মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারতের উত্তর প্রদেশের নির্বাচনে ১৫ কোটির বেশি ভারতীয় অংশ নিতে নিবন্ধন করেছেন। এক মাস ধরে সাত দফায় অনুষ্ঠিতব্য ভোটে তারা ১ লাখ ৭৪ হাজার ৩শ’ ৫১টি ভোটকেন্দ্রে ভিড় করবে। গতকাল থেকে এ নির্বাচন শুরু হয়েছে। এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে হাজার হাজার প্রার্থী এবং শত শত দল। প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন চলচ্চিত্র তারকা, সাধু-সন্ত, নারীবাদী এবং উদ্যোক্তারা। ইউপির ১শ’ বা তারও বেশি বয়সী ৩৯ হাজার ৫শ’ ৯৮ জন ভোটার রয়েছেন, যাদের জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। উত্তর প্রদেশের নির্বাচন উপলক্ষ্যে জবরদস্ত আয়োজন দেখে ভারতের গণতন্ত্র শতভাগ প্রাণবন্ত মনে হলেও আদতে এটি শুধুই প্রহসন। দেশটির ঘুণে ধরা গণতন্ত্র সব থেকে বেশি যা থেকে ভুগছে, তা হ’ল, এর ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িকতা, যা ক্ষমতাসীন বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা প্ররোচিত।
উত্তর প্রদেশে দলটি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হিন্দু ধর্মগুরু ও রাজনীতিবীদ যোগী আদিত্যনাথকে বেছে নিয়েছে, যিনি ১ হাজার বছরের মুসলিম ইতিহাস ও অবদানকে উল্টে দিয়ে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠের কাছে কথিত ক্ষমতা ও গর্ব ফিরিয়ে দেয়াকে সংগ্রাম হিসাবে বেছে নিয়েছেন। তার বক্তব্য ও কার্যকলাপ ভারতের মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘন ঘন বৈষম্য এবং সহিংসতাকে ক্রমেই উস্কে দিচ্ছে এবং এটি একসময় গণহত্যায় পর্যবসিত হতে পারে। কিন্তু, বিজেপিই ভারতের একমাত্র দল নয়, যারা হিন্দুত্ববাদকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, বিজেপির মুসলিমবিরোধী বক্তব্য হিন্দু ভোটারদের কাছে এতটাই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে যে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও সংখ্যালঘুদের পক্ষে কথা বলতে কম আগ্রহী হয়ে উঠেছে। উত্তরপ্রদেশে খুব কম দলই মুসলিম প্রার্থীদের মাঠে নামিয়েছে, যদিও সেখানকার ভোটারদের ১৯ শতাংশ মুসলিম।
তবে, ভারতের গণতন্ত্রে আরো অনেক ঘুণ বাসা বেঁধেছে। সব বড় দলগুলো এ থেকে সুবিধা আদায় করছে। যেমন, তাদের জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের আরেকটি উদ্বেগজনক দিক হ’ল, এদের অনেকেই অপরাধী। ২০১৯ সালের সবচেয়ে সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে যারা জাতীয় সংসদে আসন জিতেছিল, তাদের মধ্যে ৪৩ শতাংশই একাধিক অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ২৯ শতাংশ ধর্ষণ বা হত্যার মতো গুরুতর অপরাধে অভিযোগে অভিযুক্ত। অনাশ্চর্যজনকভাবে, এসব আইন প্রণেতা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আইনের খসড়া তৈরিতে নিষ্ঠার সাথে নিজেদের নিয়োজিত করেননি এবং আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়াটি আরও তুচ্ছ হয়ে উঠছে। আইনী প্রস্তাবগুলো হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি সেগুলো নিয়ে তর্ক-বিতর্কও কমে গেছে। কিছু আবার কন্ঠ ভোটেই অনুমোদিত হয়েছে।
প্রচারণা সংক্রান্ত অর্থের উৎস্য ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য আরেকটি উদ্বেগের বিষয়। নির্বাচনী বন্ড বলে বিজেপি যা প্রবর্তন করেছে, তা ব্যক্তি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে গোপনে রাজনৈতিক দলগুলোতে সীমাহীন অর্থ দান করার অনুমতি দেয়। বিজেপি এভাবে দান করা অর্থের তিন-চতুর্থাংশ সংগ্রহ করে, তবে অন্যান্য দলগুলোও উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করতে পেরে খুশি। ভারতের গণতন্ত্রকে কোণঠাসা করে দেয়া এসব ব্যর্থতা হিন্দু জাতীয়তাবাদের উত্থানের মতো প্রকট নয়, তবে এগুলোও অত্যন্ত ক্ষতিকারক হতে পারে। এমনকি যদি উত্তরপ্রদেশের ভোটাররা বিজেপির বিভাজনমূলক ও ঘৃণা উদ্গীরক বাগ্মিতা এবং বৈষম্যমূলক নীতিগুলোকে প্রত্যাখ্যানও করে, যা তাদের উচিত, তাহলেও ভারতে গণতান্ত্রিক কর্মকাÐের ক্রমবর্ধমান ক্ষয়ের কারণে একটি চিন্তাশীল, কার্যকর এবং প্রতিক্রিয়াশীল সরকার গঠন করার সম্ভাবনা কম।
স্বাভাবিকভাবেই, বিষয়টি সাধারণ ভারতীয়দের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ভারত হ’ল পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল গণতন্ত্র। ৭৫ বছর ধরে রাজনৈতিক স্বাধীনতা বজায় রেখে এবং ১৯৭০-এর দশকে কংগ্রেসের অধীনে দুই বছরের স্থবিরতা ভেঙে দেশটি উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য একটি হৃদয়গ্রাহী নজির স্থাপন করেছে। তবে বর্তমানে এটি তার আদর্শ থেকে আশঙ্কাজনক হারে দূরে সরে যাচ্ছে। এমন একটি বিশ্বে যেখানে চীন দিনকে দিন পরাক্রমশালী হয়ে উঠছে, সেখানে ভারতের জন্য কেবল জমকালোভাবে নির্বাচন করা নয়, বরং তার গণতন্ত্রের ভিত্তি মেরামত করার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।