পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ব্যাপক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হবার পর প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ইউনিটের কোনটিতেই ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। শিক্ষাবিদরা বলছেন, উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করলেও বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী উচ্চ শিক্ষার জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। তারা মনে করেন, এজন্য আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা কিছুটা হলেও দায়ী। কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করে বলছেন, ভর্তি পরীক্ষা একজন শিক্ষার্থীর যোগ্যতার মাপকাঠি হতে পারে না। এবারের ভর্তিপরীক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক বেগম আখতার কামাল একটি বাংলা দৈনিককে বলেছেন, এবারের পরীক্ষায় মফস্বলের ছাত্রছাত্রীরা কিছুটা ভাল করলেও রাজধানীর নামী-দামী কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা খুব খারাপ করেছে। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মফিজুর রহমান বলেছেন, শিক্ষার বিষয়টি একটি সমন্বিত বিষয়। উচ্চশিক্ষার আলোকে প্রাইমারি এবং মাধ্যমিক শিক্ষার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। তিনি মনে করেন, উচ্চশিক্ষার জন্য একজন শিক্ষার্থীর যেভাবে প্রস্তুত হওয়ার কথা সেভাবে হচ্ছে না। শিক্ষার মান নিয়ে যখন গুরুতর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তখন খোদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই ফলিত রসায়ন ও কর্মকৌশল বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, এ বিভাগের ৪টি শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হলেও নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৯ জনকে। এদের মধ্যে মাস্টার্স পাস না করেই ৩ জন নিয়োগ পেয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঘটনা বিরল। এর ফলে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ও শৃঙ্খলা নষ্ট করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষা এবং শিক্ষার মান নিয়ে এই প্রথম নয় এর আগেও প্রশ্ন উঠেছে। এবারে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়কে শিক্ষামানের সাথে সম্পর্কিত না করার পক্ষে কেউ কেউ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, ভর্তি ঠেকানোই ভর্তি পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য। ব্যাপারটি প্রশ্ন সাপেক্ষ এই কারণে যে, তাদের একথা বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ, প্রতিটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রেরই একটা মান নির্ধারিত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। যদি ব্যাপারটি এমন হয়ে থাকে যে, ভর্তি ঠেকাবার উদ্দেশ্য নিয়ে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে তাহলে সেটি মূলত ভর্তিচ্ছুদের শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। আর যদি মনে করা হয় যারা প্রশ্ন করেছেন, তারা এর মান জানেন না তাহলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষার বিষয়টি নতুন নয়। সাম্প্রতিক সময়ে যা ঘটছে তা অনভিপ্রেত। দেশের শিক্ষার মান নিয়ে কথা উঠেছে মূলত প্রাথমিকে, মাধ্যমিকে, উচ্চমাধ্যমিকে ব্যাপক সংখ্যক মেধাবী মুখের প্রেক্ষিতে, যারা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে বলে মনে করা হচ্ছে, গণহারে পাসের হার বৃদ্ধির প্রবণতা এর পেছনে কাজ করছে। শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, এর ফলে ভর্তি পরীক্ষায় অধিকহারে ভর্তিচ্ছু ঝরে পড়ছে। ভর্তিচ্ছুদের পরীক্ষা নেয়ার মানে হচ্ছে যোগ্যদের বাজিয়ে নেয়া। শিক্ষার মান কোনো আপেক্ষিক বিষয় নয়। পরীক্ষার মাধ্যমেই সঠিকভাবে যাচাই করা হয়। একবারে প্রাথমিক থেকে উচ্চপর্যায় পর্যন্ত সর্বত্রই শিক্ষার মানের যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে তার বড় একটি উদাহরণ হতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পাসবিহীন শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারটি। এনিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যা বলেছেন তা যথাযথ কিনা তা বিবেচনার দাবী রাখে। মূল বিষয়টি হচ্ছে, শিক্ষাকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও কৃতিত্ব জাহিরমুক্ত করা না গেলে মানসম্মত শিক্ষা অর্জন সম্ভব নয়।
শিক্ষাই জাতির মেরুদ-। এই খাতে যদি মানের সংকট দেখা দেয় তাহলে কোনো জাতিই অগ্রসর হতে পারে না। জাতীয় বাজেটের এক বিরাট অংশ ব্যয় করা হচ্ছে শিক্ষা খাতে। এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি সুশিক্ষিত ও মানসম্মত জাতি গঠন করা। এই মহান দায়িত্ব শিক্ষকরাই পালন করে থাকেন। সে বিবেচনায় প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা সর্বত্রই যোগ্য শিক্ষকের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। অহেতুক বিতর্কে না জড়িয়ে সংশ্লিষ্ট সকলে শিক্ষামান বৃদ্ধিতে যৌক্তিক অবস্থান গ্রহণ করবেন, এটাই দেশবাসী আশা করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।