Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সমকামিতায় বাধা দেওয়ায় তিনজনকে হত্যা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ২:০৪ পিএম

সমকামিতায় বাধা দেওয়ায় এক সপ্তাহে তিনজনকে হত্যা করে এক যুুবক।

জানা যায়, ঝিনাইদহের তেঁতুলতলা এম কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দা থেকে গত রোববার ইলিয়াস পাটোয়ারী নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন রাতে তাকে হত্যা করা হয়।

পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে তার মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার ঠিক তিন দিন পর আরও একটি লাশের সন্ধান পায় পুলিশ। গত বুধবার লাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিঁড়ির নিচ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

তবে এই মৃতদেহটি কার তা শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় লাশ হিসেবে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে। অজ্ঞাতপরিচয় এই ব্যক্তিকেও মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়।

সব শেষে গত বৃহস্পতিবার উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামে বিবিজান বেগম (৪৫) নামের এক নারীকে হত্যা করা হয়। তাকে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ইয়াদ আলী নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে র‍্যাবের হাতে দেয় স্থানীয়রা।

আটক ইয়াদ আলী জানান, ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় বিবিজানকে হত্যা করেন তিনি। ইয়াদ আলী নড়াইল জেলার ডুমুরতলা গ্রামের চান মোল্লার ছেলে।

বিবিজান হত্যার ঘটনায় তার ছেলে আবু জাফর মামলা করলে র‌্যাব ইয়াদ আলীকে পুলিশে সোপর্দ করে। এরপর মামলার তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে পুলিশ বিবিজানকে হত্যার সত্যতা পায়।

তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায়- গত এক সপ্তাহে উদ্ধার হওয়া অন্য দুটি লাশের শরীরে একই ধরনের আঘাতের চিহ্ন। এতে সন্দেহ হলে ওই দুই হত্যার সঙ্গে জড়িত কি না, এ সম্পর্কে ইয়াদকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ।

একপর্যায়ে তিনি পুলিশের কাছে ইলিয়াস পাটোয়ারী এবং অজ্ঞাতপরিচয় ওই ব্যক্তিকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। একই সঙ্গে প্রত্যেককে বিকৃত যৌনাচারে (সমকামীতা) বাধা দেওয়ায় হত্যা করা হয়েছে বলে জানান ইয়াদ।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবুল বাশার জানান, বিবিজান বেগম নামের ওই নারীকে হত্যার পর আঘাতের ধরন দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। এর আগে ৬ জানুয়ারি তেঁতুলতলার স্কুলে এবং ৯ জানুয়ারি লাউদিয়ার একটি স্কুল থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়। তাদেরও মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা ইয়াদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি ওই দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেন।

ইয়াদ আলীর বরাত দিয়ে ঘটনার বর্ণনায় আবুল বাশার বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে এমকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় ইলিয়াস পাটোয়ারীর সঙ্গে বিকৃত যৌনাচারে (সমকামিতা) লিপ্ত হওয়ার চেষ্টা করেন ইয়াদ। চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে টিউবওয়েলের হাতল দিয়ে মাথায় আঘাতের পর আঘাত করে হত্যা করেন চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার নুরপুর গ্রামের বৃদ্ধ ইলিয়াসকে।

এর আগে ৩ ফেব্রুয়ারি লাউদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় ঘুমিয়ে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির সঙ্গেও ইয়াদ বিকৃত যৌনাচারের চেষ্টা করেন। সেখানেও ব্যর্থ হয়ে তাকে লাঠি দিয়ে মাথায় আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যান। সেই লাশ উদ্ধার হয় ৯ ফেব্রুয়ারি। সব শেষে ধর্ষণে বাধা দেওয়ায় বিবিজানকে হত্যা করেন ইয়াদ।

তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করে এবং তার হত্যার বর্ণনা দেখে এটা নিশ্চিত হয়েছি, বিকৃত যৌনাচার ও ধর্ষণে বাধা দেওয়ার কারণে ইয়াদ আলী এই তিনজনকে হত্যা করেছে।

ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সোহেল রানা জানান, তিনটি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দুটিতে হত্যা মামলা ও একটিতে অপমৃত্যু মামলা হয়েছিল। এখন সবগুলোই হত্যা মামলা হবে। আদালত থেকে আসামিকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আমরা জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছি। ইয়াদ আলী আরও কোনো হত্যার সঙ্গে জড়িত কি না তা জানার জন্য।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সমকামিতা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ