পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আমরা এখনো জানতে পারিনি কারা খুনি। তদন্ত নিয়ে আর বলার কিছু নেই। এক সংস্থা থেকে আরেক সংস্থায় তদন্তভার যায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। আমরা এখন আল্লাহর বিচারের দিকে তাকিয়ে আছি। গত দেড় বছর ধরে কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। তনু মরে গেছে, কিন্তু আমরা না মরেও মৃতের মতোই বেঁচে আছি।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এভাবেই নিজের প্রতিক্রিয়া ইনকিলাবের কাছে প্রকাশ করেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, ‘বেচে থাকা অবস্থায় অথবা মৃত্যুর পর বংশের কাউকে একদিন হয়তো শুনতে হবে, ‘কুমিল্লায় তনু নামে কোন মেয়েই ছিল না’।
তনু হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ২০ মার্চ। আলোচিত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন আটবার। কিন্তু দীর্ঘ সময়েও কোনো আসামি শনাক্ত হয়নি। এখন পর্যন্ত তদন্তেই আটকে আছে মামলার কার্যক্রম। তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তনুর পরিবার। তাদের অভিযোগ, টাকা ও ক্ষমতা না থাকার কারণে বিচার পাচ্ছেন না। পরিবারের ছোট সদস্যকে হারানোর বেদনায় এখনো কাতর তনুর মা-বাবা, দুই ভাইসহ স্বজনেরা।
মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই-ঢাকা। তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার সাক্ষী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মামলার অগ্রগতি বিষয়ে তদন্তের সাথে সম্পৃক্ত পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মামলার নথি পর্যালোচনায় এরই মধ্যে কয়েকজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। ঢাকা সিআইডি অফিসে তনুর ডিএনএ রিপোর্ট চেয়ে ইতোপূর্বে পত্র পাঠানো হলেও তা হাতে আসেনি। মামলার তদন্তে কিছু অগ্রগতি আছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট। ২০১৭ সালের মে মাসে সিআইডি তনুর পোশাক থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের কালভার্টের ২০ থেকে ৩০ গজ পশ্চিমে ঝোপ থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পরদিন ২১ মার্চ তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। মামলার প্রথম তদন্তের দায়িত্ব পান কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই মো. সাইফুল ইসলাম। চার দিন পরে ২৫ মার্চ মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মনজুর আলমকে।
একই বছরের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সিআইডি কুমিল্লার পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম তদন্ত করেন। চতুর্থ দফায় ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তৎকালীন এএসপি (বর্তমানে অতিরিক্ত এসপি) জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
২০২০ সালের ২১ অক্টোবর হত্যা মামলাটি সিআইডি থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকার সদর দফতরে স্থানান্তর করা হয়। এরপর পিবিআই তিনবার কুমিল্লা সেনানিবাসে গিয়ে মামলার বাদী তনুর বাবা ইয়ার হোসেন, মা আনোয়ারা বেগম ও তাদের ছোট ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, দেড় বছর আগে যখন পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা এসেছিল সিআইডির মতো পিবিআইও জিজ্ঞাসাবাদে পুরোনো বিষয়ে ঘুরেফিরে প্রশ্ন করে। কখন তনু ঘর থেকে বের হলো। কোথায় কোথায় পড়াতে যেত। কার বাসায় যেত। এখনো ওরা ছয় বছর আগের অবস্থানে আছে।
তিনি বলেন, গরিব মানুষের টাকা পয়সা নেই। এই মামলার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। ছয় বছর গেল, বিচার তো পাইলাম না। তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, আর কত জবানবন্দি দেব আমরা। বিচার নিয়ে কী বলব? উপরওয়ালা বিচার করবেন। সূত্র মতে, তনুর মা আনোয়ারা বেগম মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে বহুবার বলেছেন, তার মেয়ে তনুকে এক ব্যক্তি ও তার স্ত্রী ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাদের গ্রেফতার করলেই এ হত্যাকাণ্ডের জট খুলবে।
জানতে চাইলে মামলার তদারকি কর্মকর্তা পিবিআইয়ের বিশেষ এসপি আহসান হাবীব পলাশ ইনকিলাবকে বলেন, তদন্ত করছি এবং তনুর পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে আসামিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। তদন্তের প্রয়োজনে যা যা করা প্রয়োজন তা আমরা করছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সব হত্যা মামলা দ্রুত সময়ে খুনীদের শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। অনেক হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতরা অধিক সচেতনভাবে খুন করে পালিয়ে যায়। ফলে খুনীদের শনাক্ত করতে সময়ের প্রয়োজন হয়। তদন্ত বিলম্বিত হলেও প্রকৃত খুনীরা ছাড় পাবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।