পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা অতিমারির ধকল কাটিয়ে না উঠতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটে দেশের সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস দেখা দিয়েছে। খোলা বাজারে ডলারের মূল্য সেঞ্চুরি বা একশত টাকা অতিক্রমের মধ্য দিয়ে সর্বকালের রেকর্ড ভেঙ্গেছে। আস্বাভাবিক আমদানি ব্যয় এবং খোলাবাজারে ডলারের চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ডলারের রিজার্ভ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। এতদিন আমরা রির্জাভের ক্রমবর্ধন রেকর্ড অতিক্রম নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অনেক উচ্ছ্বসিত বক্তব্য শুনলেও এখন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা হতাশা ও আশঙ্কার কথাই তুলে ধরেছেন। তারই প্রেক্ষাপটে আমদানি ব্যয় ও ডলারের চাহিদায় লাগাম টানতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি বন্ধ করতে এলসি মার্জিন বাড়িয়ে দেয়া হলেও এ ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। তবে কম প্রয়োজনীয় প্রকল্পের বাস্তবায়ন স্থগিত রেখে এবং সরকারি আমলাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফরসহ অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সঙ্কোচনের সরকারি নীতি ও সিদ্ধান্তটি খুবই সময়োপযোগী ও কার্যকর বলে বিবেচিত হতে পারে। দেশ থেকে প্রতিমাসে হাজার হাজার কোটি টাকা ডলারে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই পাচারের সাথে মন্ত্রী-এমপি ও ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরকারি আমলার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে জানা যায়। শত শত সরকারি আমলা নানা ছুঁেতায় বিদেশ যাত্রার সময় বৈধ-অবৈধ নানা উপায়ে কোটি কোটি ডলার নিয়ে যায়। বিদেশে অর্থ পাচারকারিরা পণ্য আমদানির নামে মিথ্যা ইনভয়েসিং ডকুমেন্ট পাচারের অন্যতম পন্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে দেশবাসিকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকার যখন আমদানি ব্যয় কমিয়ে এবং সর্বক্ষেত্রে মিতব্যয়িতা অবলম্বনের মধ্য দিয়ে রির্জাভের উপর চাপ কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছে, ঠিক তখনি খোলা বাজারে ডলারের মূল্য একশত টাকার উপরে উঠে গেছে। এ থেকেই বুঝা যাচ্ছে, একশ্রেণীর মানুষ বেপরোয়া হয়ে বেশি দামে ডলার কিনে বিদেশে পাচারের জন্য মুজদ করছে। চলতি অর্থবছরের বিগত ১০ মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৫১০ কোটি ডলার খোলা বাজারে বিক্রি করেও বাজার সামাল দেয়া যাচ্ছে না। পিকে হালদারের মত বড় বড় দুর্নীতিবাজ অর্থপাচারকারিদের পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে। সেই সাথে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ১০-১৫ টাকা বেশি দামে খোলা বাজার থেকে ডলার কিনে কারা মজুদ করছে তাদেরকেও অনুসন্ধান করে বের করতে হবে। বিদেশ ভ্রমণের প্রক্রিয়ায় থাকা আমলাদের অনেকে ডলার মজুদ করে রাখতে পারেন বলে পর্যবেক্ষকরা ধারণা করেন। তাদের প্রতিও নজর দেয়া দরকার। মোট কথা, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় জমানো ডলার উদ্ধার করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে বিশেষ অভিযান পরিচালনার কথাও ভাবতে হবে। সেই সাথে বিলাসী ও বিদেশে পণ্যের উপর নির্ভরশীলতা বা চাহিদা কমিয়ে আনার পাশাপাশি ভোগ্য পণ্যের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতা অবলম্বনের মাধ্যমে আমদানি ব্যয় ও বাজারের উপর চাপ কমিয়ে আনা সম্ভব।
জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে দেয়া ভার্চুয়াল বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের দেশে দেশে খাদ্যপণ্য, ভোজ্যতেল ও পেট্টোলিয়ামের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরেন। কোথাও কোথাও মানুষকে একবেলা খাবার গ্রহণ করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে বলেও প্রধানমন্ত্রী জানান। এহেন বাস্তবতায় আমাদের দেশের বিত্তশালীদের বিলাসী পণ্য ব্যবহার বর্জনের পাশাপাশি নিত্যপণ্য, বিদ্যুত, জ্বালানি ও ভোগ্যপণ্যের ব্যবহারে মিতব্যয়িতা অবলম্বনের পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর একটি সময়োপযোগী ও রাষ্ট্রনায়কোচিত নির্দেশনা হিসেবে গণ্য হতে পারে। তবে সরকার প্রধানের এই পরামর্শ প্রথমেই সরকারি সেক্টরগুলোতে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু নির্দেশনা বা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকলেই হবে না, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও কঠোর নজরদারি ও মিতব্যয়িতা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে দুর্নীতি, অপচয় ও অস্বচ্ছতা দূর করার মাধ্যমে ভর্তুকি কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষত রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রের নামে কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠিকে অর্থনৈতিক সুবিধা দিয়ে দেশের কোটি কোটি মানুষের উপর বাড়তি ব্যয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়ার ধারা বন্ধ করতে হবে। অব্যাহত গতিতে পণ্যমূল্য বাড়লেও মানুষের আয় বাড়ছে না। এহেন বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে গ্যাস-বিদ্যুত ও পানির মত নাগরিক পরিষেবায় মূল্যবৃদ্ধির যে কোনো উদ্যোগ থেকে বিরত থাকতে হবে। সর্বস্তরে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং মিতব্যয়িতার অনুসরণের পাশাপাশি কৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, সিন্ডিকেটেড মূল্য কারসাজি বন্ধ এবং বিনিয়োগও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি ও সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সঙ্কট উত্তরণ করা অসম্ভব নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।