Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একাকীত্ব অবসাদে ভুগছিলেন নায়ক রিয়াজের শ্বশুর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ১২:০৯ এএম

বাড়ি-গাড়ি, ব্যবসা-বাণিজ্য, টাকা- পয়সা সবই ছিলো। এরপরেও যেন কিছুই ছিলো না চিত্রনায়ক রিয়াজের শশুর আবু মহসিন খানের (৫৮)। স্ত্রী শাহীনা আক্তার বিউটি একমাত্র ছেলে আফ্রিদি খান নিশানকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়াতে থাকায় একাই জীবনযাপন করতেন ধানমÐির ফ্লাটে। ছিলোনা বাসায় কাজের বুয়া, ছিলোনা গাড়ি চালকও। ফলে শেষ বয়সে একটু প্রশান্তি পেতে কারো সঙ্গে গল্প করবেন সে উপায়ও ছিলনা। সেই সঙ্গে শরীরে বাসা বাধে মরণব্যাধি ক্যান্সার। সবকিছু মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই একাকীত্ব ও অবসাদে ভুগছিলেন মহসিন খান। বেঁচে থাকার ইচ্ছায় যে কাছের মানুষগুলো রসদ জোগাবেন, তাদের অনেকে প্রতারণা করায় নিজের জীবন নিয়েই বিরক্ত হয়ে ওঠেন তিনি। এক পর্যায়ে হয়তো নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। এ ঘটনায় যাতে কাউকে হয়রানির স্বীকার হতে না হয়, সেজন্য ফেসবুকে লাইভ করার পাশাপাশি লিখে রেখে গেছেন সুইসাইড নোট। পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র ও ভবনটির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে, নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন পারিবারিকভাবে তিনি অসুখী ছিলেন না। যদিও আত্মহত্যা করার সময় নিহতের লাইভেও রয়েছে নিজের একাকীত্ব জীবন ও প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের তথ্য। চিরকুটে লিখে গেছেন, তার মৃত্যুর পেছনে কেউ দায়ী নয়।
গত বুধবার রাত ৯টায় রাজধানীর ধানমÐির ৭ নম্বর রোডের একটি বাড়ির লেভেল পাঁচ-এর একটি ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। নিহত আবু মহসিন এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন। ছেলে বড়। তিনি মাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন।

মাথায় গুলি করার আগে ফেসবুক লাইভে তিনি বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতা, পরিবার নিয়ে হতাশার কথা বলেন। এক নিকটাত্মীয়দের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে দুঃখও প্রকাশ করেন তিনি। নিজের নিঃসঙ্গতার কথা বলতে গিয়ে মহসিন বলেন, আমার এক ছেলে থাকে অস্ট্রেলিয়ায়। আমার ভয় করে যে আমি বাসায় মরে পড়ে থাকলে, লাশ পচে গেলেও কেউ হয়ত খবর পাবে না। তিনি পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। তবে ক্যান্সারে আক্রান্ত মহসিনের ব্যবসা এখন বন্ধ বলে জানা গেছে।

লাইভে নিজের উপার্জন, সন্তানদের বড় করার কথা তুলে ধরে মহসিন বলেন, প্রকৃত বাবারা না খেয়েও সন্তানদের খাওয়ানোর চেষ্টা করে, ফ্যামেলিকে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ফ্যামেলি অনেক সময় বুঝতে চায় না। নিজেকে আর মানিয়ে নিতে পারলাম না। যারা দেখছেন তাদের সঙ্গে এটাই শেষ দেখা সবাই ভালো থাকবেন। এরপর কালেমা পড়তে পড়তে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেন মহসিন। তার আগে পিস্তলের লাইসেন্স দেখান। তিনি বলেন, আমি যেটা দিয়ে আত্মহত্যা করছি, সেটি ইলিগাল কিছু না। এটির লাইসেন্স আছে। সেটি নবায়নও করা হয়েছে।

ধানমÐি থানার ওসি ইকরাম আলী মিয়া জানান, ধানমÐি ৭ নম্বর রোডের ২৫ নম্বর বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন আবু মহসিন খান। বুধবার রাত ৯টার দিকে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন তিনি।
রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আবু মহসিন খান একাই ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। তার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নন বলে সুইসাইড নোটে লিখে গেছেন তিনি। মহসিন খানের সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে, ব্যবসায় ধস নেমে যাওয়ায় আমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে অনেকের লেনদেন ছিল। কিন্তু তারা টাকা দেয়নি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মহসিন খান ২০১৭ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।

পুলিশ আরও জানায়, লাশের পাশে থাকা একটি টেবিল থেকে পাঁচটি কাগজ ও কাফনের কাপড় উদ্ধার করা হয়েছে। কাগজে পারিবারিক নানা হতাশার কথা লেখা রয়েছে। একটি কাগজে লেখা রয়েছে কার কাছে তিনি কত টাকা পাবেন। ফ্ল্যাটের দরজায় সাদা কাগজে লেখা ছিল মামা দরজা খোলা, ধাক্কা দিয়ে ভেতরে আসুন। নিহতের বাসা থেকে তার ব্যবহৃত তিনটি মোবাইল ও একটি ল্যাপটপও জব্দ করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া কাপড়ের ওপর একটি সাদা কাগজে লেখা ছিল, আমি এই কাপড় পরে ওমরা করেছি। এই কাপড় দিয়েই যেন আমাকে দাফন করা হয়।

অপরদিকে, গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে আবু মহসিনের লাশের ময়নাতদন্ত শুরু হয়। পরে ১২টায় শেষ হয় ময়নাতদন্ত। এর আগে সুরতহাল প্রতিবেদন করে মর্গে পাঠায় ধানমÐি মডেল থানা পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ সময় শ্বশুর আবু মহসিনের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। পরে আবু মহসিনের লাশ প্রথমে ধানমÐি ৭ নম্বর রোডের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বাদ আসর স্থানীয় মসজিদে নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন কবরস্থানে আবু মহসিনের ইচ্ছা অনুযায়ীই তার দাফন হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. জিনাত তাসনিম বলেন, তার (আবু মহসিন) মাথায় একটি গুলি রয়েছে। গুলির কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে, লাইভে এসে আত্মহত্যার পর ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে লাইভ আত্মহত্যার ভিডিও ৬ ঘন্টার মধ্যে ফেসবুক থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে ভিডিওটি যে কোনো ধরণের ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রচারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। এ সংক্রান্ত বিষয়টি আমলে নিয়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসিকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলেছেন। একইসঙ্গে বিটিআরসিকে এ বিষয়ে আগামী ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে, আবু মহসিন খানের ‘আত্মহত্যা’র ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে। আবু মহসিন খানের জামাতা চিত্রনায়ক রিয়াজ ধানমন্ডী থানায় এ অপমৃত্যুর মামলাটি দায়ের করেন।

 

 



 

Show all comments
  • ফখরুল ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২, ৯:৫৮ এএম says : 0
    সুতরাং যে ব্যক্তি শিক্ষকতার জীবন বেচেনেয় সে কোনদিন একা থাকে না হাজার হাজার ছাত্র তার আশপাশে থাকে ভালো ছাত্ররা শিক্ষকদের যোগাযোগ রাখে এতে সম্পর্ক ভালো থাকে । মহিলা থেকে বলবো স্বামীর ছায়াতলে থাকবেন গাড়ীর জন্য ড্রায়বার যেমন ঠিক একজন স্ত্রীর জন্য স্বামী তেমন । সুতরাং স্বামীকে মূল্যায়ন কোরন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিয়াজ

২২ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ