্গের বাসিন্দা হন আদিত্যনাথ। কথিত যে, স্বয়ং নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ইঙ্গিত পেয়ে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে গিয়ে পুজা দিয়ে এসেছিলেন মনোজ সিংহ। কিন্তু পরে দেখা যায়, ‘বিশ্বনাথ’-এর থেকে ‘গোরক্ষনাথ’ অনেক বেশি জাগ্রত। আদিত্যনাথকেই ‘গিলতে’ বাধ্য হয়েছিলেন মোদী। মনোজ এখন জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর।
আরও একজনের নাম প্রবল ভাবেই সামনে ছিল। তিনি কেশব প্রসাদ মৌর্য। যোগী আদিত্যনাথের উপমুখ্যমন্ত্রী হন শেষ পর্যন্ত। আদিত্যনাথ তার শাসনকালের পাঁচ বছর নানা বিতর্কে দীর্ণ থেকেছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত স্তরে আদিত্যনাথের সততা নিয়ে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। তবু আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশে এ বার মুখ্যমন্ত্রীর ‘ঘোষিত’ মুখ নন। ভোটের উত্তরপ্রদেশে এটা যেমন এক নম্বর প্রশ্ন যে, বিজেপি ক্ষমতা থেকে চলে যাবে না থাকবে, তেমনই প্রশ্ন হল— যোগী আদিত্যনাথ থাকবেন না যাবেন? লোকে বলবে, এ আবার কেমন প্রশ্ন! বিজেপি থাকলে আদিত্যনাথ থাকবেন। বিজেপি না-থাকলে আদিত্যনাথ থাকবেন না। এ তো সহজ বিষয়। এবং মোটেই সহজ নয়।
বিজেপি উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় না ফিরলে আদিত্যনাথ লখনউয়ের তখ্তে ফিরবেন না, এটা তো সহজই। কিন্তু মোচড়টা হল, বিজেপি ক্ষমতায় ফিরলেও আদিত্যনাথ না-ও ফিরতে পারেন। এর কারণ হিসেবে মোটামুটি তিনটি কথা শোনা যাচ্ছে। প্রথমত, আদিত্যনাথের উপর ইদানীং বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব খুব সন্তুষ্ট নন। কারণ, আদিত্যনাথের কারণে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ উত্তরপ্রদেশে প্রচুর সমস্যায় পড়েছেন। রাজ্যের ক্ষমতায় ফিরলেও আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হলে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের আগে আগামী দু’বছর উত্তরপ্রদেশে আদিত্যনাথ আরও বড় ‘বোঝা’ হয়ে উঠতে পারেন। দ্বিতীয়ত, আদিত্যনাথ তাঁর পাঁচ বছরের শাসনকালে দলিতদের দূরে সরিয়ে দিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের জনতার একাংশ প্রকাশ্যেই বলতে শুরু করেছে যে, এটা ঠাকুরদের সরকার হয়ে গিয়েছে। এ বার ‘ঠাকুররাজ’ হটাতে হবে। তৃতীয়ত, যোগী যে ঠাকুর এবং ক্ষত্রিয়দের পছন্দ করেন, তা তিনি খোলাখুলিই বলেন। যে কারণে যোগীকে সমাজে একটা বড় অংশ অপছন্দও করে। সেই কারণেই, বিজেপি ফিরলেও আদিত্যনাথ ফিরবেন এমনটা নাকি এখনই বলে দেওয়া যাচ্ছে না। সূত্র: এবিপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।