পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
চিকিৎসা বিজ্ঞানে জ্বরকে রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। রোগের উপসর্গ বা লক্ষণ বলা হয়। জ্বর হলে সাধারণত প্যারাসেটামল জাতীয় ওষুধ খেলেই তা সেরে যায়। যদি ঘন ঘন বা প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময়ে জ্বর আসে এবং প্যারাসেটামল খেয়েও না সারে, তাহলে চিন্তার বিষয়। চিকিৎসকরা ধারণা করতে পারেন, ঘন ঘন জ্বর আসার পেছনে অন্য কোনো রোগ রয়েছে। নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দেন। রোগ ধরা পড়লে তার চিকিৎসা শুরু করেন। বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র গত বছরের ১০ ডিসেম্বর র্যাব ও পুলিশের ৭ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ওদিকে র্যাবকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘের কাছে চিঠি দিয়েছে এবং অতিসম্প্রতি ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে স্লোভাকিয়া থেকে নির্বাচিত সদস্য ইভান স্টেফানেক ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলের কাছে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য চিঠি দিয়েছেন। এসব কারণে যে কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা হঠাৎ করেই হয়নি। প্রতিদিন জ্বর আসার মতোই এর সংকেত আসছিল। সাধারণ জ্বর ভেবে অনেকে যেমন একে উপেক্ষা করে কঠিন রোগের বাসা বাঁধতে সুযোগ করে দেয়, তেমনি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিগত কয়েক বছর ধরে গণতন্ত্রের সংকোচন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে উদ্বেগ জানায়। গত বছরের শুরুর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বার্ষিক প্রতিবেদনেও মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের উন্নতি হয়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। সরকার এসব প্রতিবেদনকে হালকা জ্বরের মতো মনে করেই উপেক্ষা করে গেছে। উল্টো বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য করে উড়িয়ে দিয়েছে। এসব প্রতিবেদন উপেক্ষো করার কারণেই তা ধীরে ধীরে কঠিন আকার ধারণ করে, যার ফলে নিষেধাজ্ঞার মতো ঘটনা ঘটেছে।
দুই.
র্যাবকে নিষিদ্ধ করার জন্য জাতিসংঘে চিঠি দেয়াকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘দুঃখজনক’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকেও ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। তবে এ মন্তব্যের পাশাপাশি র্যাব গঠন নিয়ে তিনি নতুন একটি তথ্য দিয়েছেন, যা অনেকেরই অজানা। তিনি বলেছেন, ‘র্যাব তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। এই বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা শিখিয়েছে কীভাবে মানুষের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে, কীভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। এখন যদি এসবে কোনো সমস্যা হয়ে থাকে কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়, তাহলে আবার নতুন করে প্রশিক্ষণ হবে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য থেকে প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে, একটি স্বাধীন দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অন্যকোনো দেশ গঠন করে দিতে পারে কিনা। এটা একটি দেশের স্বাধীন ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী কিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে ‘নিজের দোষ অন্যের কাঁধে চাপানো’ ভাবা কি অযৌক্তিক হবে? যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে বলে দেয়া, তোমরাই র্যাব গঠন করেছ, এখন তোমরাই তাদের দোষ ধরছ এবং কর্মকর্তাদের নিষিদ্ধ করছ, এখানে আমাদের কোনো দায় নেইÑ এ বক্তব্য কি এটাই বোঝায় না? যুক্তরাষ্ট্র কেন র্যাব ও পুলিশের সাত কর্মকর্তাকে নিষিদ্ধ করেছে, তার কারণ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে। একটি দেশ তার নিজ স্বার্থে যে কাউকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিতেই পারে। এটা তার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য র্যাব তৈরি করেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ কথার সূত্র ধরে বিষয়টিকে এভাবেও ব্যাখ্যা করা যায়, বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো পারস্পরিক সহযোগিতা হিসেবে তাদের বিভিন্ন বাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ বা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। এটা স্বীকৃত ব্যাপার। আমরা দেখেছি, পরাশক্তির দেশগুলো যৌথভাবে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ কৌশলের মহড়া দিয়ে থাকে। একে অপরকে সামরিক সহযোগিতা দেয়। তার অর্থ এই নয়, তারা একে অপরের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করে দেয়। এটা কোনো স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ করতে পারে না এবং তা গ্রহণযোগ্য নয়। র্যাব যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য গঠন করেছে কিনা, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য একটি জাতীয় দৈনিক দেশ দুটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে। পত্রিকাটি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরকে ই-মেইল করে। জবাবে তারা এ ব্যাপারে মন্তব্য করবে না বলে জানিয়ে দেয়। যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসেও পত্রিকাটি ই-মেইল পাঠালে তারা কোনো জবাব দেয়নি। অর্থাৎ দেশ দুটি এ ধরনের মন্তব্যের জবাব দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। এই যে, তাদের মন্তব্য না করা, এটা দিয়ে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য কূটনৈতিক বক্তব্যের মধ্যে পড়ে না। এখন তাদের এই জবাব না দেয়া বা নীরবতাকে যদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ধরে নেন, নীরবতাই সম্মতির লক্ষণ, তবে কিছু বলার নেই। কে না জানে, সন্ত্রাস ও অন্যান্য গুরুতর অপরাধ দমনে ২০০৪ সালে বিএনপি সরকারের আমলে সামরিক বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে এলিট ফোর্স হিসেবে র্যাব (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন) গঠিত হয়। গঠনের পরপরই র্যাব শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাদের দমন করে এবং আন্ডার ওয়ার্ল্ড তছনছ করে দেয়। এতে সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। মিষ্টি বিতরণ করে আনন্দ প্রকাশ করে। র্যাবের কাজের বিপুল প্রশংসা করে। যদিও তখন মানবাধিকার সংস্থাগুলো বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দমনের বিষয়টিকে ভালভাবে নেয়নি। তারা চেয়েছিল, আইনের মাধ্যমে তাদের সাজা নিশ্চিত করা। র্যাবের সেই পদক্ষেপের কারণে এখন আন্ডার ওয়ার্ল্ডের কথা খুব একটা শোনা যায় না। কিংবা এলাকা এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসীদের দাপট ও নিয়ন্ত্রণ করার কথা শোনা যায় না। শুধু শীর্ষ সন্ত্রাসীই নয়, সে সময় জঙ্গীবাদীদের গ্রেফতার এবং দমনেও র্যাব প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে। মাদক নিয়ন্ত্রণ, জলদস্যু দমন থেকে শুরু করে মারাত্মক অপরাধ দমনে সংস্থাটি সফল হয়।
তিন.
বিএনপি আমলে গঠিত র্যাবের কর্মপরিধি এবং কার্যক্রম অদ্যাবধি চলছে। এটি একটি রাষ্ট্রযন্ত্র, যা মানুষের কল্যাণে গঠিত হয়েছে। পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীও রাষ্ট্রযন্ত্র। প্রত্যেক দেশই তার আভ্যন্তরীন শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা এবং বর্হিশত্রু মোকাবেলায় নিজস্ব বাহিনী গঠন করে থাকে। এক্ষেত্রে দেখার বিষয় হচ্ছে, এসব রাষ্ট্রযন্ত্র রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা কীভাবে এবং কোন উপায়ে ব্যবহার করছে। এ রাষ্ট্রযন্ত্রকে যদি আমরা অস্ত্রের সাথে তুলনা করি, তাহলে দেখব, এ অস্ত্র দিয়ে যেমন উপকার হয়, তেমনি অপকারও হয়। এক্ষেত্রে একটি ছুরির ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া যায়। ছুরি ফল, শাক-সবজি, মাছ-গোশত কাটাসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় উপকারী কাজে ব্যবহার করা হয়। কখনো কখনো আত্মরক্ষার কাজেও লাগে। আবার এই ছুরি হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়াবহ অরাধেও ব্যবহার করা হয়। তাই বলে কি, এটা ছুরির অপরাধ? নাকি ব্যবহারকারীর অপরাধ? বিচারের সময় কি ছুরি কে জেল-ফাঁসি দেয়া হয়, নাকি এর ব্যবহারকারিকে দেয়া হয়? অর্থাৎ যেকোনো যন্ত্র, হোক সেটি অস্ত্র কিংবা যন্ত্র, তার সু এবং কু ব্যবহার নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ইচ্ছা বা অভিপ্রায়ের ওপর। এখন যে র্যাবের এত বদনাম, এর কর্মকর্তাদের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং পুরো বাহিনীটিকে নিষিদ্ধ করার আবেদনের ঘটনা, এর জন্য কি শুধু র্যাব নামক রাষ্ট্রযন্ত্রটি দায়ী? নাকি এর ব্যবহারকারীরা দায়ী? আমরা বিগত কয়েক বছর ধরে দেখছি, পুলিশ ও র্যাবের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের মাধ্যমে মানুষের মৃত্যু, রাতের আঁধারে মানুষকে তুলে নিয়ে গুম-খুন করার অভিযোগ রয়েছে। অথচ তাদের তৈরি করা হয়েছে, জননিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং শিষ্টের লালন, দুষ্টের দমনের জন্য। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, তাদের মূল এ কাজকে ছাপিয়ে অপকর্মের কাজগুলো বেশি ফুটে উঠেছে। মাঝে মাঝে এ যন্ত্রের চেইন অফ কমান্ড কিংবা কর্মপরিধি ভেঙ্গে কেউ কেউ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা কিংবা টেকনাফে এক কমিশনার হত্যা তার অন্যতম। যারা এর সাথে জড়িত ছিল, তাদের বিচার হয়েছে এবং বিচার চলমান। সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, এই যন্ত্রের বদনাম তখনই হচ্ছে, যখন রাষ্ট্র পরিচালকরা একে রাজনৈতিক যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করেছে। এই বদনামের ধারাবাহিকতা চলতে থাকায় দেশ থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত এর বদনাম ছড়িয়েছে। এ চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সাত কর্মকর্তা নিষিদ্ধ ও ১২ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার র্যাব নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘকে চিঠি দেয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের এক সদস্যর চিঠি দেয়ার মাধ্যমে। এই নিষেধাজ্ঞা দেয়ার বিষয়টি এখানেই শেষ নয় বলে, গত মঙ্গলবার একটি দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদÑজানিপপের চেয়ারম্যান ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। তিনি বলেছেন, র্যাব ও পুলিশের ৭ কর্মকর্তা নয়, আরও ৫৬৭ জন নিষিদ্ধের তালিকায় রয়েছেন। তার মধ্যে ৭ জনকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তালিকায় বাকিরা কারা তা বলতে পারি না। এ সংখ্যাটা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত সংখ্যাটি ৩ হাজার বা তার চেয়েও বেশি হতে পারে। যদিও তিনি এ তথ্যের সূত্র উল্লেখ করেননি, তবে নিষিদ্ধের তালিকার সংখ্যা নিয়ে ইতোমধ্যে সচেতন মহলেও আলোচনা হচ্ছে। এসব তথ্য দেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অথচ যেসব কারণে নিষিদ্ধ করা এবং নিষিদ্ধ চেয়ে চিঠি চলাচালি হচ্ছে, এসব বিষয় বিগত কয়েক বছর ধরে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও রাষ্ট্র পরিচালকরা তা আমলে নেয়নি।
চার.
দেশে যে মানবাধিকারের লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটেনি বা ঘটছে না, সরকার তা জানে না, এমন মনে করার কারণ নেই। সরকার জানে বলেই, এগুলো সামাল দেয়ার জন্য অনেক আগেই যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করেছে এবং নতুন করে লবিস্ট বা পিআর নিয়োগ করার উদ্যোগ নিয়েছে। লবিস্ট নিয়োগ করার বিষয়টি উন্নত দেশগুলোতে নিষিদ্ধ কোনো বিষয় নয়। এটা স্বীকৃত। কোনো দেশ বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাবশালী এবং নীতিনির্ধারকের ভূমিকায় থাকলে, সে দেশ বা তার মিত্র দেশগুলোকে সন্তুষ্ট করার জন্য উন্নয়নকামী দেশগুলো তাদের সুনাম বৃদ্ধি কিংবা দুর্নাম ঘুচানোর জন্য লবিস্ট নিয়োগ করতেই পারে। এটাকে কূটনীতির বাইরে বিকল্প পন্থা বলা যেতে পারে। সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তখনই যখন একটি দেশের গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হয়, সুষ্ঠু রাজনীতির আকাল চলে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ধারাবাহিক ঘটতে থাকে ও মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, তখন তাতে প্রভাবশালী দেশগুলোর সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারকরা চরম অসন্তুষ্ট হয়। এক্ষেত্রে, তখন প্রাইভেটলি নিয়োগ দেয়া লবিস্টদের লবিং আমলে নেয় না। তারা আন্তর্জাতিক এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর স্বীকৃতপ্রাপ্ত ও বিশ্বাসযোগ্য মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। র্যাব ও পুলিশের ৭ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এসব সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই দেয়া হয়েছে। র্যাবের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে জাতিসংঘে চিঠি দেয়ার ক্ষেত্রে সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন গুরুত্ব পাওয়াই স্বাভাবিক। আমরা জানি না, চিঠির জবাবে জাতিসংঘ বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট কি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। তবে জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত স্টিফেন ডুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বিষয়টি তারা গুরুত্বের সাথে নিয়েছে। যদি তাই হয়, তাহলে তা দেশের জন্য ভালো সংবাদ নয়। এক্ষেত্রে, সরকারের উচিৎ হবে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে বিষয়টির যৌক্তিকতা তুলে ধরে মিনিমাইজ করা। আর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির তরফ থেকে এর জন্য যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কথা বলে আকারে-ইঙ্গিতে বিরোধী রাজনৈতিকদলগুলোকে দায়ী করা হচ্ছে, তা না করে যেসব অভিযোগে এসব ঘটছে, তার উন্নয়ন ঘটানো ও প্রতিকারের দিকে মনোযোগী হওয়া উচিৎ। মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের কাক্সিক্ষত পর্যায়ে উন্নয়ন না ঘটলে দেখা যাবে, একের পর এক এ ধরনের ঘটনার উদ্ভব ঘটতে থাকবে, যা দেশের ক্ষতি ছাড়া মঙ্গল বয়ে আনবে না।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।