Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

করোনাভাইরাসে জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্র, বাইডেন প্রশাসনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২২, ৫:১৮ পিএম

এক সপ্তাহে চারবার রেকর্ড ভঙ্গ করে করোনা ভাইরাসের বেদম দৌড়ের মধ্যে দিয়ে নতুন বছরে পদার্পণ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ওমিক্রন আতংক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার আশংকা আপামর সাধারণ মানুষের মনে।

আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের শহরগুলোর চারদিক এখনও আলো ঝলমল। টাইমস স্কয়ারে প্রতিবছরের মত জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব, ঐতিহাসিক বল ড্রপ, মাস জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় শত শত বাড়ির আলোক সজ্জা। নতুন বছর উদযাপনের আয়োজনের কোথাও ঘাটতি ছিল না, কিন্তু স্বস্তিতে নেই মানুষ।

করোনাভাইরাস শেষ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন জো বাইডেন। কিন্তু তিনি এখন জনপ্রিয়তা হারাচ্ছেন। এ'বছর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের সংসদ বা কংগ্রেসের নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তার সাথে থাকবে ৩৬টি রাজ্যের গভর্নর পদে নির্বাচন। ওমিক্রন এই 'মিড-টার্ম' নির্বাচনে বাইডেন প্রশাসনের জন্য হবে বড় এক লিটমাস টেস্ট।

ওমিক্রন কোভিড-১৯এর আগের ভেরিয়েন্টগুলোর চেয়ে তুলনামূলক ভাবে কম ভয়াবহ হলেও, তা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখ করোনাভাইরাস কেস শনাক্ত করা হয়। কিন্তু টেস্ট কিটের সংকট, বাড়িতে টেস্ট করা এবং ছুটির কারণে দেরিতে রিপোর্ট করার কারণে এই সংখ্যাকেও পূর্ণ চিত্র মনে করা হচ্ছে না। তাছাড়া বহু মানুষের উপসর্গ বিহীন সংক্রমণ থাকতে পারে যা তারা নিজেরাই জানেন না। মহামারিতে প্রথমবারের মতো প্রতিদিন গড়ে (বিগত সাত দিনের গড়) চার লক্ষরও বেশি নতুন কেসের রেকর্ড করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকদের নতুন অনুমান বলছে যে ৯ই জানুয়ারি নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি সপ্তাহে কেসের সংখ্যা হতে পারে প্রায় ২৫ লক্ষ, যদিও এই সংখ্যা ৫৪ লাখ পর্যন্ত হতে পারে। এবার এই নতুন ভেরিয়েন্ট, ওমিক্রন শিশুদের আক্রান্ত করছে অনেক বেশি। গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেটে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে রুগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। এই মুহূর্তে ওমিক্রন সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে নিউ ইয়র্কে।

নিউ ইয়র্ক স্টেটের স্বাস্থ্য বিভাগ এক বার্তায় জানিয়েছে - ডিসেম্বরের ৫ থেকে ২৪ তারিখের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়েছে চারগুণ। নিউ ইয়র্ক স্টেটের ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কমিশনার ডঃ মেরি টি বাসেট বলেছেন ''শিশুদের কোভিড-১৯এর ঝুঁকি বাস্তব।'' তিনি অভিভাবকদের পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চাদের টিকা দিতে উৎসাহী করেছেন।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে টিকা নেবার পরও কোভিড আক্রান্ত হয়ে শিশুরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগের এক বার্তায় দেয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভর্তি হওয়া ৫-১১ বছর বয়সী শিশুদের কারও সম্পূর্ণ টিকা দেয়া ছিল না। একই সময়ে ভর্তি হওয়া ১২-১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে এক-চতুর্থাংশের সম্পূর্ণরূপে টিকা দেয়া হয়েছিল। পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় টিকা দেবার পরও শিশুদের আক্রান্ত হবার সংখ্যা কোনও অংশে কম না। অমিক্রনের এই ভয়াবহতার মধ্যে, যেখানে হাসপাতালে স্থান সঙ্কুলান করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে - অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক বিরাজ করছে শিশুদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে।

মহামারির কারণে খাদ্য সঙ্কটে রয়েছে অনেক পরিবার, যাদের জীবনধারণের জন্য সেচ্ছাসেবীদের বিতরণ করা গ্রোসারির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে পর্যাপ্ত খাবার না পাবার সংকট কৃষ্ণাঙ্গ এবং ল্যাটিনো প্রাপ্তবয়স্কদের পরিবারেই বেশি- শ্বেতাঙ্গ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় যা প্রায় দিগুণেরও বেশি । যেখানে ৬ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ প্রাপ্তবয়স্কদের পরিবার এই সীমিত খাদ্য সংকটে ভুগছে, সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ প্রাপ্তবয়স্কদের পরিবার ১৭ শতাংশ, ল্যাটিনো প্রাপ্তবয়স্করা ১৬ শতাংশ।

প্রাপ্তবয়স্ক যারা আমেরিকান ভারতীয় বা বহুজাতিক হিসাবে পরিচয় দেয় তাদের পরিবার তিনগুণ বেশি এই সীমিত খাদ্য সংকটে ভুগছে। যে ড্রাইভার উবার, লিফট বা ট্যাক্সি চালিয়ে ব্যয় নির্বাহ করেন, সে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে , বা তার পরিবারে কেউ আক্রান্ত হলে- সঞ্চিত অর্থ না থাকলে তারা এখন কঠিন সময়ের মুখোমুখি হচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র মহামারি মোকাবেলায় আর্থিক সহায়তা দিলেও তা মূলত ধনীদের করেছে আরও ধনী।

কেয়ারস অ্যাক্ট আইনটি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য একটি বেল আউট বলে ঘোষণা দেয়া হলেও নিম্ন মধ্যবিত্তদের ১২০০ ডলারের অনুদান (স্টিমুলাস চেক) আর বেকারভাতা দিয়ে ধনী ব্যবসায়ীদের জন্য দিয়েছে অন্যান্য অনেক সুবিধা। নিম্নবিত্তদের খেয়ে পরে বাঁচিয়ে রেখে, পর্দার পেছনে নানারকম কর সুবিধা ও ভর্তুকি দেয়ার মধ্যে দিয়ে ধনীদের করা হয়েছে আরও ধনী।

ওয়াশিংটন পোস্ট গত বছরের এক রিপোর্টে লিখেছে, "এই বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমস্ত পরিবারের সম্মিলিত সম্পদ ১২৯.৫ ট্রিলিয়ন ডলার, যেখানে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের কাছে আছে ৩২.১ শতাংশ, যা ১৯৮৯ সালে ছিল ২৩.৪ শতাংশ। শীর্ষ ১০ শতাংশ পরিবারের মালিকানা এখন প্রতি ১০০ ডলারের এর মধ্যে ৭০ ডলার , যা কিনা ১৯৮৯ সালে ৬১ ডলারের নিচে।

মার্কিন সম্পদের বর্তমান এই ব্যবধান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নিশ্চিত একটি বাধা। মেধার এবং রিসোর্সের যথাযথ ব্যবহারের জন্য নিদেন পক্ষে একটি সহনীয় বৈষম্য মার্কিন মুলুকে এখন অনুপস্থিত। গত তিন দশকে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার কমে গেছে, শীর্ষে কেন্দ্রীভূত হয়েছে আরও বেশি সম্পদ। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাইডেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ