Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সমকামিতা : ইসলামি দৃষ্টিকোণ

আতিকুর রহমান নগরী | প্রকাশের সময় : ৪ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০৮ এএম

যৌন চাহিদা আছে গরু-ছাগলের, আছে কুকুর-বিড়ালেরও। তাই বলে আপনি কখনো ষাড় অন্য ষাড়ের সাথে যৌনক্ষুধা নিবারণ করছে। কুকুর-বিড়ালরাও কখনো সমান লিঙ্গের সাথে সেক্স শেয়ার করেনা। পৃথিবীতে যত জীব-জন্তু আছে তারা সবাই ‘কামত্তেজনা’ উঠলে বিপরীত লিঙ্গের দারস্থ হয়। এদিকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা শ্রেষ্টজীব মানুষ হয়ে যৌন চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে জানোয়ার থেকেও অধম হই কী করে? তাদেরকেই কোরআন বলছে ‘উলা- ইকা কাল আনআম বাল হুম আদ্বাল’। সমান সমান লিঙ্গধারীরা পরষ্পর এক-অন্যের সাথে যৌন চাহিদা মেটানোর নামই হচ্ছে homosexuality  বা সমাকামিতা।
ইসলামের সমকাম ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য অন্যায় । হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যাদেরকে তোমরা লুতের সম্প্রদায়ের কাজে (সমকামে) লিপ্ত দেখবে তাদের উভয়কেই হত্যা করো।’ (তিরমিজি: ৪/৫৭; আবু দাউদ: ৪/২৬৯; ইবনে মাজা: ২/৮৫৬)।
homosexuality বা সমকামিতাকে ইসলামে সম্পূর্ণ হারাম করে দিয়েছে। এবং স্বাভাবিক ব্যভিচারের চেয়েও খারাপ। লুত (আ) এর কওমকে (Sodom Avi Gomorrah নগরী) আল্লাহ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন যেসব কারণে এর মধ্যে সমকামিতা ছিল একটি। ‘এবং আমি লূতকে প্রেরণ করেছি। যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বললঃ তোমরা কি এমন অশ্লীল কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সারা বিশ্বের কেউ করেনি ? তোমরা তো কামবশতঃ পুরুষদের কাছে গমন কর নারীদেরকে ছেড়ে। বরং তোমরা সীমা অতিক্রম করেছ। (আরাফ ৭:৮১-৮২)
‘সারা জাহানের মানুষের মধ্যে তোমরাই কি পুরূষদের সাথে কুকর্ম কর? এবং তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের জন্য সঙ্গিনী হিসেবে যাদের সৃষ্টি করেছেন, তাদেরকে বর্জন কর? বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।’ (সূরা শুয়ারা ২৬:১৬৫-১৬৬) ‘স্মরণ কর লূতের কথা, তিনি তাঁর কওমকে বলেছিলেন, তোমরা কেন অশ্লীল কাজ করছ? অথচ এর পরিণতির কথা তোমরা অবগত আছ! তোমরা কি কামতৃপ্তির জন্য নারীদেরকে ছেড়ে পুরুষে উপগত হবে? তোমরা তো এক বর্বর সম্প্রদায়। উত্তরে তাঁর কওম শুধু এ কথাটিই বললো, লূত পরিবারকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। এরা তো এমন লোক যারা শুধু পাকপবিত্র সাজতে চায়। অতঃপর তাঁকে ও তাঁর পরিবারবর্গকে উদ্ধার করলাম তাঁর স্ত্রী ছাড়া। কেননা, তার জন্যে ধ্বংসপ্রাপ্তদের ভাগ্যই নির্ধারিত করেছিলাম। (কুরআন ২৭:৫৪-৫৭) ‘আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের কাছে আগমন করল, তখন তারা বলল, আমরা লুতের জনপদের অধিবাসীদেরকে ধ্বংস করব। নিশ্চয় এর অধিবাসীরা অপরাধী।’ (২৯:৩১) যে সমকামিতার অপরাধে একটি জাতিকে ধ্বংসের ভয়াল পরিণতি বরণ করতে হয়েছে সেই ঘৃণ্য কাজটিকেই ‘আধুনিকতা’ এবং ‘অধিকারের’ কথা বলে আবার ছড়িয়ে দিতে কিছু মস্তিষ্কবিকৃত মানুষের চেষ্টা চলছে অব্যাহতভাবে। দৈহিকভাবে মানুষ রেখে চেতনায় পশু বানিয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতা।
অভিশপ্ত সম্প্রদায় ‘কওমে লুত’ ধ্বংস হয়েছিল সমকামের অপরাধে। হজরত লুত (আ.)’র জাতি ছিল সমকামী। হজরত লুত তাদেরকে এহেন কাজ থেকে বিরত থাকার এবং হালাল পন্থায় নারীদের সঙ্গে তাদের যৌন চাহিদা পূরণ করার অনুরোধ করেছেন বারবার। কিন্তু কে শুনে লুতের কথা! হজরত লুত ব্যর্থ হলেন। এমতাবস্থায় তার ঘরে চারজন সুদর্শন যুবক মেহমান আসলো। মেহমানের আগমণের খবর পেয়ে সমকামে অভ্যস্ত লোকেরা মেহমানদের সঙ্গেই কুকর্ম করতে চাইল। হজরত লুত ভীত হলে যুবক চারজন তাঁকে বললেন, ‘হে লুত, আমরা
ফেরেশতা’। শুধু ইসলাম ধর্মগ্রন্থ কুরআনই নয়, পবিত্র বাইবেলেও সমকামিতা একরকমের
পাপ (আদি পুস্তক ১৯:১-১৩; লেবীয় ১৮:২২; রোমীয় ১:২৬-২৭; ১ করিন্থীয় ৬:৯) রোমীয় ১:২৬-২৭ পদ সুনির্দিষ্টভাবে শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়া এবং তাঁকে অস্বীকার করার ফলস্বরূপ সমকামিতার শাস্তি দেওয়া হয়েছে। লোকেরা যখন অবিশ্বাসের কারণে পাপ করতেই থাকে, তখন ঈশ্বর “লজ্জাপূর্ণ কামনার হাতে” তাদের ছেড়ে দেন যেন তারা আরও জঘন্য পাপে ডুবে যায় এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে থাকার ফলে নিস্ফল ও নৈরাশ্যের জীবন অনুভব করতে পারে। ১ করিন্থীয় ৬:৯ পদে বলা হয়েছে যে, যারা সমকামিতায় “দোষী”, তারা ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকার পাবে না। ঈশ্বর সমকামিতার মনোভাব দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করেন নাই। পবিত্র বাইবেল বলেছে, লোকেরা পাপের কারণে সমকামী হয় (রোমীয় ১:২৪-২৭) এবং এটা তাদের নিজেদের পাপপূর্ণ ইচ্ছার পরিণতি। যাইহোক, বাইবেল কিন্তু সমকামিতাকে অন্যান্য পাপের চেয়ে “বড়” বলে বর্ণনা করে নাই। করিন্থীয় ৬:৯-১০ পদে যে পাপগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সমকামিতা হচ্ছে সেগুলোর একটি, যা কিনা ঈশ্বরের রাজ্য থেকে একজনকে দূরে রাখে। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, ‘তোমরা যদি কাউকে পাও যে লুতের সম্প্রদায় যা করত তা করছে, তবে হত্যা কর যে করছে তাঁকে আর যাকে করা হচ্ছে তাকেও।’ (আবু দাউদ ৩৮:৪৪৪৭) হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেছেন, ‘আমি আমার কওমের জন্য সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা আশঙ্কা করি সেটা হল লুতের কওম যা করত সেটা যদি কেউ করে...’(তিরমিজি, ১৪৫৭)
পুরুষ যদি পুরুষেই যৌন চাহিদা পুরণ করতে পারে তাহলে নিশ্চই নারীর প্রতি তার টান কমে যাবে। আর এর ফল কোথায় দাঁড়াবে? পুরুষ যদি নারীর কাছে না যায় তাহলে মানুষের বংশবৃদ্ধির কী হবে? সমকামিতার ফলে যেমন এইডস মহামারি ছড়াবে তেমনি মানুষের স্বাভাবিক প্রজনন ব্যহত হবে নিশ্চিতভাবে। হুমকির মুখে পড়বে মানবসভ্যতা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সমকামিতা ইসলামি দৃষ্টিকোণ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ