পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও এসব থেকে পাস করা স্নাতকদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। শিক্ষার নামে বাণিজ্য, মান বৃদ্ধিতে অনিহা, অবকাঠামো উন্নত না করার এবং কেবল টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট বিক্রির অভিযোগ রয়েছে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার কারণে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষার্থী না থাকায় প্রতিবছরই খালি থাকছে বিপুলসংখ্যক আসনও। তারপরও প্রতিবছরই বাড়ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা। সম্প্রতি সরকার আরও ছয়টি নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের পর দেশে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯১টি। অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা রয়েছে আরও ১১০টি। যদিও শিক্ষা কার্যক্রমে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই প্রতিবছর খালি থাকছে বিপুলসংখ্যক আসন। গত পাঁচ বছর ধরে প্রতিবছরই ৪০ শতাংশের বেশি আসন খালিই থেকে যাচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মান সম্পন্ন শিক্ষার অভাব, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সঙ্কট ও অতিমাত্রায় বাণিজ্যিক প্রবণতার কারণে আসনগুলো খালি থাকছে। যদিও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত আসন না থাকায় অনেকে বাধ্য হয়েই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছে। ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আব্দুল মান্নান বলেছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছে সন্তোষজনক মনে হচ্ছে না। এ কারণে অনেকেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আগ্রহী হয় না। তিনি বলেন, শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান, শিক্ষার মান এবং সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা স্নাতকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। উচ্চশিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটলেও প্রত্যাশিত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েও রয়েছে কমিশনের প্রশ্ন। বিশেষ করে কোর্স শিক্ষকই একমাত্র প্রশ্নপত্র প্রণেতা এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নকারী হওয়ায় এই পদ্ধতির স্বচ্ছতা নিয়েও রয়েছে যথেষ্ট সন্দেহ। এসব বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ প্রণয়ন করা হলেও তা মানছে হাতেগোনা দু’একটি বিশ্ববিদ্যালয়। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে চালাচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার বিধান থাকলেও কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই পরিচালিত হচ্ছে ভাড়া করা এবং রাস্তার পাশে সংকীর্ণ জায়গার মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রেও রয়েছে ব্যাপক লুকোচুরি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে পরিচালকরা প্রতিমাসেই বেতনসহ নানা খরচ দেখিয়ে একেকজন হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। লক্ষ্য থাকছে না শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ ও অবকাঠামো, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে। ১৫ থেকে ২০ বছরের পুরনো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় চলছে প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার ছাড়া। আর নিজস্ব শিক্ষক না থাকায় খ-কালীন শিক্ষকই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভরসা হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকছে সব মহলেই।
উচ্চশিক্ষায় ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের প্রথম পছন্দ থাকে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হতে ব্যর্থ হন তারা অনেকেই বাধ্য হয়ে ভর্তি হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু তারপরও প্রতিবছরই খালি থাকছে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর আসন। গত পাঁচ বছরেই গড়ে ৪০ শতাংশের বেশি আসন শিক্ষার্থী শূণ্য থাকছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা ৫১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে খালি ছিল এক লাখ ১৪ হাজার ৫১২টি আসন (৩৯ শতাংশ)। ২০১১ সালে ৫২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সংখ্যা ছিল এক লাখ ৩৭ হাজার ১০১টি আসন (৪৯ শতাংশ)। ২০১২ সালে ৬০ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা খালি ছিল এক লাখ ৩১ হাজার ৯৩২টি (৩৮ শতাংশ), ২০১৩ সালে ৬৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক লাখ ৪৫ হাজার ২৫টি (৪৩ শতাংশ) এবং ২০১৪ সালে ৭৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খালি ছিল এক লাখ ৬১ হাজার ৬৫৮টি আসন সংখ্যা (৪৩ শতাংশ)। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এতসব অভিযোগের মধ্যেই আবার অনুমোদন দেয়া হয়েছে ছয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৬ জানুয়ারি এই ৬টি বেসরকারি বিশ্বদ্যালয়কে অনুমোদন দেয়া হয়। অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে দুইটি ঢাকায় এবং চট্টগ্রাম, খুলনা, মানিকগঞ্জ ও কুষ্টিয়ায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হবে। ঢাকায় অনুমোদন পাওয়া দ্য ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স-এর উদ্যোক্তা জামিল হাবিব নামের এক ব্যক্তি। অপর বিশ্ববিদ্যালয়টি হলো কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। এর উদ্যোক্তা চৌধুরী নাসির সরাফত। কুষ্টিয়ায় রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক ডিন জহিরুল ইসলাম। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্ট্রি বোর্ডে রয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তাঁর স্ত্রী। মানিকগঞ্জে অনুমোদন পাওয়া এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উদ্যোক্তা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না ও মুহাম্মদ শামসুর রহমান। চট্টগ্রামে অনুমোদন পেয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, চিটাগাং। চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা মুহাম্মদ ওসমান। এ ছাড়া খুলনায় অনুমোদন পেয়েছে নর্দান ইউনিভার্সিটি। ঢাকায় অবস্থিত নর্দান ইউনিভার্সিটির শাখা ক্যাম্পাস ছিল খুলনায়। সেটিই এখন বিশ্ববিদ্যালয় হবে। এর মালিকানা বর্তমান নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকেরাই।
ইউজিসি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ১৯৯১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যে ৯১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে এর মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকে। মঞ্জুরি কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ১০ থেকে ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যারা মান সম্পন্ন শিক্ষা প্রদান করছে। বাকিদের মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অলাভজনক হলেও এর সাথে সংশ্লিষ্টরা এগুলোকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। শিক্ষার মান উন্নয়ন করা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরিবর্তে অর্থ বাড়ানোতেই তাদের বেশি নজর থাকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, কতিপয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নবিদ্ধ কাজের কারণে সকল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের উচিব নিয়ম ভঙ্গ করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।