Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইবাদতের নামটিও ইতিহাসে

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২২, ১২:০০ এএম

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওদের মাঠে এর আগে তিন সংস্করণ ৩২ ম্যাচ খেলেও জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। সবচেয়ে করুণ অবস্থা ছিল টেস্টেই। সম্ভাবনার বিচারে ওদের মাঠে টেস্ট জেতাও ছিল সবচেয়ে পেছনের কাতারে। প্রায় অবিশ্বাস্যভাবে সেই কাজটাই হয়ে গেল সবার আগে। বাংলাদেশের এই অর্জনের মাহাত্ম বোঝাতে পারে একটি তথ্য। গত ১০ বছরে উপমহাদেশের কোন দলই নিউজিল্যান্ডের মাঠে টেস্ট জেতেনি। পাকিস্তান সর্বশেষ জিতেছিল ২০১১ সালে, ভারত ২০০৯ সালে আর শ্রীলঙ্কা শেষবার নিউজিল্যান্ড জিতেছিল ২০০৬ সালে। আরেকটি তথ্য বোঝাবে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের অজেয় চেহারা। ২০১৭ সালের পর ঘরের মাঠে কোন টেস্টই হারেনি নিউজিল্যান্ড। এই সময়ে জিতেছে টানা ৮টি টেস্ট সিরিজ। প্রতিপক্ষের সেই দুর্গেই জয় বের করে ফেললেন মুমিনুলরা।
প্রথম ইনিংসে মুমিনুল হক, লিটন দাস, মাহমুদুল হাসান জয় আর নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট ছিল দুর্বার। বল হাতে শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজরা এর আগেই দেখিয়েছিলেন মুন্সিয়ানা। তবে বল হতে দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সবাইকে ছাপিয়ে গেলেন একজন- ইবাদত হোসেন। ডানহাতি এই পেসার টেস্টে তার সাদামাটা তকমা ঝেড়ে হয়ে উঠলেন বিধ্বংসী। ইনস্যুইং, আউটস্যুইং, রিভার্স, গতি মিলিয়ে মেলে ধরেন পেসের ঝাঁজ। চতুর্থ দিনেই দারুণ এক স্পেলে ৩ উইকেট তুলে জেতার রাস্তা করে দিয়েছিলেন তিনি। ইবাদত শেষ পর্যন্ত ৪৬ রানে নিলেন ৬ উইকেট। ২০১৩ সালের পর কোন বাংলাদেশি পেসার পেলেন টেস্টে ৫ উইকেটের দেখা। শেষ পর্যন্ত ইবাদতের ফিগার ২১-৬-৪৬-৬!
পাশাপাশি ইবাদত নিজের নাম ওঠালেন রেকর্ড বইতে। টেস্টে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের কোনো পেসারের সেরা বোলিংয়ের নজির এটি। ১১ টেস্টের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট দখল করেন তিনি। ক্যারিয়ারসেরা বোলিং দিয়ে তিনি গড়লেন বাংলাদেশের হয়ে নতুন কীর্তি। দেশের বাইরে টাইগার কোনো পেসারের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড এতদিন ছিল রবিউল ইসলামের দখলে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৭১ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। প্রায় নয় বছর পর সেটা ভেঙে দিলেন ২৭ বছর বয়সী ইবাদত। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বিদেশের মাটিতে তার চেয়ে সেরা বোলিং ফিগার আছে কেবল সাকিব আল হাসানের। ২০১৮ সালে কিংস্টনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬ উইকেট নিতে তিনি দিয়েছিলেন ৩৩ রান। পেসার-স্পিনার সব মিলিয়ে সাকিবই আছেন সবার উপরে।
আগের দিন ৪ উইকেট পাওয়া ইবাদত বুধবার পঞ্চম দিনে নেন আরও ২ উইকেট। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাঁধা রস টেইলরকে বোল্ড করে দেন তিনি। পরের ওভারে আক্রমণে ফিরে তিনি সাজঘরে পাঠান কাইল জেমিসনকে। হাওয়ায় ভেসে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে তাকে সহায়তা করেন শরিফুল। এরপর তাসকিন আহমেদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ মিলে গুটিয়ে দেন স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে। আগের ১০ টেস্টে ১৩ ইনিংসে বল করে ইবাদত পেয়েছিলেন ১১ উইকেট। অর্থাৎ গড়ে প্রতি ইনিংসে একটি উইকেটও ছিল না তার। এবার এক টেস্টেই তিনি পেলেন ৭ উইকেট।
আরও একটি অর্জনে রবিউলকে অতীত বানান ইবাদত। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের সবশেষ পেসার হিসেবে রবিউল টেস্টে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এরপর কাছাকাছি গেলেও আর কোনো পেসারের পাওয়া হয়নি তা। অবশেষে ইবাদত অবসান ঘটালেন দীর্ঘ অপেক্ষার। সময়ের হিসেবে প্রায় ৯ বছর এবং ম্যাচের হিসেবে ৪৭ টেস্ট পর।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইবাদতের নামটিও ইতিহাসে

৬ জানুয়ারি, ২০২২
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ