চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
কাফির, মুশরিক, মুনাফিক, ইহুদী, নাছারা এবং সেই সব নামধারী মুসলিম যারা কুরআনের বিধান ও রসূলের আদর্শকে অপছন্দ করে, নায়েবে রসূল ওলামায়ে কেরামদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, আল্লাহর বিধান ও রসুলের আদর্শ পরিত্যাগ করে মুসলিম জাতির উপর তাদের মনগড়া আদর্শ, মানব রচিত মতবাদ, বিধি-বিধান, আইন-কানুন ও জাহেলী রসম-রেওয়াজ চাপিয়ে দিয়ে প্রকৃত মুসলমানদেরকে তাদের দ্বীন থেকে বিচ্যুত করতে চায়- তাদের সাথে প্রকৃত ঈমানদারদের বৈবাহিক সম্পর্কও সমীচীন নয়। এ প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা বলেন : মুমিন না হওয়া পর্যন্ত কোন মুশরিক নারীকে বিয়ে কর না, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে; মুশরিক নারীর চেয়ে মুমিন দাসীরা উত্তম। আর তোমরা মুশরিক পুরুষকে বিয়ে কর না যতণ না তারা ঈমান আনে, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে; মুমিন দাস তাদের চেয়ে উত্তম। মুশরিক নারী ও পুরুষ তোমাদেরকে জাহান্নামের দিকে ডাকে আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদেরকে জান্নাত ও মার প্রতি আহ্বান করেন। তিনি মানুষের জন্য তাঁর বিধানসমূহ সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যেন তারা তা স্মরণ রাখে ও মেনে চলে। (সূরা বাকারাহ : ২২১)।
সমাজে কতিপয় লোককে ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে দেখা যায়। অথচ তাদের কুফরী, শিরকী ও আল্লাহর মনোনীত দ্বীনের বিরোধিতা প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা বলেন : ইয়াহুদীরা বলে: ‘উযায়র আল্লাহর পুত্র।’ খৃষ্টানরা বলে: ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র।’ এটা কেবলই তাদের মুখের অবাস্তব কথা। ইয়াহুদী-খৃষ্টানরা তাদেরই মত কথা বলে যারা তাদের আগে কুফরি করেছিল। আল্লাহ তাদের ধ্বংস করুন, তারা উল্টো কোন দিকে যাচ্ছে? আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা তাদের জ্ঞানী ব্যক্তিদের ও ধর্মযাজকদেরকে এবং মারইয়াম পুত্র মসীহকে প্রতিপালক হিসেবে গ্রহণ করেছে। অথচ তারা একমাত্র ইলাহ আল্লাহর ইবাদাত করার জন্য আদিষ্ট হয়েছিল। আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তারা যাকে (আল্লাহর)। শরীক সাব্যস্ত করে তা হতে তিনি পবিত্র। তারা তাদের মুখের ফুঁৎকার দিয়ে আল্লাহর নূর নিভিয়ে দিতে চায়। কিন্তু কাফিরদের অপছন্দ হলেও আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নূরকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করা ছাড়া আর কিছু চান না। সকল দীনের উপর সুপ্রকাশিত ও জয়যুক্ত করার জন্য আল্লাহ তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সঠিক দীনসহ প্রেরণ করেছেন, যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে। ( সূরা তওবা : ৩০-৩৩)।
বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর দ্বীনদারীকেই গুরুত্ব দিতে হবে। হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : চারটি বিষয় বিবেচনা করে কোন মেয়েকে বিবাহ করা হয়- (১) তার ধন-সম্পদ, (২) তার বংশ-মর্যাদা, (৩) তার রূপ-সৌন্দর্য্য ও (৪) তার ধর্ম-পরায়ণতা। এর মধ্যে ধর্মপরায়ণ স্ত্রী লাভে তুমি সফলকাম হও। তোমার হাত কল্যাণে ভরপুর হবে। (বুখারী ও মুসলিম)। মুসলিম নামধারী হয়েও যারা কুরআনের বিধান ও রসূলের আদর্শকে অপছন্দ করে, নায়েবে রসূল ওলামায়ে কেরামদের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, আল্লাহর বিধান ও রসুলের আদর্শ পরিত্যাগ করে মুসলিম জাতির উপর তাদের মনগড়া আদর্শ, মানব রচিত মতবাদ, বিধি-বিধান, আইন-কানুন ও জাহেলী রসম-রেওয়াজ চাপিয়ে দিয়ে মুসলমানদেরকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত করতে চায়- তাদের সাথে প্রকৃত মুসলমানদের দোয়ার সম্পর্কও সমীচীন নয়।
এ প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা বলেন : আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন অথবা না-ই করুন। আপনি তাদের জন্য সত্তর বার ক্ষমা প্রার্থনা করলেও আল্লাহ তা কখনই কবূল করবেন না। কেননা তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরি করেছিল। আর আল্লাহ পাপাচারী জাতিকে ভালবাসেন না। (সূরা তওবা : ৮০)। তিনি আরও বলেন : আর তাদের মধ্য থেকে কেহ মারা গেলে আপনি তার উপর কখনো (জানাজার)। সলাত পড়বেন না এবং কবরের কাছেও দাঁড়াবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তার রসুলের সাথে কুফুরী করেছে এবং কুফুরী অবস্থাতেই তারা মৃত্যুবরণ করেছে। (সূরা তওবা : ৮৪)। তিনি আরও বলেন : নবী ও মুমীনদের জন্য বৈধ নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়। এ কথা প্রকাশের পর যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী। (সুরা তওবাহ্ : ১১৩)।
বন্ধুত্ব আর ভালবাসার মধ্যে যথন দুনিয়াবী কোন চাওয়া-পাওয়া, নাফসের কোন কামনা-বাসনা আর জৈবিক কোন লালসার লেশমাত্র থাকে না বরং কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তোষ অর্জনের জন্যই নিবেদিত হয়- তখন সে বন্ধুত্ব আর ভালবাসার মাধ্যমে মানব জীবনের চুড়ান্ত লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। হযরত আবু হুরাইরা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন : আল্লাহ তা’য়ালার বান্দাগণের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা নবীও নয় আর শহীদও নয়। কিন্তু বিচার দিবসে তাদের মর্যাদা দেখে নবী ও শহীদগণ তাদের উপর রিশক করবেন। জিজ্ঞেস করা হল- হে আল্লাহর রসূল! তারা কারা? উত্তরে তিনি বললেন: তারা হচ্ছে সেই সব লোক, যারা শুধু আল্লাহর মহব্বতে একে অপরকে মহব্বত করেছে। তাদের মধ্যে নেই কোন রক্তের সম্পর্ক নেই কোন বংশের সম্পর্ক। তাদের মুখমন্ডল হবে জ্যোতির্ময় এবং তারা নুরের মিম্বরের উপর অবস্থান করবে। কিয়ামতের বিভীষিকাময় অবস্থায় মানুষ যখন ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে তখন তারা ভীত হবে না আর মানুষ যখন দুঃখে থাকবে তখন তাদের কোন দুঃখ থাকবে না। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন- জেনে রাখ! যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের কোন ভয় নাই এবং তারা চিন্তিতও হবে না। (আবু দাউদ : ৩০৬০, সহীহ্)।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : একমাত্র আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর মহব্বতকারীগণ এত উঁচু মর্যাদা সম্পন্ন জান্নাত লাভ করবে যে, অন্যান্য জান্নাতবাসীগণ তাদেরকে এভাবে দেখবে যেভাবে পূর্ব বা পশ্চিমে উদিত নত্রসমূহকে দেখা যায়। তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে, এরা কারা? উত্তরে বলা হবে, এরা হল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পরস্পর মহব্বতকারীগণ। (মুসনাদে আহমাদ : ১১৬১৮)। হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু)। থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন : যারা আমার সন্তুষ্টির আশায় পরস্পরকে ভালবাসে, আমার রেজামন্দির আশায় পরস্পর বৈঠকে মিলিত হয়, আমার সন্তুষ্টির কামনায় পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ করে এবং আমার ভালবাসার জন্যই নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদেরকে ভালবাসা আমার জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। (মুয়াত্তা)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।