মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মরিশাস সরকারের পাঠানো একটি নৌকা ভারত মহাসাগরের বিতর্কিত চাগোস দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে পৌঁছেছে। মরিশাসের সরকার ব্রিটেনকে 'মানবতাবিরোধী অপরাধের' দায়ে অভিযুক্ত করছে এবং আন্তর্জাতিক আইনের কাছে নতি স্বীকার করে চাগোস দ্বীপপুঞ্জ তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানাচ্ছে।
জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতও রায় দিয়েছে যে, এই দ্বীপে ব্রিটেনের দখলদারিত্ব 'অবৈধ,' কিন্তু তারপরও ব্রিটেন চাগোস দ্বীপপুঞ্জ মরিশাসের কাছে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। চাগোস দ্বীপপুঞ্জ থেকে বিবিসির আফ্রিকা সংবাদদাতা এন্ড্রু হার্ডিং এর রিপোর্ট:
অর্ধশতক বছর আগে ভারত মহাসাগরের গভীরে এক প্রত্যন্ত দ্বীপপুঞ্জ থেকে ব্রিটিশরা উচ্ছেদ করেছিল তাদের। ঝকঝকে পরিষ্কার এক দিনে, উষ্ণ বিকেলে তারা আবার সেখানে ফিরে এলেন। পা রাখলেন পেরস বানহস দ্বীপের তীরে, চুমু খেলেন বালিতে, কেঁদে ফেললেন খুশিতে। 'এটা একটা দারুণ মূহুর্ত,' বললেন অলিভিয়া ব্যানকোল্ট। ব্রিটিশ সরকারকে 'বর্ণবাদী' বলে তীব্র সমালোচনা করলেন তিনি চাগোসিয়ানদের এই দ্বীপপুঞ্জে ফিরতে না দেয়ার জন্য। "এটা আমাদের জন্মভূমি। ওরা কীভাবে আমাদের এই অধিকার অস্বীকার করে?"
তীরে নামার সঙ্গে সঙ্গেই মরিশাসের সরকারি কর্মকর্তারা সেখানে একটি পতাকার খুঁটি গাড়ার জন্য কংক্রিট ঢালতে শুরু করলেন। "এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কোন দেশ তার নিজের সীমানায় জাতীয় পতাকা ওড়ানোর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই," বললেন মরিশাসের প্রতিনিধিদলের নেতা জগদীশ কুনজাল। তিনি জাতিসংঘের বিভিন্ন শীর্ষ আদালতের একের পর এক রায়ের কথা উল্লেখ করছিলেন, যাতে এই দ্বীপের ওপর মরিশাসের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে, এবং ব্রিটেনকে তার 'অবৈধ' দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে বলা হয়েছে।
পঞ্চাশ বছর আগে এই দ্বীপের মানুষদের মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই সেখান থেকে চলে যেতে বলা হয়েছিল। তারপর থেকে দ্বীপটি যে অবহেলার শিকার, তার চিহ্ণ ছড়িয়ে আছে একটি মরচে ধরা রেললাইন, ভাঙ্গাচোরা বাড়িঘর আর কংক্রিটের এক ঘাটের ধ্বংসাবশেষে। পুরোনো চার্চটির চারপাশে ঘন বাগান। ৬৮ বছর বয়স্ক লিসবি এলিসকে এই চার্চেই ব্যাপটাইজড করা হয়েছিল। সেখানে ঢুকেই চাগোসিয়ানরা জমে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে শুরু করলেন। "আমি এখানে ফিরে আসতে পেরে খুশি। কিন্তু আমার কষ্ট লাগছে যে আমাকে আবার ফিরে যেতে হবে। আমি এখানে স্থায়ীভাবে থাকতে চাই", বললেন এলিস।
১৯৭২ সালে যখন ব্রিটেন তাকে এবং তার পরিবারকে চাগোস দ্বীপপুঞ্জ থেকে জোর করে বের করে দিয়েছিল, তারপর এই প্রথম বার্টিন সেখানে কোন অনুমতি ছাড়া ফিরতে পেরেছেন, তাকে সারাক্ষণ পাহারা দিচ্ছে না কোন সৈনিক। চাগোস দ্বীপপুঞ্জে এর আগে তাদেরকে যেতে দেয়া হত 'হেরিটেজ ভিজিটের' নামে, যেটির আয়োজন করতো ব্রিটিশ সরকার। নৌকায় যখন সবাই আনন্দে নাচছে, উল্লাস করছে, তখন তার মতোই চাগোস দ্বীপের আরেক সাবেক বাসিন্দা ৫৭ বছর বয়সী সুজেল ব্যাপটিস্ট ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন। "এটা যে আমার কাছে কীরকম একটা ব্যাপার, বুঝিয়ে বলতে পারবো না," কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন তিনি।
নৌকায় এই দুই নারীর সঙ্গে আছেন চাগোস দ্বীপের আরও তিনজন মানুষ। মরিশাসের সরকারের ভাড়া করা নৌকাটি শনিবার যখন চাগোস দ্বীপপুঞ্জে পৌঁছালো এবং এরা যখন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর পাহারা বা অনুমতি ছাড়াই দ্বীপের মাটিতে পা দিলেন , সেটি এক নতুন ইতিহাসের সূচনা করলো। "আমি যে কী গর্ব অনুভব করছি, আমাকে এখানে আসার জন্য কারও অনুমতি নিতে হয়নি", বললেন বার্টিন।
অর্ধশত বছর আগে, বার্টিনের বয়স ছিল ১৭। তখন তার মাত্র বিয়ে হয়েছে, এবং কোলে ছয় মাস বয়সী শিশু সন্তান। তখন প্রতি কয়েক মাসে তাদের দ্বীপে মরিশাস থেকে একটা রসদবাহী জাহাজ আসতো। একদিন চাগোস দ্বীপপুঞ্জের ছোট্ট এক দ্বীপ সালোমনে এসে নোঙর করলো নোডভের নামের এই জাহাজ, কিন্তু বলা হলো জাহাজে কোন খাবার নেই। "ওরা যে আমাদের দ্বীপ ছাড়া করতে চায়, এটি ছিল তার প্রথম সংকেত", বলছিলেন বার্টিন। তার সঙ্গীরা যখন বর্ণনা করছিলেন ব্রিটেন কীভাবে এই দ্বীপপুঞ্জ থেকে দু হাজার মানুষকে জোর করে উচ্ছেদ করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, এবং এই খালি জাহাজটি তার প্রমাণ, তখন জোরে জোরে মাথা নাড়ছিলেন বার্টিন।
এর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বার্টিন, তার আত্মীয়-স্বজন এবং সালোমন দ্বীপের তিনশজনের মতো অধিবাসীর সবাইকে তাদের জিনিসপত্র কাঠের ট্রাংকে ভরে, বিছানাপত্র নিয়ে নডভের জাহাজটিতে উঠতে হলো। পেছনে ফেলে গেলেন এই দ্বীপের এক সহজ, সরল এবং সুখী জীবন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা এটা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, এই পরিবারগুলো আর কখনোই তাদের দ্বীপে ফিরতে পারবে না। কারণ তারা গোপনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করে একটি দ্বীপ তাদের হাতে তুলে দিয়েছিল সামরিক ঘাঁটি করার জন্য, আর দ্বীপপুঞ্জের নামও পাল্টে রাখা হয়েছিল, 'ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান ওশেন টেরিটরিজ।'
স্বাধীন দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস এ সপ্তাহে প্রথমবারের মতো চাগোস দ্বীপপুঞ্জের দিকে একটি নৌকা পাঠিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে। মরিশাস নাটকীয়ভাবে ঘোষণা করে, চাগোস দ্বীপপুঞ্জে তাদের যাওয়ার অধিকার আছে, কারণ এটির ওপর তাদের সার্বভৌমত্ব আছে। চাগোস দ্বীপপুঞ্জের মালিকানা নিয়ে ব্রিটেনের সঙ্গে মরিশাসের আইনি লড়াই চলছে বহু বছর ধরে। তারই এক পর্যায়ে এসে মরিশাস এই দ্বীপে এরকম একটি অভিযাত্রার আয়োজন করলো।
ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের অনেক আপত্তি এবং বিরোধিতা সত্ত্বেও, মরিশাস এই আইনি লড়াইয়ে একের পর এক বিজয় পেয়েছে- প্রথম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে, এরপর জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আদালতে। সর্বশেষ জাতিসংঘের যে ট্রাইব্যুনাল সমূদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিস্পত্তি করে, সেখানকার রায়ও মরিশাসের পক্ষে গেছে। জাতিসংঘের মানচিত্রে এখন এই দ্বীপপুঞ্জকে মরিশাসের বলে দেখানো হয়। দুটি আন্তর্জাতিক আদালত সম্প্রতি ব্রিটেনকে নির্দেশ দিয়েছে চাগোস দ্বীপপুঞ্জের ওপর তাদের সার্বভৌমত্বের আনুষ্ঠানিক অবসান ঘটিয়ে যেন তারা সেখানে দখলদারিত্বের ইতি টানে।
"আমরা যে এখানে এসেছি এটা একদম অলৌকিক বলে মনে হচ্ছে। মরিশাসের সরকারের জন্য এটা একটা বিরাট ব্যাপার বলে মনে হয়। স্বাধীনতার পর থেকে মরিশাস এই দ্বীপগুলো ফেরত পাওয়ার জন্য লড়ছে", বলছেন ব্রিটিশ ব্যারিস্টার ফিলিপ স্যান্ডস। তিনি এই মামলায় মরিশাসের পক্ষ হয়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছেন।
মরিশাসের সরকারের ভাড়া করা নৌকা, ব্লু ডে নিমস, যখন দ্বীপের চারপাশের বিতর্কিত সমূদ্রসীমায় ঢুকলো, যা কোন কোন মানচিত্রে এখনো ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান ওশেন টেরিটরিজ বলে দেখানো হয়, মরিশাসের প্রতিনিধিদল শ্যাম্পেনের বোতল খুললেন এই মূহুর্তটি উদযাপনের জন্য। জাতিসংঘে মরিশাসের রাষ্ট্রদূত জগদীশ কুনজুল বলেন, "এটি একটি ঐতিহাসিক মূহুর্ত। আমরা অবন্ধুসুলভ কিছু করছি না। ব্রিটেনের বিরুদ্ধে আমাদের কোন শত্রুতা নেই। আমরা বিশ্বাস করি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সামনে এগুনোর পথ এটাই, যাতে পরিষ্কার বলা হয়েছে, চাগোস দ্বীপপুঞ্জের ওপর মরিশাসেরই সার্বভৌমত্ব আছে।"
বিবিসির সঙ্গে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী প্রবিন্দ যাগনাথ বলেন, ব্রিটেনকে 'বিব্রত' করার কোন ইচ্ছে তার নেই, কিন্তু বলেন ব্রিটেনের "কোন অধিকার নেই চাগোস দ্বীপপুঞ্জ নিজেদের বলে দাবি করার।" প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, চাগোস দ্বীপপুঞ্জের মানুষের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে ব্রিটেন যে ব্যবহার করেছে এবং এখনো করছে, তা স্পষ্টতই 'মানবতাবিরোধী অপরাধ।" "আমরা ন্যায় বিচারের পক্ষে, আইনের পক্ষে, এবং ব্রিটেনই আসলে এখানে আইন ভঙ্গ করছে।"
মরিশাসের প্রধানমন্ত্রী নিজেও চাগোস দ্বীপপুঞ্জের এই সফরে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু একটি সাইক্লোন মরিশাসে আঘাত হানার পর তাকে সেই পরিকল্পনা বাতিল করতে হয়। নৌকায় আরও যেসব চাগোস দ্বীপের মানুষ যোগ দেন তাদের মধ্যে আছেন ৫৭ বছর বয়সী অলিভিয়ের ব্যানকোল্ট, যিনি চার বছর বয়সে পেরোস ব্যানহস ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। কয়েক দশক করে তিনি ব্রিটেনের আদালতে আইনি লড়াই চালিয়েছেন সেখানে ফিরে যাওয়ার অধিকার দাবি করে।
"ব্রিটিশ সরকার কীভাবে আমাকে আমার জন্মস্থানে যেতে বাধা দেয়? আমাদের সেখানে ফিরে যাওয়ার অধিকার আছে। তাদের কোন অধিকার নেই আমাদের আটকানোর। আমরা সন্ত্রাসবাদী নই। আমরা এখানে থাকতে চাই, বসবাস করতে চাই", বলছেন তিনি। "আমাদের সবার জন্য এটা খুবই আবেগের একটা বিষয়। আমি কোন একদিন এখানেই স্থায়ীভাবে থাকতে চাই", বলছেন সুজেল ব্যাপটিস্ট, যিনি ১৯৭১ সালে শিশু বয়সে দিয়েগো গার্সিয়া ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, যখন তার যমজ ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। সেই দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
মরিশাসের এই নৌকার অনেকের মধ্যে এরকম জল্পনা চলছিল যে, কোন ব্রিটিশ বা মার্কিন রণতরী এসে তাদের পথ আটকে দেয় কীনা। তবে ব্রিটিশ সরকার মরিশাসের এই সফরটির ব্যাপারে সমঝোতার পথই নিয়েছে। তবে এরকম প্রমাণ যথেষ্ট আছে যে, ব্রিটিশ সরকার শুরুতে এই সফর আটকে দেয়ার চেষ্টা করেছিল, বা অন্তত আন্তর্জাতিক সাংবাদিকরা যেন এই নৌকায় যেতে না পারে, সেরকম চেষ্টা করেছিল।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দফতর এক বিবৃতিতে চাগোস দ্বীপপুঞ্জের ওপর আগের মতো সার্বভৌমত্বের দাবির পুনরাবৃত্তি আর করেনি, তবে তারা বলছে, এই সফরের ব্যাপারে তাদেরকে যেহেতু আগে থেকেই জানানো হয়েছে, তাই তারা এতে বাধা দেবে না। তবে পররাষ্ট্র দফতর আবার এরকম একটা দাবি করেছে যে, মরিশাসের এই সফরের উদ্দেশ্যে "পরিবেশ রক্ষা।" কিন্তু পররাষ্ট্র দফতরের এই কথা সঠিক নয়, কারণ মরিশাস এরকম কোন উদ্দেশ্যের কথা অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, তাদের এই সফরের উদ্দেশ্যে ব্লেনহেইম রিফের মানচিত্র তৈরি করা, যেটি নিয়ে প্রতিবেশি মালদ্বীপের সঙ্গে তাদের সীমানা বিরোধ আছে।
সুইডেনের ৬৯ বছর বয়সী মেরিন সার্ভেয়র ওলা ওসকারসন তার মাপ-জোকের যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যস্ত। তিনি বলেন, "নতুন স্থলভাগ দাবি করার ব্যাপারটি সবসময় বেশ মজার।" ওলা ওসকারসন ব্লেনহেইম রিফের ওপর যন্ত্রপাতি বসিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন এটির কোন অংশ স্থায়ীভাবে সাগরের পানির ওপর জেগে আছে কিনা। "যদি এটি পানির ওপর জেগে থাকে, তাহলে মরিশাস এটিকে ভিত্তি ধরে সমুদ্রসীমা দাবি করতে পারবে।" তখন মরিশাস বলতে পারবে, এই রিফটিও আসলে একটি দ্বীপ, এবং তখন মরিশাস সাগরের আরও হাজার হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিজেদের একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল বলে দাবি করতে পারবে।
চাগোস দ্বীপপুঞ্জের সব মানুষকে ব্রিটেন ১৯৭০ এর দশকে সেখান থেকে অপসারণ করেছিল। তারা দেখাতে চেয়েছিল, সেখানে স্থায়ীভাবে থাকে এমন কোন জনবসতির অংশ নয় এরা। অথচ এরা সেখানে কয়েক প্রজন্ম ধরে বাস করেছে। ব্রিটিশ কূটনীতিকরা জানতেন যে, এই কাজটি আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ। বিশেষ করে একটি দেশকে স্বাধীনতা দেয়ার আগে সেটিকে এভাবে ভাগ করে ফেলা। কিন্তু তারা ভেবেছিলেন, জনবসতি নেই এমন কিছু দ্বীপকে আলাদা করে ফেললে সেটা কারও নজরে পড়বে না।
যুক্তরাজ্য তখন গোপনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা চুক্তি করে ফেলেছে দিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপটি তাদের কাছে লিজ দেয়ার জন্য। মরিশাসের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রিটেন তখন তাদেরকে রীতিমত ব্ল্যাকমেইল করেছিল এতে রাজী হতে। ব্রিটেন বলেছিল, হয় এসব দ্বীপ দিয়ে দিতে হবে, নয়তো স্বাধীনতা পাওয়ার কথা ভুলে যেতে হবে। মরিশাস স্বাধীনতা অর্জন করে ১৯৬৮ সালে। চাগোস দ্বীপপুঞ্জের বেশিরভাগ মানুষকে কোন ক্ষতিপূরণ না দিয়েই এক হাজার মাইল দক্ষিণে মরিশাস নিয়ে ফেলে দেয়া হয়। অনেকে সিচেলিসে বা ব্রিটেনে চলে যান। এদের অনেকে ব্রিটেনের সারের একটি শহর ক্রলিতে থাকেন।
তবে ব্রিটেনের এই ছোট চাগোসিয়ান কমিউনিটি মরিশাসের এই সফর নিয়ে বিভক্ত। কেউ কেউ এটিকে 'মিডিয়া সার্কাস' বলে বর্ণনা করছেন। তারা বলছেন, মরিশাস আসলে চাগোসিয়ানদের প্রতি দরদের চাইতে বরং তার সীমানা বাড়ানোর আকাঙ্খা থেকেই একাজ করছে। "চাগোসিয়ানরাই আসল ক্ষতির শিকার হয়েছেন। চাগোসিয়ানরা মরিশাসের লোক নন। আমরা ব্রিটিশ", এক টুইট বার্তায় বলেছেন একদল ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান ওভারসিজ টেরিটরিজ নাগরিক। মরিশাসেও একদল এই বলে এই সফরের সমালোচনা করেছেন যে, এটি অর্থের অপচয়। তারা বলছেন, এই সফরের জন্য সরকার একটি বিলাসবহুল প্রমোদতরী ভাড়া করে অর্থের অপচয় ঘটিয়েছে।
তবে এসব সমালোচনার কড়া জবাব দিয়েছেন এর আরোহীরা। "আমি চাগোসের আদি বাসিন্দা, আমি জানি আমি কতটা ভুগেছি", বলছেন রোজমন্ড বার্টিন। "যারা এই সফরের বিরুদ্ধে বলছেন, তারা তো এখানে জন্মাননি। আমি মনে কষ্ট পাই, তাদের উচিৎ আমাদের সমর্থন করা", বলছেন তিনি। জাতিসংঘে মরিশাসের রাষ্ট্রদূত জগদীশ কুনজুল বলেন, যারা এই সফরের বিরোধিতা করছেন, তারা আসলে বিভ্রান্ত।
চাগোসিয়ানদের আফ্রিকা থেকে নিয়ে আসা ক্রীতদাসদের বংশধর বলে মনে করা হয়। তাদের এখানে আনা হয়েছিল নারিকেল বাগানে কাজ করতে। কিন্তু তাদেরকে শোষণ করেছে অনেক দেশ, তারা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। এখন এই দ্বীপে তাদের এই অধিকারের দাবি তাদের জীবনে কোন পরিবর্তন আনে কীনা সেটা দেখার বিষয়। মরিশাসের সরকার চাগোসিয়ানদের সাহায্য করবে বলে অঙ্গীকার করেছে। তাদেরকে এই দ্বীপে পুনর্বাসন এবং দ্বীপের উন্নয়নের কথাও দিয়েছে। এ সপ্তাহান্তে তারা পেরোস বানহস এবং সালোমন দ্বীপে মরিশাসের জাতীয় পতাকা উত্তোলনেরও পরিকল্পনা করছে।
এটিকে অনেকেই আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতীয় সার্বভেৌমত্ব প্রতিষ্ঠার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখবেন, এই ঘটনাকে উদযাপন করবেন। কিন্তু ব্রিটেন অন্য কিছু মানুষ এটিকে হয়তো দেখবেন ভূমি দখলের লক্ষ্যে একটি উস্কানিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।