নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
৭ ওভারের অবিস্মরণীয় স্পেল। মাত্র ১৬ রানে চোখের পলকে ছিনিয়ে নেওয়া ৩ উইকেট- মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিলেন ইবাদত হোসেন। প্রথমে ৬৯ রান করে দারুণ খেলতে থাকা ডেভিড ইয়ংকে ভেতরে আসা বলে সরাসরি বোল্ড হলেন। এরপর আগের ইনিংসে অর্ধশত করা হেনরি নিকোলসও বোল্ড বিদ্যুৎ-গতির ইয়র্কারে। এরপর টম বøান্ডেল আউট ভেতরে আসা বলে এলবিডবিøউ হয়ে। চোখের পলকে ১৩৬ রানে ২ উইকেট থেকে কোনো রান যোগ না করেই ১৩৬ রানে ৫ উইকেটের দল নিউজিল্যান্ড! সেখান থেকে মাত্র ১৭ রানে এগিয়ে থেকে চতুর্থ দিন শেষ করে স্বাগতিকেরা। ম্যাচের যা পরিস্থিতি, তাতে বাংলাদেশ দলের মানসপটে এখন ‘জয়’ শব্দটাই ঝিলমিল করছে। যেটি হবে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম দিন থেকে বল হাতে দাপুটে শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, এমনকি মুমিনুল হকের সামনেও যেন অসহায় টম ল্যাথাম, রস টেইলর, টম বøান্ডলরা। পরে সেই একই উইকেটে ব্যাট হাতে ট্রেন্ট বোল্ট, কাইল জেমিসনদের উপর ছড়ি ঘুড়িয়েছেন নবাগত মাহমুদুল হাসান জয় থেকে শুরু করে নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাস, মুমিনুল আর মিরাজরা। দুই ইনিংসে কোথাও ছিলেন না তিনি। একটি বারের জন্যও উচ্চারিত হয়নি তার নাম। যখন এলেন দৃশ্যপটে, তখন এলেন ইতিহাসের বারতা নিয়েই- ইবাদত হোসেন।
বাংলাদেশ কতটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছে, সেটা জানিয়েছে ক্রিকেটের পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ক্রিকভিজ। গতকাল বাংলাদেশের তিন পেসার ৩৭ ওভার বল করেছেন। একটি নো বলসহ ২২৩টি ডেলিভারি ছুটেছে ইবাদত, তাসকিন ও শরীফুলের হাত থেকে। এর মধ্যে ৫০টি বলই ছিল স্টাম্পে। অর্থাৎ ২২.৪ শতাংশ বলই কোনো বাধা না থাকলে স্টাম্পে আঘাত হানত বা স্টাম্প ছুঁয়ে যেত। টেস্টে কাজটা করা কত কঠিন, সেটা এবারের অ্যাশেজে ইংলিশ পেসাররা বুঝছেন। প্রতিটি টেস্ট শেষেই জিমি অ্যান্ডারসন-ক্রিস ওকসরা স্টাম্পে বেশি বল করতে না পারার আক্ষেপে পুড়ছে ইংল্যান্ড। ক্রিকভিজ জানাচ্ছে, তাদের তথ্যভান্ডারে যে তথ্য আছে, সে অনুযায়ী কোনো পেস আক্রমণই, (অর্থাৎ নিউজিল্যান্ডের পেস আক্রমণও) নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এতটা নিখুঁতভাবে স্টাম্পকে আক্রমণ করেনি।
এমন নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়েই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সব সংস্করণ মিলে প্রথম জয়ের আশা করছে বাংলাদেশ। এমন ঐতিহাসিক মুহূতের সামনে দাঁড়িয়ে শিষ্যদের ওপর আস্থা রাখছেন পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসনও, ‘আমাদের সেটা জানা আছে। আমাদের প্রতিবার এটা মনে করিয়ে দেওয়া হয়। আমরা খুব ভালোভাবেই জানি সেটা। কিন্তু আমরা আগে থেকেই এ নিয়ে ভাবছি না। আমাদের মেডিকেল দল ছেলেদের সতেজ রাখুক, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইবাদত অনেক লম্বা স্পেলে বল করেছে। তাসকিনও একটু ক্লান্ত।’ তার আশা, আজও এমন নিয়ন্ত্রণে ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশ, ‘কাল (আজ) ছেলেদের সতেজ হয়ে নামাটা জরুরি। সে ক্ষেত্রে কাল (আজ) আবারও সুশৃঙ্খল বোলিং করতে পারব এবং আজ (গতকাল) শেষ দুই ওভারে যে নিয়ন্ত্রণ ও ইচ্ছা দেখিয়েছি, সেটা দেখাতে পারব। তারপর দেখা যাবে কী হয়। কিন্তু আগেভাগেই আমরা কোনো কিছু ভেবে নিচ্ছি না। আমরা জানি, কত অর্জন অপেক্ষা করছে। আমরা যতটা সম্ভব সবকিছু সহজভাবে করতে চাই এবং নিয়ন্ত্রিত বোলিং করব এবং আজকের মতো উইকেট নেব। এরপর ম্যাচের ভাগ্যে কী লেখা থাকবে, সেটা দেখা যাবে।’
সাধারণত স্পিন দিয়ে আক্রমণ সাজানো বাংলাদেশের বোলিংয়ে হঠাৎ পেসারদের দাপট সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়েছিল গিবসনের কাছে। ইবাদতরা এদিন কেন সফল, সে ব্যাখ্যায় এই ক্যারিবীয় গ্রেট বলেছেন, ‘সাধারণত স্পিনারদের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল আমরা। উইকেট তাদের সাহায্য করলে তারা উইকেট পায়। তবে মেহেদী খেলাটা আটকে রাখার কাজটা খুব ভালো করছে। আমি জানি না কেন (পেসাররা ভালো করছে), কে জানে হয়তো নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা আমাদের খুব একটা পাত্তা দেয়নি। কিন্তু আমরা গত দুই দিন ধরে খুব নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছি। একজন বোলিং কোচ হিসেবে আমার এটা দুর্দান্ত লাগছে।’
আর এই ইতিহাসে পথ দেখানোর পথিক ইবাদতও যে স্বপ্নবাজ সেটিই জানিয়ে দিলেন গতকাল দিনের খেলা শেষেই, ‘আমরা চেষ্টা করব আগামীকাল (আজ) যেন দেশকে জিতিয়ে আসতে পারি।’ তবে একজন বাংলাদেশি ফাস্ট বোলার হিসেবে নিজের ক্রিকেট-যাত্রাটা কতটা কঠিন ছিল, সেটাও বলছিলেন তিনি, ‘দেশে ও দেশের বাইরে দুই কন্ডিশনেই আমি খেলেছি। দেশে আমাদের উইকেট একটু ব্যাটিং সহায়ক থাকে। ফ্ল্যাট থাকে। সেখানেও আমরা চেষ্টা করছি, কীভাবে উইকেট বের করা যায়। বিদেশের মাটিতে প্রথম দিন, প্রথম দুই ঘণ্টা পক্ষে থাকে। তারপর কিছুটা ফ্ল্যাট হয়ে যায়। আমরা এখনো শিখছি, কীভাবে দুই জায়গায় বল করা যায়। বল পুরোনো হলে কীভাবে রিভার্স করা যায়। আমরা এখনো শিখছি।’
শুধু মাউন্ট মঙ্গানুই নয়, ভবিষ্যতে বিদেশের মাটিতে ইবাদত, তাসকিন, শরীফুলদের এমন আরও আগুনে বোলিংয়ের আশাও দেখিয়েছেন তিনি, ‘আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের সতীর্থ ও সাপোর্ট স্টাফ- সবাই খুব সাহায্য করেছে। নিউজিল্যান্ডে আমাদের আগের ম্যাচগুলোতে এত ভালো করতে পারিনি। এই দলই চাইছে নতুন কিছু দিতে, নতুনভাবে দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে, দেশের জন্য ভালো কিছু করতে। কিন্তু কাউকে না কাউকে তো ভালো কিছু দিতেই হবে। এই দলের চেষ্টাই এটা যে বিদেশের মাটিতে জেতা শুরু করব।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।