বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
সমকামিতার মতো জঘন্য অপরাধের জন্য আল্লাহ তায়ালা কওমে লূতকে পৃথিবী থেকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন। হযরত লূত (আ.) যখন তাদের এই পাপকর্ম থেকে ফিরে আসার দাওয়াত দিচ্ছিলেন, আযাবের ভয় দেখাচ্ছিলেন, তার বিপরীতে তারা তাদের পাপের মধ্যে এতই নিমজ্জিত ছিল যে, হঠকারী ও নির্লজ্জের মতো তারা জবাব দেয়, তুমি আল্লাহর যে আযাবের ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে আস দেখি? কিন্তু কোনো নবীই চান না তার উম্মত ধ্বংস হয়ে যাক। তাই তিনি ধৈর্য ধরতে থাকেন ও উপদেশ দিতে থাকেন। কিন্তু তারা এসব কথায় কর্ণপাত না করে হযরত লূত (আ.)-কে শহর থেকে বের হয়ে করে দেয়ার হুমকি দেয়।
হযরত লূত (আ.) তখন বিফল মনোরথে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : সে বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে সাহায্য করুন ফাসাদ সৃষ্টিকারী কওমের বিরুদ্ধে’। (সূরা আনকাবুত : ৩০)। এই দোয়ার ফলস্বরূপ আল্লাহর গজব নেমে আসে। কোরআনের ভাষায় : আর অবশ্যই আমার ফেরেশতারা সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের কাছে এলো, তারা বলল, ‘সালাম’। সেও বলল, ‘সালাম’। বিলম্ব না করে সে একটি ভুনা গো-বাছুর নিয়ে এলো। অতঃপর যখন সে দেখতে পেল, তাদের হাত এর প্রতি পৌঁছছে না, তখন তাদের অস্বাভাবিক মনে করল এবং সে তাদের থেকে ভীতি অনুভব করল। তারা বলল, ‘ভয় করো না, নিশ্চয়ই আমরা লূতের কওমের কাছে প্রেরিত হয়েছি’। (সূরা হুদ : ৬৯-৭০)।
ফেরেশতাদের খাবার না খেয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে দেখে হযরত ইবরাহীম (আ.) ভয় পেয়ে গেলেন। তা দেখে ফেরেশতারা নিজেদের পরিচয় দিলে হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর ভয় দূর হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন : আর আমার ফেরেশতারা যখন ইবরাহীমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল তখন তারা বলেছিল, নিশ্চয়ই আমরা এ জনপদের অধিবাসীদের ধ্বংস করব, নিশ্চয়ই এর অধিবাসীরা যালিম। ইবরাহীম বলল, নিশ্চয়ই সেখানে লূত আছে। তারা বলল, আমরা ভালোই জানি সেখানে কারা আছে, আমরা অবশ্যই তাকে ও তার পরিবারকে রক্ষা করব; তবে তার স্ত্রীকে নয়, সে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত। (সূরা আনকাবুত : ৩১-৩২)।
ফেরেশতাগণ যখন কওমে লূত তথা সামুদ জাতিকে শাস্তি দেয়ার চ‚ড়ান্ত পয়গাম নিয়ে উপস্থিত হন, তখন ফেরেশতারা হযরত লূত (আ.)-কে তার স্ত্রী ব্যতীত পরিবারবর্গ নিয়ে রাত শেষ হওয়ার আগেই পাপিষ্ট জনপদ ত্যাগ করতে বলেন। ইরশাদ হয়েছে : তারা বলল, ‘হে লূত, আমরা তোমার রবের প্রেরিত ফেরেশতা, তারা কখনো তোমার কাছে পৌঁছতে পারবে না। সুতরাং তুমি তোমার পরিবার নিয়ে রাতের কোনো এক অংশে রওনা হও, আর তোমাদের কেউ পিছে তাকাবে না। তবে তোমার স্ত্রী (রওনা হবে না), কেননা তাকে তা-ই আক্রান্ত করবে যা তাদের আক্রান্ত করবে। নিশ্চয়ই তাদের (আযাবের) নির্ধারিত সময় হচ্ছে সকাল। সকাল কি নিকটে নয়’? (সূরা হুদ : ৮১)।
হযরত লূত (আ.) এবং তার সাথীরা যখন নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছান, হযরত জিবরাঈল তখন আল্লাহর নির্দেশে সুবহে সাদিকের সময় ভয়ঙ্কর নিনাদের মাধ্যমে উক্ত জনপদ উপরে উঠিয়ে উপুড় করে ফেলে দেন। সাথে প্রবল ঘূর্ণি বেগে প্রস্তর বর্ষণ শুরু হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন : তারপর আমার নির্দেশ যখন এসে গেল, তখন আমি সেই জনপদকে উপর-নিচ করে উল্টে দিলাম, আর তাদের উপর স্তরে স্তরে পাকানো মাটির প্রস্তর বর্ষণ করলাম। (সূরা হুদ : ৮২)।
এই সম্প্রদায়ের জন্য এটাই ছিল সামঞ্জস্যশীল শাস্তি। তারা যেমনিভাবে স্ত্রীসঙ্গ বাদ দিয়ে মানুষের স্বভাববিরুদ্ধ যৌনকর্মে লিপ্ত হয়ে আল্লাহর আইন এবং প্রাকৃতিক বিধানকে উল্টিয়েছিল, ঠিক তেমনিভাবে তাদের জনপদকে উল্টে দিয়ে তাদের ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।