Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দেশে গম অবাদ এবারো লক্ষ্য অর্জন করতে পারল না

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ৪:৫৪ পিএম

মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছে ব্লাস্ট ও তাপ সহনশীল বীজ সহ আবাদ প্রযুক্তি পৌছছে না

এবারো বরিশাল কৃষি অঞ্চল সহ দেশে গম আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ অর্জন নিয়ে সংশয় কাটছে না। ভাল দাম ও রোগ বালাই সহনশীল বিপুল সম্ভবনাময় এ দানাদার খাদ্য ফসল আবাদে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে না। রোগ প্রতিরোধক ও তাপ সহিষ্ঞু উচ্চ ফলনশীল বীজ ও আবাদ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকের কাছে না পৌছার কারণেও কৃষকের মাঝে যথাযথ আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে না। বছর চারেক আগে ‘ছত্রাকবাহী ব্লাস্ট’ রোগের সংক্রমনে দক্ষিণÑপশ্চিমাঞ্চলের ৫টি জেলায় বিপুল পরিমান উঠতি গম ফসল বিনষ্টের পরেই সরকারী তরফ থেকে আক্রান্ত জেলাগুলোতে পরবর্তি ৩ বছর আবাদ নিরুৎসাহিত করা হয়। পাশাপাশি কৃষকদের মাঝেও আগ্রহে যথেষ্ঠ ভাটা পড়ে। তবে আশার কথা বিগত দুটি মৌসুমের মত চলতি রবি মৌসুমেও দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের কোথাও ছত্রাকবাহী এ রোগের সংক্রমন লক্ষ করা যায়নি।
কিন্তু এর পরেও গমের আবাদী জমির পরিমান সাড়ে ৩ লাখ হেক্টরও অতিক্রম করছে না। উৎপাদনও ১২ লাখ থেকে সাড়ে ১২ লাখ টনের মধ্যে। অথচ যথাযথ নজরদারী করলে দেশে আগামী ৩ বছরে গমের আবাদী জমির পরিমান ৫ লাখ হেক্টরে উন্নীত করে উৎপাদনও প্রায় ২০ লাখ টনের কাছে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদ গন।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, গত বছর ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে দেশে গমের আবাদ হয়েছিল ৩ লাখ ৪০ হাজারে হেক্টরে কাছাকাছি। উৎপাদন ছিল ১২.৩৪ লাখ টন। তার আগের বছর ৩ লাখ ৪২ হাজার ৩শ হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে উৎপাদন ছিল ১২ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩০ টনের মত। চলতি মৌসুমে দেশে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে গত বছরের চেয়ে আরো সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর কম, ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫শ হেক্টরে। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে ১২ লাখ ২৬ হাজার ৪শ টনের মত। কৃষিকবীদদের মতে ৩০ ডিসেম্বরই দেশে গম আবাদের শেষ সময়। তবে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের কম থাকলে আরো ৭Ñ১০ দিন পর্যন্ত আবাদ সম্ভব। ডিএই’র একটি সূত্রের মতে ২ জানুয়ারী পর্যন্ত দেশে গম আবাদের পরিমান ছিল ৩ লাখ ১৭ হাজার হেক্টরের মত। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর এবং গত বছরের চেয়ে ২৩ হাজার হেক্টর কম। তবে আরো দিন কয়েক গম আবাদের সম্ভবনা থাকলেও লক্ষ্যে পৌছানোর কোন সম্ভবনা নেই বলেই মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। ফলে এবারো লক্ষ্য অনুযায়ী দেশে ১২ লাখ ২৬ হাজার ৪শ টন গম উৎপাদনের সম্ভবনা নেই বলেই মনে করছেন কৃষিবীদগন।
বরিশাল অঞ্চলের ১১টি জেলায় চলতি রবি মৌসুমে ৫৫ হাজার ৫৫০ হেক্টরে গম আবাদের লক্ষ্য থাকলেও সর্বশেষ হিসেবে মোট আবাদ হয়েছে ৪৬ হাজার ৭৫০ হেক্টরের মত। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ৭ হাজার ৪৭০ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে সম্পন্ন হয়েছে ৭ হাজার ২৫০ হেক্টরে। যা গত বছরের প্রায় দ্বিগুন। আর বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫টি জেলায় ৪৮ হাজার ৮০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে প্রকৃত আবাদ হয়েছে ৩৯ হাজার ৪৭২ হেক্টরে। যা গত বছরের চেয়ে ১০ হাজার হেক্টর কম।
স্বল্প সেচ এবং সহজ বালাই ব্যবস্থাপনা সহ উৎপাদন ব্যায় তুলনামূলক ভাবে কম এবং ভাল দাম পাওয়ায় নিকট অতীতে দেশে গমের আবাদ দ্রুত সম্প্রসারন ঘটলেও ২০১৭ সালে আকষ্মিকভাবেই ৫টি জেলায় ছত্রাকবাহী ‘ব্লাষ্ট’ সংক্রমনে বিপুল গমের আবাদ বিনষ্ট হয়। এমনকি কয়েকটি এলাকায় গমের জমিতে আগুন জ¦ালিয়ে সংক্রমন প্রতিরোধ করে ডিএই। যেসব এলাকায় ব্লাষ্টÑএর সংক্রমন দেখা দেয় পরবর্তি ৩ বছর সে জেলায় গমের আবাদ নিরুৎসাহিত করারও সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ফলে অত্যন্ত সম্ভবনাময় এ ফসল আবাদ সম্প্রসারনের পরিবর্তে ক্রমশ পেছাতে শুরু করে। তবে বিগত দুটি মৌসুমে ব্লাষ্টের সংক্রমন নিয়ন্ত্রনে থাকায় পরিস্থিতি এখন অনুকুলে হলেও অত্যন্ত সম্ভনাময় এ ফসলের আবাদ সম্প্রসারনে তেমন কোন সমন্নিত উদোগ নেই।
দেশে গম আবাদের ইতিহাশ খুব বেশী দিনের না হলেও খাদ্য ফসল হিসেবে তা ইতোমধ্যেই দ্বিতীয় শীর্ষস্থান দখল করেছে। সারা বিশ্বে গম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে। ১৯৮৫ সালে দেশে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১২লাখ টন গম উৎপাদন হয়েছিল। কিন্ত এর পর থেকে গমের আবাদ সম্প্রসারনের পরিবর্তে তা ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে। বরিশাল অঞ্চলের অনেক জমিতেই গমের জমিতে এখন ভ’ট্টা ছাড়াও এবার পেয়াঁজের আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
অথচ আমাদের ‘কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ ও ‘গম গবেষনা ইনস্টিটিউট’এর বিজ্ঞানীগন ইতোমধ্যে উচ্চ ফলনশীল ও পরিবেশ উপযোগী একাধীক গম-এর জাত উদ্ভাবন করেছেন। এমনকি আমাদের দেশের মত কম শীত প্রধান অঞ্চলের জন্য ‘শতাব্দী’ নামের গম বীজও উদ্ভাবন করেছে বারি’র বিজ্ঞানীগন। বারি উদ্ভাবিত গম বীজের মধ্যে ‘কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রানী, শতাব্দী ছাড়াও সৌরভ-বারি-১৯, ও গৌরব-বারি-২০’ নামের উচ্চ ফলনশীল গম বীজও রয়েছে। এসব বীজ থেকে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৩টন থেকে সাড়ে ৪ টন পর্যন্ত গম উৎপাদন সম্ভব বলে বারি’র দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
এছাড়া গম গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীগনও আরো একাধীক উচ্চ ফলনশীল গম বীজ উদ্ভাবন করেছেন। এমনকি ব্লাস্ট প্রতিরোধী জাতের গম বীজও উদ্ভাবন করেছেন আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীগন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গম

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৩ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ