মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যুদ্ধের মুখোমুখি ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার টানাটানির মধ্যে পড়ে সে দেশের মানুষের জীবন সংকটে পড়েছে। নতুন বছরের শুরু থেকে বিশ্বের সব উত্তেজনা ভর করেছে ইউক্রেনকে ঘিরে। বিশ্বের অন্যতম দুই পরাশক্তি রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি এখানে জড়িয়ে গেছে ন্যাটোসহ ইউরোপের দেশগুলোও। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জেগেছে, কেমন আছেন ইউক্রেনের মুসলমানরা? কোন পক্ষে তাদের অবস্থান? জানা গেছে, কোনো পক্ষ না নিয়ে বরং চরম উত্তেজনার মধ্যেও শান্তির প্রত্যাশা করছেন তারা।
পূর্ব ইউক্রেনের কোস্তিয়ান্তিনিভকা শহরের মুসলিম সম্প্রদায় এখনো সবকিছু ভালোভাবে মিটে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। শহরটির বাসিন্দা ৩১ বছর বয়সী কোরিতস্কি বলেন, নানা সময়েই আমরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি, আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই। আমরা এসবের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছি, যুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ড উভয়ই দেখেছি। তার পরও আমরা শান্তি ও মঙ্গল চাই। যে সময় কোনো সমস্যা ছিল না, লোকরা ভালো জীবনযাপন করছিল, সে সময়ের মতো থাকতে চাই। আল্লাহর ইচ্ছায়, সবকিছু ভালো হোক এবং কোনো যুদ্ধ না হোক।
রাশিয়ার পর ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র ইউক্রেন। রাজধানী ও বৃহত্তম শহর কিয়েভ। ৬ লাখ ৩ হাজার ৬২৮ বর্গমাইলের এ দেশের জনসংখ্যা প্রায় ৪৩ মিলিয়ন। ইসলাম দেশটির চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম। তাদের জনসংখ্যার ০.৬ থেকে ০.৯ শতাংশ মানুষ এই ধর্ম পালন করে। কারও কারও মতে অবশ্য ১ থেকে ২ শতাংশ মানুষ ইসলাম ধর্ম পালন করে। ১৫ শতাব্দীতে ক্রিমিয়ার খানাট প্রতিষ্ঠার আগ থেকেই এখানে ইসলাম ধর্মাবলম্বীর অস্তিত্ব ছিল। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ মুসলমান মূলত ক্রিমিয়ান তাতার। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনে অবশ্য কিছু তুর্কি আদিবাসীও রয়েছে। আরও আছে ভলগা, আজারিস, উত্তর ককেশীয় নৃগোষ্ঠী ও উজবেকরাও। ২০১২ সালের এক পরিসংখ্যান মতে, ইউক্রেনে মুসলমানের সংখ্যা পাঁচ লাখ, এর মধ্যে তিন লাখই তাতার। ২০১৬ সালে সে দেশের মুসলমানদের সংস্থা ‘উম্মাহ’র প্রধান মুফতি সাইয়্যেদ ইসমাগিলভ দাবি করেন, ইউক্রেনে মুসলমানদের সংখ্যা এক মিলিয়ন, কিন্তু সেখানকার মুসলিম জনসংখ্যা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে।
বেশির ভাগ মুসলমানের বাস ক্রিমিয়ার সীমানার দিকে। এ ছাড়া ভলহানিয়া ও পোডোলিয়া এলাকায় কিছু লিপকা, তাতার জনগোষ্ঠীর বসবাস আছে, যারা মুসলিম। ইউক্রেনে ইসলামের আগমনের ইতিহাস ক্রিমিয়ান তাতারদের সঙ্গে সম্পর্কিত। সপ্তম শতাব্দীর দিকে ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে তুর্কি বংশোদ্ভূত কিছু মানুষ বসতি স্থাপন করেছিল। তাদের বংশধররাই ১৫ শতাব্দীর দিকে দক্ষিণ ইউক্রেনে ক্রিমিয়ান খানাট প্রতিষ্ঠা করে। পরে অবশ্য এটি রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। সে সময় ক্রিমিয়ার বখছিসারাই শহরে ১৮টি মসজিদ ও বহু মাদ্রাসা ছিল, কিন্তু রাশিয়ার অত্যাচারে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মুসলিম ক্রিমিয়া ছাড়তে বাধ্য হয়।
এরপর থেকে বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগে লাখ লাখ মুসলমানকে এই অঞ্চল থেকে বের করা হয়। পরে ১৯৮৯ সালে ক্রিমিয়ান তাতাররা তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসন করতে শুরু করে। এরপর থেকে মুসলমানের সংখ্যা একটু একটু করে বাড়ছে। বর্তমানে সেখানে ১৬০টি মসজিদ আছে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও বাড়ছে। এ অঞ্চলের প্রথম মসজিদ হলো মসজিদ আর রহমান। ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালে ইউক্রেনের কিয়েভ শহরের তাতারকা পাড়ায় মুসলমানদের জন্য প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
বর্তমানে ইউক্রেনে মুসলিমদের কয়েকশ কমিউনিটি রয়েছে। এই কমিউনিটিগুলোতে সাধারণত নামাজের ঘর, কনফারেন্স হল, ইন্টারনেট ক্লাব, ক্রীড়া প্রশিক্ষণ হল, খেলার মাঠ ও ইসলামি বইয়ের বিশাল গ্রন্থাগার থাকে। তাদের উদ্যোগে সব বয়সী মুসলিমদের ইসলামি শিক্ষার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ ছাড়া বছরের বিভিন্ন সময় নওমুসলিমদের ইসলামি দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য সেমিনারের আয়োজন করা হয়। করোনার সময় মুসলিম কমিউনিটিগুলোর উদ্যোগে দরিদ্র ও অসহায়দের মধ্যে খাবার বিতরণ কর্মসূচি, রক্তদান কর্মসূচি ইত্যাদি পালন করা হয়। এরই মধ্যে তারা ‘আসসালামু আলাইকুম’ নামে মুসলমানদের স্বতন্ত্র একটি রেডিও স্টেশন খুলতে সক্ষম হয়েছে। অনুরূপভাবে তাদের রুশ এবং আরবি ভাষায় ‘আর রায়েদ’ নামে সাপ্তাহিক এবং পাক্ষিক পত্রিকাও রয়েছে। রয়েছে ‘আনসার’ নামে একটি আলাদা সাংস্কৃতিক সংস্থা। ইউক্রেনে তাবলিগ জামাতের কাজও চালু রয়েছে।
ইউক্রেনের মুসলমানরা ইসলামের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজে আত্মনিয়োগ করে ইউক্রেন জুড়ে শান্তির দাওয়াত পৌঁছে দিচ্ছে। গত বছর সেখানকার মুসলমানদের উদ্যোগে পুরো ইউক্রেনে ২৪ ঘণ্টায় এক মিলিয়ন বৃক্ষ রোপণ করা হয়। এর আগে কয়েক বছর আগে, ইউক্রেনে রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হলে রাজধানী কিয়েভের সড়কে ইসলামের পরিচয় তুলে ধরার জন্য মুসলমানরা বিভিন্ন সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। এর ফলে দেশটিতে ইসলামবিরোধী কার্যক্রম অনেকটাই কমে আসে। রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে স্থাপিত ১৭টি সাইনবোর্ডে পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদিস লেখা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।