পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৩০ ডিসেম্বর ভারত থেকে করোনামুক্ত সনদ নিয়ে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ২৫ বছর বয়সি তন্ময় মন্ডল। ইমিগ্রেশন পার হয়ে জেলা স্বাস্থ্যবিভাগের পরীক্ষাকেন্দ্রে স্ক্রিনিং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে যশোর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়। কীভাবে ভারত থেকে তিনি করোনামুক্ত সনদ পেলেন? ভারতের করোনা পরীক্ষা কতটুকু সঠিক? এ নিয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে নানান প্রশ্ন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে করোনার উচ্চমাত্রা ওমিক্রন সংক্রমণের সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত সোমবার থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। এই বিধিনিষেধ ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। পশ্চিমবঙ্গে ওমিক্রমের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা সতর্ক না হলে বাংলাদেশে সেই সংক্রমণের সংখ্যা বেড়ে যাবে। ওমিক্রন নিয়ে যখন সারাবিশ্বের শঙ্কা তখন ফ্রান্সে করোনার নতুন ধরন আইএইচইউ শনাক্ত হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশকে এখনোই সতর্ক হতে হবে। সীমান্তে মনিটরিং বৃদ্ধিসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিরাময় ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো, আলমগীর হোসেন আশঙ্কা করছেন, সীমান্তগুলোতে কঠোরভাবে মনিটরিং না হলে আগামী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশে আগামী ৩ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট সারা দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ওমিক্রন ভাইরাস যতো মৃদু হোক না কেন, যাদের বয়স বেশি, যাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ আছে, তাদের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দেখা দিতে পারে। সেজন্য অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্তের পর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দেশে করোনাভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করছেন। বিশেষ করে ভারত এবং পাশের পশ্চিমবঙ্গে ওমিক্রন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় এই আশঙ্কা বেড়ে গেছে। গত বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ডেল্টা ভারত থেকেই বাংলাদেশে ছড়িয়েছে। প্রথমে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসা যাওয়ায় সীমান্তের জেলাগুলোতে করোনা ডেল্টা ধরন ছড়িয়ে পড়ে। অতঃপর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে যায়। ভারতের করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ২০২১ সালের ১৪ জুন সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে কয়েক দফায় সীমান্ত বন্ধের সময়সীমা বাড়ানো হয়। এতে বাংলাদেশ সুফল পায়। অবশ্য এরমধ্যেই সরকার স্বাস্থ্য অধিদফতর নতুন করে ১৫ দফা নির্দেশনা দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতাসহ কয়েকটি রাজ্যে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ যাতায়াত করেন বাংলাদেশের মানুষ। সীমান্ত দিয়ে যাতায়াতকারী এসব মানুষের মধ্যে কঠোর মনিটরিং করার জোর দাবি ভুক্তভোগীদের। তাদের বক্তব্য সীমান্তগুলোতে কঠোর মনিটরিং হলে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিরা দেশে প্রবেশ করতে পারবে না। এছাড়াও যারা স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবেন তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াও কোয়ারেন্টিন, আইনসোলেশন কঠোরভাবে কার্যকর করতে হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত। রোহিঙ্গাদের দেশ ছাড়া করার পর মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে খুব সামান্যই মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করে। আর বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত ৪ হাজার ১৫৬ কি.মি. (২ হাজার ৫৮২ মাইল)। আন্তর্জাতিক এই সীমানার মধ্যে আসাম ২৬২ কি.মি. (১৬৩ মাইল), ত্রিপুরা ৮৫৬ কি.মি. (২৭৫ মাইল), মিজোরাম ১৮০ কি.মি. (১১০ মাইল), মেঘালয়া ৪৪৩ কি.মি. (২৭৫ মাইল) এবং পশ্চিমবঙ্গ ২,২১৭ কি.মি. (১ হাজার ৩৭৮ মাইল)। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত তথা স্থলবন্দর বেশি। এসব স্থলবন্দর মনিটরিং জোরদার করতে হবে। যারা ভারত থেকে দেশে ফিরছেন, তাদের করোনার নেগেটিভ সনদ দেখা ছাড়াও পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং কোয়ারেন্টিন, আইনসোলেশন বাধ্যতামূলক করতে হবে।
প্রতিদিন যশোরের বেনাপোল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আগরতলা, দিনাজপুরের হিলি, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্দা, কুষ্টিয়ার দর্শনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ট্রাকে পণ্য আনা নেয়া হচ্ছে। এসব সীমান্ত দিয়ে মানুষ আসা যাওয়া করছে। এ ছাড়া সমুদ্রবন্দরে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি জাহাজ ভিড়ছে। মালামাল নিয়ে আসা এসব জাহাজে যারা কাজ করেন, তাদের পরোনা পরীক্ষা করা ছাড়া প্রবেশ করতে দেয়া যাবে না। বিমানবন্দর করোনার নজরদারি আরো বাড়ানো উচিত।
২০২১ সালের নভেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন শনাক্ত হয়। এক মাসের মধ্যে ওমিক্রন যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, চেক প্রজাতন্ত্র, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, ইসরায়েল, বতসোয়ানা, ভারত, হংকংয়ে ওমিক্রন শনাক্ত হয়। শুরু হয় করোনার তৃতীয় ঢেউ। ফ্রান্সে করোনার নতুন ধরন শনাক্ত। দক্ষিণ অফ্রিকার করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন যখন বিশ্বে করোনার তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে দিচ্ছে; তখন ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে করোনাভাইরাসের নতুন আরেকটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। এরই মধ্যে নতুন এ ধরনে আক্রান্ত ১২ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। মেদিতেহানি ইনফেকশন ইউনিভার্সিটি হসপিটাল ইনস্টিটিউটের (আইএইচইউ) গবেষকরা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
করোনাভাইরাসের এ ধরন হলো বি.১.৬৪০.২। এটি আইএইচইউ নামেও পরিচিত হচ্ছে। ধরনটির উৎপত্তি ফ্রান্সে কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারণ, যাদের শরীরে এ ধরন শনাক্ত হয়েছে, তারা আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনে গিয়েছিলেন বা দেশটিতে গিয়েছিলেন এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। আইএইচইউর গবেষকরা বলেছেন, তাদের গবেষণা প্রতিবেদনটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়নি।
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাবিষয়ক অপ্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের পাণ্ডুলিপি প্রকাশের একটি মাধ্যম হলো মেডরেক্সিভ। গত ২৯ ডিসেম্বর এ ওয়েবসাইটে আইএইচইউর গবেষকদের করা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
ভারতের গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, গবেষকরা বলেছেন, ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে শনাক্ত এ ধরনের রূপান্তর ঘটেছে ৪৬ বার। তারা বলছেন, ধরনটির আচরণ সম্পর্কে বলার সময় এখনো আসেনি। এ ছাড়া ধরনটি অন্য কোনো দেশে ছড়িয়েছে কি-না, তা জানা যায়নি।
গবেষকরা বলেছেন, গত বছর নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় প্রাপ্তবয়স্ক এক ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষায় প্রথম আইএইচইউ ধরন শনাক্ত হয়। ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ারও আগের ঘটনা এটি। কারণ, ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এসেছে গত ২৪ নভেম্বর।
ফ্রান্সে যে ব্যক্তির শরীরে প্রথম আইএইচইউ শনাক্ত হয়েছে, তিনি আক্রান্ত হওয়ার কয়েক দিন আগে ক্যামেরুন ভ্রমণ করে দেশে ফিরছিলেন। এরপর দক্ষিণাঞ্চলীয় ফ্রান্সে আরো ১১ জনের শরীরে আইএইচইউ শনাক্ত হয়।
এখন পর্যন্ত ফ্রান্সে মাত্র ১২ জনের আইএইচইউ আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। অন্য কোনো দেশে নতুন এ ধরনের আক্রান্ত কেউ শনাক্ত হননি। করোনাভাইরাসের আগের ধরনগুলোর তুলনায় এটি বেশি শক্তিশালী কি-না কিংবা দ্রুত ছড়ায় কি-না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এখন পর্যন্ত আইএইচইউকে ‘উদ্বেগের ধরন’ বলে উল্লেখ করেনি।
অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম নিউজ ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএইচইউ ধরনটির দিকে নজর রাখছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত মঙ্গলবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার কোভিড ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত কর্মকর্তা আবদি মাহামুদ এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আইএইচইউ যে দ্রুতগতিতে ছড়ায়নি, সেটা ইতিবাচক লক্ষণ। এর বিস্তারের যথেষ্ট সুযোগ ছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যদি দেখা যায়, এটি গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে, তবেই কেবল আইএইচইউকে ‘উদ্বেগের ধরন’ ঘোষণা করা হবে। বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, বিস্তারিত তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত আইএইচইউ ধরন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
লন্ডনের ইমপেরিয়াল কলেজের ভাইরোলজিস্ট টম পিকক বলেন, বি.১.৬৪০.২ ধরনটি নিয়ে এ মুহূর্তে উদ্বিগ্ন হওয়ার হওয়ার কিছু নেই। করোনার এ ধরন বেশ ভালো রকমের জটিলতা তৈরি করতে পারত; তবে তেমনটা ঘটেনি।
রোগতত্ত্ববিদ এরিক ফিগেল ডিং এক টুইটার পোস্টে লিখেছেন, নতুন নতুন ধরন শনাক্ত হতেই থাকবে। তার মানে এই নয় যে এগুলো অনেক বেশি বিপজ্জনক হবে। তিনি মনে করেন, অনেক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে সংক্রমণের ক্ষমতা কতটা বাড়ছে, তার ওপরই নির্ভর করে ধরনটি কতটা বিপজ্জনক হবে। ডিং বলেন, ওমিক্রন অনেক বেশি সংক্রামক এবং তা মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা নষ্ট করে দিয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে; এখন নতুন ধরনটি এমন কি-না- সেটাই প্রশ্ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।