Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আওয়ামী লীগের চার প্রস্তাব

প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সংলাপ ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের আশ্বাস

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০৪ এএম

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধান অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এছাড়া কমিশনের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানোসহ চার প্রস্তাব দিয়েছে দলটি। প্রেসিডেন্টের সাথে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি সংলাপে অংশ নিয়ে এ প্রস্তাব দেয়। সংলাপ শেষে বঙ্গভবনে এক প্রেস বিফিংয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ তথ্য জানান।

এদিকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ায় প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বৈঠকে প্রেসিডেন্টের কাছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটা প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এতে ইসি শক্তিশালীকরণ, আইন প্রণয়ন, ইসির আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাড়ানো ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের নিয়োগের বিষয়েও কয়েকটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তাদের নিয়োগের জন্য একটি আইন প্রয়োজন বলেও মনে করে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে। সংসদ চলমান রয়েছে। আশা করছি চলতি অধিবেশনে এটি উত্থাপন করা হবে এবং সম্ভব হলে তা পাশ করা হতে পারে।

ক্ষমতার স্বাভাবিক পালাবদলের একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। সেই নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে অনিহা তৈরি হয়েছে। গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ায় ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি, নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি জনগণের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশ-বিদেশেও এ নিয়ে চলছে নানা অলোচনা-সমালোচনা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দল এখন আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায় না। এতে রাজনৈতিক সঙ্কটও ধীরে ধীরে প্রকট হয়ে উঠছে।

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে ১১ বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ সময়ই নির্বাচন কমিশন অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হয়েছে। সব সময় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ক্ষমতার পালাবদল নিয়েও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা হয়েছে। তবে এর মধ্যে বিশেষ করে বিগত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এ দুটি নির্বাচন নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এ্বং দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়েছে।

বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ অরো অনেক রাজনৈতিক দল এ নির্বাচন বর্জন করে। ফলে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ গুটি কয়েক রাজনৈতিক দল নিয়ে একতরফাভাবে নির্বাচন করে। এতে ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়, যাতে নির্বাচনের নৈতিক ও গণতান্ত্রিক বৈধতা নিয়ে দেশে-বিদেশে এক ধরনের প্রশ্ন ওঠে। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদের ১১তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও বিতর্ক শুরু হয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রট এ নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ করে। তারা বলে, নির্বাচনের আগের রাতে প্রশাসনের সহায়তায় ক্ষমতাসীনরা ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে রেখেছে। তাদের এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, এটি প্রমাণ হয়েছে বলে দাবি ওঠে। এসব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার বিষয়টি জনমনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ কওে, নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করছে। তাদের দ্বারা নিরপেক্ষ সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সংবিধানের আলোকে আইন প্রণয়নের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে।

সংবিধানের ১১৮(১) নং ধারায় নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো সরকারই এ বিষয়ে কোনো আইন প্রণয়ন করেনি। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে এ ধরনের আইন চালু আছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী মাসেই অর্থাৎ আসছে ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ শেষ হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত ২০ ডিসেম্বর থেকে সংলাপ শুরু করেছেন। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে মতবিনিময়ের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্টের সংলাপ শুরু হয়। এরপর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন দল সংলাপে অংশ নেয়। এবারের সংলাপে ৩২টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ ২৫টি দল সংলাপে অংশ নিয়েছে। তবে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, সিপিবি, বাসদ, জেএসডিসহ (রব) সাতটি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নেয়নি।

প্রথম দিন সংলাপে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের প্রস্তাব দেয়। এরপর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (জাসদ-ইনু) আইনপ্রণয়নের প্রস্তাব পেশ করে প্রেসিডেন্টের কাছে। ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ও খেলাফত মজলিশ, ২৮ ডিসেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টি এবং ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট ও ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপ হয়। সব দলই নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি করে। সব রাজনৈতিক দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের প্রস্তাবে গতকাল অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে গতকাল বিকাল ৩টা ৫৬ মিনিটে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে বঙ্গভবনে পৌঁছান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫টা ১০ মিনিটে বৈঠক শেষে বের হন তারা। প্রতিনিধি দলে ছিলেন, দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মো. আব্দুর রাজ্জাক, মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান।

কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আর আগামী ২০২৩ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে প্রেসিডেন্টের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গত কয়েক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট সার্চ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা প্রেসিডেন্টের রয়েছে।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৩:৪২ এএম says : 0
    এই দরনের আইন করবেন অবসরপ্রাপ্ত বিচার পতিরা বসে কি ভাবে আইন করা যায়,দলীয় ভাবে ক্ষমতায় থেকে সরকার যদি এই আইনের মতামত দেন,তাহা কি হবে ,এবং সেটা যাচাই বাঁচাই করতে অবশ্যই অবসরপ্রাপ্ত বিচার পতিরা বসে করতে পারে,উনারা যাচাই করে যেটা সিদ্ধান্ত দিবে,মহামান্য রাষ্ট্রপতি সেটি অনুমোদন দিয়ে আইন মন্ত্রনালয় পাঠাবেন,কিন্তু ক্ষমতা শীলদের ইচ্ছা মত অনুমোদন হবে না,এই অনুমোদন কেউ মানবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:৫৩ এএম says : 0
    সংসদীয় পদ্ধতি বাতিল করুন রাষ্ট্র পতি পদ্ধতি চালু করা পয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mamunur Rashid ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৮ এএম says : 1
    আলোচনা সফল ও ফলপ্রসূ হউক। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃদাবিদুল ইসলাম ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:০৯ এএম says : 1
    বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে বঙ্গভবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এর সাথে সংলাপে অংশগ্রহন করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • সেলিম রেজা মিঠু ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১০ এএম says : 1
    অভিনন্দন নিরন্তর শুভ কামনা রইল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবতার মা জননেত্রী শেখ হাসিনা
    Total Reply(0) Reply
  • সোহাগ তানভীর ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১২ এএম says : 0
    যে যাই বলুক না কেন, এই চার প্রস্তাব-ই আসল এবং এটাই কার্যকর হবে বলে মনে হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • মিফতাহুল জান্নাত ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৫ এএম says : 0
    বাংলাদেশের মানুষ কেন যেন এই সংলাপের প্রতি কোনো আশাবাদিই হতে পারছে না।
    Total Reply(0) Reply
  • সত্য রায় ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৬ এএম says : 0
    চলমান সংলাপে দেশের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংকট দূর হবে বলে মনে হয় না। এজন্য দরকার সরকারের সদিচ্ছা।
    Total Reply(0) Reply
  • সেই ডায়েরী ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৮ এএম says : 0
    আগামী জাতীয় নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • নিলিমা জাহান তনুশ্রী ১৮ জানুয়ারি, ২০২২, ৭:১৯ এএম says : 1
    সংলাপের মা্ধ্যমে সংকট কেটে যাক সেই কামনা করি।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ