মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
বিশ্বের সবচেয়ে রক্ষণশীল এবং অসহিষ্ণু দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সউদী আরবে জনমত জরিপ বিরল। তাই দেশটির ছায়া শাসক প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাম্প্রতিক উদার ও সংস্কারপন্থ’ী প্রচেষ্টাগুলোর বিরুদ্ধচারণকারীদের প্রতিক্রিয়ার মাত্রা পরিমাপ করা কঠিন। কিন্তু দেশটির অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো ইঙ্গিত করেছে যে, সেখানে অন্তত তিনটি অসন্তুষ্ট গোষ্ঠী রয়েছে: ইসলামের মৌলবাদী সংস্করণের অনুসরণকারী সালাফিরা, সউদ পরিবারের সদস্যরা এবং পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে অনিচ্ছুক সউদী ব্যবসায়ীরা।
সালাফিরা প্রচার করছে যে, প্রিন্স মোহাম্মদ রাজনীতির আরো সম্মতিমূলক ব্যবস্থাকে এক ব্যক্তির শাসনে পরিণত করেছেন এবং ধর্মীয় গোঁড়ামিকে মধ্যপন্থা দিয়ে প্রতিস্থাপন করার পরিবর্তে ধর্মকেই সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দিচ্ছেন। তারা আর দাবি করেছে যে, প্রিন্স তাদের এবং সউদ পরিবারের মধ্যে তিন শতাব্দী আগের জোটটি ভেঙে দিয়েছেন। তিনি ধর্ম-পুলিশের ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছেন, যারা এখন আর দোকান ও রেস্তোরাঁগুলোকে দিনে পাঁচবার নামাজের জন্য বন্ধ করতে, বা পুরুষ ও মহিলাদের পরস্পরের গালে চুমু দিয়ে অভিবাদন জানাতে বাধা দিতে পারেন না।
কিছু সউদীও প্রিন্স মোহাম্মেদের বিরুদ্ধে সালাফিপন্থী সমালোচনা শুরু করেছেন। তারা রিয়াদে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শীতকালীন উৎসবের নিন্দা করেছেন বলে জানা গেছে, যেখানে বিভিন্ন রাইড, গেমস এবং গান-বাজনার ব্যবস্থা ছিল। তারা প্রিন্স মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের ভূমিকা নেয়ার অভিযোগ এনেছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেদের সাথে মেয়েদের পড়ার দৃশ্যও অস্বস্তিতে ফেলেছে বহু সউদীকে। সউদী পুরুষরা প্রায়শই নারীর ক্ষমতায়নকে তাদের কর্তৃত্বের খর্ব হিসেবে দেখেন।
সউদী আরবের নজিরবিহীন পরিবর্তন সম্পর্কে একজন প্রাক্তন সৈনিক বলেন, ‘আগের দিনগুলোতে যদি আমি আমার অনুমতি ছাড়া আমার মেয়ের রাতে বাইরে যাওয়ার কথা জানাতাম, তারা তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ফিরিয়ে দিত। এখন আপনারা যদি তাকে থামানোর চেষ্টা করেন, সে পুলিশের কাছে অভিযোগ করবে এবং তারা আপনাকেই আটক করবে।’
রাজপরিবারের অনেক সদস্যও প্রিন্স মোহাম্মদের সংস্কারের বিষয়ে নাখোশ। কিছুদিন আগেও তাদের কাছে বাদশাহ্র কাছে আবেদন করার ক্ষমতা ছিল এবং জনসাধারণ ও নিজেদের জন্য ব্যয় করার জন্য অঢেল অর্থ ছিল। কিন্তু প্রিন্স এই অভিজাততন্ত্রে বাধা সৃষ্টি করেছেন। তিনি ২০১৭ সালে বেশ কয়েকজন প্রিন্স এবং ব্যবসায়ীকে তাদের নগদ অর্থ এবং প্রচুর সম্পদের উৎসে ব্যাপক দুর্নীতির কারণে শাসিয়েছিলেন।
প্রিন্স মোহাম্মদ রাজপরিবারের সদস্যদের প্রদত্ত সুবিধাগুলো (যেমন বিনামূল্যের ফ্লাইট, ইউটিলিটি খরচ এবং বিলাসবহুল চিকিৎসা সেবা) কাটছাঁটসহ বিলাসবহুল হোটেলগুলোতে তাদের অবস্থানের সময়সীমা হ্রাস করে দিয়েছেন। সেইসাথে, সরকারি চুক্তিগুলোতে কমিশন হাতিয়ে নেওয়া তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রিন্স মোহাম্মদের বিরুদ্ধে অনুরূপ আচরণের অভিযোগ করেছেন। অনেক সউদী নাগরিক রাজপরিবারের দুর্নীতিবাজ সদস্যদের জব্দ হতে দেখে খুশি হয়েছেন। অনেকে প্রিন্স মোহাম্মদের ব্যক্তি-স্বাধীনতার সম্প্রসারণে রোমাঞ্চিত। তবে, তার অর্থনৈতিক নীতিও ব্যবসায়ীদের অসন্তোষ বাড়িয়ে তুলছে।
সউদী ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, প্রিন্স মোহাম্মদ দেশের বিশাল সার্বভৌম-সম্পদ তহবিল এবং অন্যান্য রাজকীয় সংস্থাগুলোকে ব্যক্তিগত খাতে ব্যবহার করছেন। এদিকে, ভর্তুকি কমে গেছে। অন্যদিকে কর, ফি এবং জরিমানা বেড়েছে। একজন ক্যাবচালক জানিয়েছেন, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত পেট্রোলের দাম, যা একসময় পানির চেয়ে সস্তা ছিল, তা প্রিন্স মোহাম্মদের আমলে চারগুণ বেড়েছে। (অর্থনীতিবিদ এবং পরিবেশবিদরা এটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।)
প্রিন্স মোহাম্মদের মাধ্যমে সউদী আরবে ইরানের শাহের শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের নেতৃত্বদানকারী আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির সউদী সংস্করণ আবির্ভূত হতে পারে কিনা, কেউ কেউ তা নিয়েও ভাবছেন। কিন্তু, দেশটির এক প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মরহুম বাদশাহ্ ফয়সালের স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, ‘তিনি ১৯৭৫ সালে তার ভাগ্নের হাতে খুন হয়েছিলেন। প্রিন্স মোহাম্মদ জানেন, পরিবারটি কী করতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘তারা তাকে ক্ষমা করবে না’। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রিন্স মোহাম্মদ সউদী আরবের দায়িত্বে না থাকলে তার এই উদারপন্থী সংস্কারগুলো বিপরীত স্রোতে প্রবাহিত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।