পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রফতানি আয়ের তুলনায় আমদানি ব্যয় ও সরকারি খরচ বেড়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় বড় ধরণের টান পড়তে শুরু করেছে। প্রবাসিদের রেমিটেন্স এবং গার্মেন্ট রফতানি আয় বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে গত কয়েক মাসে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ বেড়ে চলেছে। বিষয়টা এখনো তেমন উদ্বেগজনক না হলেও এ অবস্থার লাগাম টানতে না পারলে আগামী দিনগুলোতে দেশের অর্থনীতি বড় ধরণের সংকটে পাড়তে পারে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এরই প্রেক্ষাপটে অপ্রয়োজনীয় আমদানি ব্যয় এবং সরকারি আমলাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ সফর নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে কয়েকবার এলসি মার্জিন বাড়িয়েও বিলাসী পণ্যের আমদানি কমানো সম্ভব হয়নি। এবার কিছু পণ্যে ৭৫ভাগ এলসি মার্জিন ঘোষণা করা হয়েছে। শুধুমাত্র এলসি মার্জিন বাড়িয়ে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে, নানা উপলক্ষে মন্ত্রী, আমলা ও বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের পেছনে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ের ঘটনা মাঝে মাঝেই গণমাধ্যমে উঠে আসতে দেখা যায়। যেখানে স্কুলের অভাবে ও প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে দেশের অনেক অঞ্চলে শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেখানে স্কুলে মিড-ডে মিলের খিচুৃড়ি রান্না, পুকুর পুন:খনন কিম্বা ঘাসচাষের পদ্ধতি শিখতে বিশাল বহরে আমলাদের বিদেশ যাওয়ার খবর সাধারণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯(জুন-মার্চ) মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বাণিজ্য ঘাটতি বা ভারসাম্যহীনতার তথ্য জানা যায়। ডলারের অঙ্কে এর পরিমান ১৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। গত অর্থবছরের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে ডলারের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করলেও চলতি অর্থবছরে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় মার্চ মাসে তা ৪৪ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি, অপ্রয়োজনীয় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং আমলাদের বিদেশ সফরের পেছনে শত শত কোটি টাকা খরচ এবং অপ্রয়োজনীয় বা কমপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিয়ন্ত্রণে আরো অনেক আগেই লাগাম টানার দরকার ছিল। অনেক দেরিতে হলেও সরকারের এই সিদ্ধান্ত আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে ঘাটতি কমিয়ে আনতে ইতিবাচক ভ’মিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন আপাতত বন্ধ রেখে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও মূল্যস্ফীতির প্রভাব এড়ানোর এই সিদ্ধান্ত যথার্থ ও সময়োপযোগী। অপ্রয়োজনীয় আমদানির পাশাপাশি মিথ্যা এলসি ও জালিয়াতির মাধ্যমে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। সে সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে জ্বালানি তেল সরবরাহে ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধির প্রভার পড়েছে বিশ্বঅর্থনীতিতে। এ যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে ইতিমধ্যেই জ্বালানি ও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি বিগত ৫০ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে বলে জানা যায়। করোনাকালীন বাস্তবতায় দেশের কোটি কোটি মানুষের আয় কমে গেছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ কৃচ্ছতা ও সংকোচনমূলক অর্থনীতি অনুসরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় অগ্রসরমান অর্থনীতির দেশ শ্রীলঙ্কা এখন চরম রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে। এ অবস্থা হঠাৎ করেই শুরু হয়নি। অপরিনামদর্শী উন্নয়ন প্রকল্প ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের খেসারত দিচ্ছে শ্রীলঙ্কার সরকার এবং জনগণ। আমাদেরকে এখনই সতর্ক হতে হবে। প্রেট্রোলিয়ামসহ শিল্পখাতের কাচামাল ও উৎপাদন ব্যবস্থায় পুরোপুরি আমদানিনির্ভর হওয়ায় আমাদেরকেও আমদানির্ভরতা কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা বেড়ে গিয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমলেও কিছু সংখ্যক মানুষের আয় ও বিলাসিতা বেড়ে গেছে। মূলত তাদের জন্যই বিলাসী পণ্যের আমদানির পেছনে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে যায়। দেশীয় ফললাদির উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশে অনেক বিদেশি ফলের উৎপাদনও বেড়ে চলেছে। খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি চাহিদার নিরিখে বিদেশি ফল আমদানির পেছনে বৈদেশিক মুদ্রায় হাজার হাজার কোটি টাকা খরচের প্রবণতা রোধ করা জরুরি। শুধু নির্দেশনা বা নীতিগত সিদ্ধান্ত দিলেই হবেনা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নজরদারি ও সিন্ডিকেটেড দুর্নীতি বন্ধে আরো কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।