Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

কাশ্মীরিদের উচ্চশিক্ষায় বাধা দিচ্ছে মোদি সরকার

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৪ পিএম

মৌলিক স্বাধীনতা খর্ব করার পর, অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকদের অধিকার এখনও লঙ্ঘন করে চলেছে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার। এখন সেখানকার যুবকদের পাকিস্তানে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ খোঁজা থেকে সক্রিয়ভাবে বঞ্চিত করছে তারা।

নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার পাকিস্তানের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি লঙ্ঘন করে, ২০১৯ সালের আগস্টে ৩৭০ ধারা বাতিল করার পর থেকে কাশ্মীরিদের প্রতিটি অধিকারকে পদদলিত করেছে এবং সর্বশেষ সংযোজন শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় বাধা তৈরি করছে।

আসাদুল্লাহ মীর, যিনি শ্রীনগরের একজন ছাত্র এবং তার আসল নাম জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, তিনি বলেছিলেন যে, তিনি ডাক্তারি শিক্ষার জন্য লাহোরে যেতে চেয়েছিলেন। ‘আমি লাহোরের একটি সুপরিচিত মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করেছি এবং সেই আবেদন গৃহীত হয়েছিল,’ তিনি জানান। যাইহোক, বাধা আসে যখন ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানি ভিসার জন্য আবেদন করার জন্য প্রয়োজনীয় অনাপত্তি পত্র (এনওসি) দিতে অস্বীকার করে। তবে এই অগ্নিপরীক্ষায় মীর একা নন।

‘আমার তিন বন্ধুকে কয়েক সপ্তাহ আগে পাকিস্তান হাইকমিশন ভিসা দিয়েছে, কিন্তু ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন তাদের পাকিস্তান ভ্রমণের জন্য এনওসি দিতে অস্বীকার করেছে,’ মীর হতাশার সাথে তাদের দুর্দশার কথা বলেছেন। তিনি ভেবেছিলেন যে, এনওসি প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে বিষয়টি শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরেই তদন্তকারী সংস্থাগুলো তাদেরকে হয়রানি করতে শুরু করে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন এজেন্সির লোকেরা আমাকে প্রশ্ন করতে শুরু করে যে, আপনি কেন পাকিস্তানে শিক্ষার জন্য যেতে চান?’

মীরের এই ঘটনা ভারতে ক্রমবর্ধমান মুসলিম বিরোধী মনোভাব বুঝতে সহায়তা করে। ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশটিতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রচেষ্টায় এই মনোভাব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রীনগরের একজন ছাত্র আবদুল্লাহ, কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের পাকিস্তানে শিক্ষার জন্য আগ্রহের বিষয়ে এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের সাথে কথা বলার সময় বলেছিলেন যে, মুসলিম হওয়া এই সিদ্ধান্তে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করেছে।

‘পাকিস্তান একটি ইসলামিক দেশ হওয়ায় এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ভারতের থেকে একেবারেই আলাদা,’ তিনি জানান। পাকিস্তানে আসার জন্য ছাত্রদের কী কী অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেছিলেন, ‘ছাত্রদের বিভিন্ন উপায়ে ভয় দেখানো হয় এবং উপহাস করা হয়। পাকিস্তানে যাওয়ার অনুমতি পেতে তাদের অফিসের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।’

আবদুল্লাহ যোগ করেছেন যে উপহাস এতটাই বেড়েছে যে এখন কাশ্মীরি যুবকদের পাকিস্তানে পড়ার স্বপ্ন মরে যাচ্ছে। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রচারকারী একটি বেসরকারি সংস্থা আগাজ দোস্তির (এনজিও) আহ্বায়ক রবি নীতীশ বলেছেন, ‘যদি কাশ্মীরি ছাত্রদের শিক্ষার জন্য পাকিস্তানে যেতে বাধা দেয়া হয়, তা হতাশাজনক, এটি হওয়া উচিত নয়।’

কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে নীতীশ বলেছিলেন যে, তাদের যেখানে খুশি সেখানে শিক্ষা নেয়ার অধিকার থাকা উচিত। নীতীশ জানান, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, ধর্মীয় পর্যটন এবং চিকিৎসার জন্য ভিসা দেওয়ার চুক্তি হয়, তবে কাশ্মীরি ছাত্রদের বন্ধ করার পরিবর্তে, পাকিস্তান এবং ভারতকে শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে একে অপরকে ভিসা দেওয়া উচিত।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন, ‘দুই দেশের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির একটি চুক্তিতে পৌঁছানো উচিত, এবং যদি সরকারগুলি মনে করে যে এটি একটি নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি করতে পারে, তাহলে এটি সরকারি পর্যায়ে করা উচিত।’ সূত্র: ট্রিবিউন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ