মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র এখন কর্তৃত্বের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। একদিকে মার্কিন সরকারের আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং অন্যদিকে ইউক্রেনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় অবস্থান একটি বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এবং এটি এমন একটি সময়, যখন রাশিয়া ও চীন আধিপত্য বিস্তারে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে এবং মিত্র হিসেবে কাজ করছে, কিন্তু মার্কিনীরা তাদের সামরিক বাহিনীকে বিদেশের মাটিতে কম নিয়োজিত করতে চায়।
একদিকে, রাশিয়াকে মোকাবেলা করতে ও ন্যাটো দেশগুলিকে একত্রিত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র জ্বালানি শক্তির দালালের ভূমিকা পালন করছে। দেশটি জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের শীর্ষ সরবরাহকারী হিসাবে রাশিয়ার প্রাধান্যকে হ্রাস করতে মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়া থেকে জ্বালানি সরবরাহের গ্যারান্টি খুঁজছে। অন্যদিকে, আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন মার্কিন মদদপুষ্ট তাইওয়ানের সীমানায় বারবার বিমান মহড়া চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের সাথে একটি প্রশিক্ষণ অনুশীলনের অংশ হিসাবে ফিলিপাইন সাগরে নৌবাহিনীর একটি ছোট বহর নামানোর পরের দিনই চীন এর জবাবে এবছরের সব থেকে বড় মহড়াটি পরিচালনা করেছে।
এরমধ্যে, বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী উত্তর কোরিয়াও তাদের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা জোরদার করেছে। তারপর রয়েছে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির পারমাণবিক সমৃদ্ধি রোধ করার জন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি নাকোচ করে দেওয়ার পর, ইরান পারমাণবিক অস্ত্রের আরও কাছাকাছি পৌঁছাতে চেষ্টা করছে। এছাড়া, এ বছর ইরাক ও সিরিয়ার মার্কিন ঘাঁটিতে সামরিক হামলা হয়েছে। এসপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল ধাফরা বিমান ঘাঁটি, যেখানে মার্কিন সেনা রয়েছে, সেটিকে লক্ষ্য করে ইয়েমেনের হুথিরা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। হামলা সামাল দিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে যোগ দিয়েছে ইউএস প্যাট্রিয়ট মিসাইল ডিফেন্সেস।
এই সমস্ত পরিস্থিতির চুড়ান্ত ফল আসতে আরও কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। কিন্তু এই মুহুর্তে প্রশ্ন হ’ল যে, যুক্তরাষ্ট্র ভাবিষ্যতে কোন ভূমিকায় উত্তীর্ণ হবে? সিএনএন-এর স্টিফেন কলিনসন বলেছেন, ‘মার্কিন কর্তৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জগুলি এমন এক মুহুর্তে এসেছে, যখন বিদেশে একটি ব্যাপক ধারণা তৈরি হয়েছে যে, ওয়াশিংটন বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে যে শক্তি ছিল, এখন তা নয়।’ তিনি বলেন যে, ‘আমেরিকা ফিরে এসেছে’ বাইডেনের এই আশ্বাস সত্ত্বেও গত বছর আফগানিস্তান থেকে বিশৃঙ্খল সেনা প্রত্যাহার মার্কিন দক্ষতা এবং প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
কলিনসন বলেন, ‘মার্কিন প্রতিপক্ষরা জানে যে, আমেরিকানরা বিদেশে ২০ বছরের যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে, এমন একটি বিষয় যা অনেকের ভেতর এই অনুভূতির জন্ম দিতে পারে যে, রাজনৈতিক কারণে ওয়াশিংটন তার কৌশলগত বাধ্যবাধকতা থেকে সরে যেতে পারে।’ এই ভাবনার উল্টো পিঠে, ইউক্রেন হয়ে সিরিয়া থেকে এশিয়া পর্যন্ত সমস্ত ইস্যুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। কেউ নিশ্চিতভাবে জানে না যে, তিনি আসলে কি চাইছেন। তবে, ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো এবং হোয়াইট হাউসের সাবেক রাশিয়ান বিশেষজ্ঞ ফিওনা হিল দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ একটি জবরদস্ত যুক্তি দিয়েছেন, ‘পুতিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইউরোপ থেকে উচ্ছেদ করতে চান।’
হিলের মতে, ‘পুতিন টের পাচ্ছেন আমেরিকান শক্তি হ্রাস পাচ্ছে।’ হিল বলেন, ‘তিনি বিশ্বাস করেন যে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত পতনের পর রাশিয়ার মতো একই দুর্দশার মধ্যে রয়েছে: দেশে এবং বিদেশে পশ্চাদপসরণে গুরুতরভাবে দুর্বল।’ এই সুযোগে, ভূ-রাজনৈতিক শক্তিগুলি ক্ষেত্রে পুতিনের অর্থনৈতিক কৌশল তার বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ঐক্যকে ঢিল করে দিয়েছে। লন্ডন থেকে ইভানা কোত্তাসোভা সিএনএন বিজনেসে লিখেছেন যে, রাশিয়া থেকে সমুদ্র তল দিয়ে ইউক্রেন এবং জার্মানিতে যাওয়া নর্ড স্ট্রিম-২ প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন একটি ভূ-রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি করেছে। ফলে, জার্মানি অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলির মতো ইউক্রেনকে সামিরক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
রাশিয়ার গ্যাস পাইপলাইনটি দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আলোচনাকেও ধীরগতির করে দিয়েছে। জার্মান মার্শাল ফান্ড অফ দ্য ইউনাইটেড স্টেট-এর সিনিয়র ফেলো ক্রিস্টিন বার্জিনা মতে, যদি রাশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর মধ্যকার ঐক্য ভেঙে দিতে চায়, তাহলে এই পাইপলাইনটি একটি চমৎকার উপায়। সূত্র : সিএনএন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।