Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যেভাবে উদঘাটন হলো শিমু হত্যার রহস্য

বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১০:৫২ এএম

ঢাকাই চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু হত্যার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। একটি প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরেই উদঘাটন করা হয় আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য। মঙ্গলবার দুপুরেই একটি সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, অভিনেত্রী শিমু হত্যাকাণ্ডে তার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সাথে এ ঘটনায় সহায়তা করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তার স্বামীর এক বন্ধুকে। এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে পারিবারিক কলহের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলেও জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘লাশ শনাক্তের পর সোমবার রাতেই আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তার স্বামী এবং স্বামীর একজন বন্ধুকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। সেখানে সাক্ষ্যপ্রমাণ ও প্রাথমিকভাবে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় এই ঘটনায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।’

পুলিশ সুপার দাবি করেন, হত্যার পর লাশটি গুম করার চেষ্টা করা হয়েছে। অভিনেত্রীর স্বামীর বন্ধু তাকে লাশটি গুম করতে সহায়তা করেছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।

তবে শিমু হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে রাজি হননি পুলিশ সুপার। পরে মঙ্গলবার রাতে বাংলাদেশ পুলিশের নিউজ ওয়েবসাইটে হত্যাকাণ্ড, লাশ গুমের চেষ্টা এবং হত্যার রহস্য উদঘাটনের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়।

হত্যাকারীকে যেভাবে শনাক্ত করে পুলিশ : পুলিশের নিউজ পোর্টালে বলা হয়েছে, একটি প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। সেখানে বলা হয়, লাশ শনাক্তের পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করার পাশাপাশি অভিনেত্রী শিমুর বাসায় গিয়ে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে। লাশ গুম করতে দুটি বস্তা যে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই সুতারই একটি বান্ডিল শিমুর স্বামীর গাড়িতে পাওয়া যায়। গাড়িটি ধোয়া ছিল এবং দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়েছিল বলেও তারা দেখতে পায়। পরে অভিনেত্রী শিমুর স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। তখন গুমের চেষ্টায় সহযোগিতার অভিযোগে তার বন্ধুকেও গ্রেফতার করা হয়।

হত্যা ও গুমের চেষ্টা : গ্রেফতারকৃত আসামিদের বরাত দিয়ে পুলিশ নিউজে বলা হয়, পারিবারিক কলহের জেরে স্বামী শিমুকে হত্যা করেছে। রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৭টা-৮টার দিকে তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর তার বন্ধুকে মোবাইলে কল করে ডেকে আনেন তিনি। পরে লাশ গুমের বিষয়ে পুলিশের ওয়েবসাইটে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, ‘তারা দু’জন পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর লাশ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন। এরপর বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে শিমুর লাশ নিয়ে বেরিয়ে যান। প্রথমে তারা মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে আবার বাসায় ফেরেন। ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তারা লাশ গুম করতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজের ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপের ভেতর লাশটি ফেলে চলে যান। তখন রাত সাড়ে ৯টা। তারা দুজনেই মাদকাসক্ত ও বেকার বলে পুলিশ উল্লেখ করেছে।

এরআগে নিহত শিমুর বোন ফাতিমা নিশা মঙ্গলবার সকালে কেরানীগঞ্জ থানা প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেন কে আমার বোনকে হত্যা করেছে, আমরা এখনো বুঝতেই পারছি না। আমার বোন জামাইয়ের সাথে বোনের তেমন কোনো কলহ ছিল না। তাদের ১৮ বছরের সংসার, তারা লাভ ম্যারেজ করেছিল। তবে যেই হত্যা করুক, আমরা চাই, সঠিক বিচার হোক, আমরা মামলা করবো।’

জানা যায়, রাইমা ইসলাম শিমু দুই সন্তান ও স্বামীর সাথে ঢাকার কলাবাগানের গ্রিন রোডে থাকতেন। ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে শিমু ইসলামের লাশ শনাক্তের পর তার বোন সাংবাদিকদের বলেছেন, বোনের ফোন বন্ধ পেয়ে এবং তিনি বাসায় না ফেরায় তাদের সন্দেহ হয়। এরপর তারা হাসপাতাল, থানা ও এফডিসিতে খোঁজ নিতে শুরু করেন। কেরানীগঞ্জে অজ্ঞাত পরিচয় নারীর লাশ উদ্ধারের খবর জানতে পেরে তারা মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে এসে বোনের খণ্ডিত লাশ দেখতে পান। এর আগে সোমবার সকালে রাইমা ইসলাম শিমু নিখোঁজ জানিয়ে কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছিলেন তার স্বামী।

সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, রবিবার সকালে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যান শিমু ইসলাম। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। তবে পরবর্তীতে রাইমা ইসলাম শিমুকে হত্যার অভিযোগে সেই স্বামীকেই গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় করা মামলায় শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও গাড়িচালক এস এম ফরহাদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।



 

Show all comments
  • Musammat Rumi ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:০৩ পিএম says : 0
    ১৭ বছরের মেয়ে ওরা তো বাসায় ছিলো লাশ টাকে টুকরা করা হইলো ওরা কি একটুও শব্দ পায় নাই আল্লাহ ই ভালো যানে
    Total Reply(0) Reply
  • Mita Saleh Uddin ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:০৩ পিএম says : 0
    যদি বরের হাতে নিরাপদ না থাকে স্ত্রী, আর যদি অহরহ এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘরে ঘরে হতেই থাকে তাহলে কি আমরা বুঝবো শেষ জমানায় আছি।
    Total Reply(0) Reply
  • Monika Moni ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:০৪ পিএম says : 0
    মানুষ এত নৃশংস কী করে হয়? এই পাষণ্ডের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • Md Sofiqul Islam Badol ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:০৪ পিএম says : 0
    স্বামী খুন করলে ছেলে মেয়েরা কোথায় ছিল। তাহলে মেয়ে মিথ্যা কথা বলবে কেন? আসল ঘটনা জাতির কাছে প্রকাশ করুন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঢালিউড

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ