Inqilab Logo

শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মহার ও অভিবাসন হ্রাসে কমছে জনসংখ্যা

দ্য ইকোনোমিস্ট | প্রকাশের সময় : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০২ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি সংস্থা বলেছে যে, দেশটির জনসংখ্যা ২০২১ সালের জুলাই পর্যন্ত বছরে মাত্র ০.১২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯০০ সালে সংস্থাটি এ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত এটি হ’ল মার্কিন জনসংখ্যার ক্ষুদ্রতম বার্ষিক বৃদ্ধির হার। মার্কিন আদমশুমারি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫ বা তার বেশি বয়সীদের জনসংখ্যা ২০১০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২৭ শতাংশ বেড়েছে। তবে, অনূর্ধ্ব-৫৫ বছর বয়সীদের সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ১.৩ শতাংশ। ১৯৯০ সালে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মহিলাদের প্রতি ১ হাজার জনের প্রায় ৬০টি সন্তান জন্ম হয়েছিল, যা ২০১৯ সালে ১৭-তে নেমে এসেছে।

যেকোনো স্থানের জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা হ্রাস দুটি প্রবণতা দ্বারা নির্ধারিত হয়: প্রাকৃতিক বৃদ্ধি (জন্ম বিয়োগ মৃত্যু) এবং মোট অভিবাসন (বিদেশ থেকে আগত বিয়োগ যারা দেশে ফিরে যাচ্ছে)। যুক্তরাষ্ট্রে উভয় প্রবণতাই ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারি মার্কিন মৃত্যুর হার বৃদ্ধি করেছে এবং জন্মের হারে সংকোচন ঘটিয়েছে। ২০১৮ সালে দেশটিতে মৃত্যুর হার ছিল ২.৮ মিলিয়ন, যা ২০২০ সালের মহামারিতে বেড়ে ৩.৪ মিলিয়ন হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ সেন্ট লুইসের গবেষণা যুক্তি দিয়েছে যে, করোনা মহামারি ৩০-৩৪ বছর বয়সী মহিলাদের ঊর্বরতাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে, যা সন্তান জন্মদানের জন্য গূরুত্বপূর্ণ বয়স। ফলস্বরূপ, ২০২১ সালে মৃত্যুর চেয়ে মাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার বেশি জন্ম হয়েছে, যা দেশটির সর্বনিম্ন হারগুলোর মধ্যে একটি। মহামারি চলে গেলে মৃত্যুহার এবং সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রে জন্মহার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। কিন্তু দেশটির স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের সঙ্কোচনে ইতিহাস কোভিড-১৯-এরও বহু আগের। ২০০৭ সালে দেশটিতে মোট ঊর্বরতার হার (মহিলারা তাদের জীবনে কত শিশুর জন্ম দেবে) বা জনসংখ্যা প্রতিস্থাপন হার ছিল ২.১ শতাংশ। বর্তমানে এটি ১.৬৪ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম হার হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে কমছে শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যাও। কমছে ১৮ বছরের কম বয়সী শেতাঙ্গাদের সংখ্যাও। এর আগে, অভিবাসনের কারণে বিষয়টি খুব একটা উদ্বেগজনক ছিল না। ২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অভিবাসনের মাধ্যমে দেশটির জনসংখ্যায় প্রতি বছর প্রায় ১ মিলিয়ন যোগ হয়েছে, যা প্রাকৃতিকভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রভাবকে কমিয়ে দিয়েছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ’ল, যুক্তরাষ্ট্রের জাতিগত সংখ্যালঘুদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গদের থেকে জন্মহার বহুগুণ বেশি। ২০১০-এর দশকে হিস্পানিক এবং এশিয়ান আমেরিকানদের সংখ্যা যথাক্রমে ২৩ শতাংশ এবং ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে শ্বেতাঙ্গদের সংখ্যা ২.৬ শতাংশ।

২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ বছর বয়সী অশ্বেতাঙ্গরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এবং পাঁচ বছরের মধ্যে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীরাও এই দলে যোগ দেবে। মার্কিন আদমশুমারিতে নিজেকে ‘দুই বা ততোধিক’ জাতি হিসাবে বর্ণনা করা লোকের সংখ্যা ২০১০ সালের ৯ মিলিয়ন থেকে ২০২০ সালে ৩৪ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। এটি জাতিগতভাবে শনাক্তকরণের পাশাপাশি আরও বহুজাতিক মার্কিন জন্মকে প্রতিফলিত করে। কিন্তু ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন বিরোধী নীতির কারণে দেশটির জনসংখ্যা বৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যাগত স্থবিরতা আংশিকভাবে এ নেতিবাচক নীতির ফলাফল।

সম্প্রতি করোনা মহামারিও বহু অভিবাসী শ্রমিককে নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে বাধ্য করেছে। এখন, যদি দেশটি তার অভিবাসন নীতিগুলোকে আবার উদার করতে পারে এবং শিশু লালন-পালনের সুবিধাগুলোর সম্প্রসারণ ঘটাতে পারে, তবে এটি তার জনসংখ্যার পতনকে কমিয়ে দিতে পারে। নইলে ইউরোপ এবং জাপানের মতো অনুর্বরতা ও কর্মক্ষম জনসংখ্যাহীনতায় পতিত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এ প্রসঙ্গে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের উইলিয়াম ফ্রে বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তার জনসংখ্যায় জাতিগত সংখ্যালঘুদের ছাড়া জাপান বা পূর্ব ইউরোপকে প্রতিফলিত করবে।’



 

Show all comments
  • Rasidul Islam ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:২৯ এএম says : 0
    তারপর ও ভিসা দেতে চায় না
    Total Reply(0) Reply
  • Mamun Mamun ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৩০ এএম says : 0
    টাকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি!
    Total Reply(0) Reply
  • Riad Hasan Munsi ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৩০ এএম says : 0
    দোয়া করি আল্লাহ যেন ভালো মত সবাই কে যাওয়ার তাওফিক দেয়
    Total Reply(0) Reply
  • মিফতাহুল জান্নাত ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১:৩৩ এএম says : 0
    সামাজিক ব্যবস্তা না থাকলে এভাবেই একটা জাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
    Total Reply(0) Reply
  • abul kalam ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১০:৩৩ এএম says : 0
    এটা বিশ্বের পরাজয়,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ