পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কানাডায় লুটেরা বিরোধী মঞ্চ কানাডার আহ্বানে ‘বেগমপাড়া ও লুটেরা বিরোধী আন্দোলনের দ্বিতীয় বার্ষিকী ও দুর্নীতি-অর্থপাচার রোধে প্রবাসীদের করণীয়’ বিষয়ক এক ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে অনুষ্ঠিত সভায় বেগমপাড়া ও লুটেরা বিরোধী আন্দোলকে কিভাবে অগ্রসর করা যায় এবং এ আন্দোলনকে শুধু কানাডায় নয়, বিশ্বের যেসব দেশে অর্থ পাচার হয় সেখানকার নাগরিকদেরকেও কানাডার এই উদাহরণ অনুসরণ করে এগিয়ে আসতে ও সোচ্চার হবার আহ্বান জানানো হয়।
এই সভায় অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্তিত ছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী ও রাজনীতিবিদ রাশেদ খান মেনন এমপি, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ। সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন লেখক, গবেষক ও সাবেক ছাত্রনেতা ড. মঞ্জুরে খোদা টরিক।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রবাসী আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের এই আন্দোলন দেশের ভাবমূর্তির কোন ক্ষতি করেনি বরং এ আন্দোলন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে।
রাশেদ খান মেনন বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে বর্তমান কাঠামোয় অর্থসম্পদ পাচার, দুর্নীতি-অনিয়ম লুটপাট বন্ধ করা কঠিন।
এম এম আকাশ দুর্নীতি-অর্থপাচার ও বেগমপাড়া বিরোধী কানাডার এ আন্দোলনের প্রশংসা করে বলেন, আমরা বাংলাদেশ থেকে যে কাজটি করতে পারিনি, কানাডার প্রবাসীরা সে কাজটি করেছেন।
বক্তারা আরও বলেন, প্রায়ই সংবাদপত্রে অর্থপাচারের সংবাদ আসে। দেশের অর্থ পাচার করে বেগম পাড়ায় যারা আয়েশি জীবন যাপন করছেন তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্তত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। সরকারকে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যে সব বিত্তশালী ও ক্ষমতাবান বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে, জনগণকে পথে বসিয়ে- দেশ থেকে অর্থসম্পদ বিদেশে পাচার করে প্রজন্মের সুখে ও নিরাপদে থাকতে চায় তাদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
কানাডার টরেন্টোসহ বিভিন্ন শহরে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন জোরদার হওয়ায় বেগম পাড়ায় বসবাসারত বেগমদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তাদের আশঙ্কা সুখের দিন বোধহয় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলতে থাকলে কানাডা সরকারও তাদের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ জারী করতে পারে। এ আশঙ্কা থেকেই অস্থিরতায় ভুগছেন।
আরেকটি ভার্চ্যুয়াল সভা : এদিকে একই দিন ‘কানাডা-বাংলাদেশ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন স্ট্রেংদেনিং কমার্শিয়াল রিলেশনস’ শীর্ষক এক ভার্চ্যুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার ড. খলিল রহমান জানিয়েছেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়াতে কানাডার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি নিয়ে সরকারি পর্যায়ে আলোচনা চলছে। কানাডিয়ান হাইকমিশনার জানান, ঢাকায় কানাডিয়ান হাইকমিশনে দেশটির ভিসা অফিস স্থাপনের বিষয়েও আলোচনা চলছে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে কো-চেয়ার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। তিনি জানান, কানাডিয়ান উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের জন্য প্লাস্টিক শিল্প অন্যতম একটি সম্ভাবনাময় খাত। অভ্যন্তরীণ বিশাল বাজারের পাশাপাশি বিশ্ব বাজারেও রপ্তানি সম্ভাবনা প্রবল। তাছাড়া তৈরি পোশাক, ওষুধ, প্রকৌশল, অটোমোবাইল শিল্পের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প হিসেবেও প্লাস্টিক পণ্যের বিশাল চাহিদা রয়েছে।
এর আগে প্লাস্টিক শিল্পের বাজার ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ। তিনি জানান, এই খাতে ১.২ মিলিয়ন মানুষ কাজ করছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ রপ্তানি হচ্ছে ১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বছরে গড়ে ৪ শতাংশ হারে এ খাতের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। প্লাস্টিকের ২৯টি উপখাতের সবগুলোই রপ্তানি সম্ভাবনাময়। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকারের দেওয়া নানা নীতি সহায়তার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
সভায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন কানাডা-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-ক্যানচ্যাম বাংলাদেশের সভাপতি মাসুদ রহমান। প্রতিবেদনে বলা হয়, কানাডিয়ান উদ্যোক্তাদের জন্য অন্যতম বড় বিনিয়োগ ক্ষেত্র হতে পারে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাত। সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এ খাতের উন্নয়নে কানাডিয়ানরা অংশ নিতে পারেন। এজন্য দেশটির বিনিয়োগ ব্যাংক এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট কানাডা (ইডিসি) ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ গঠনের মাধ্যমে এদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে কানাডার পেনশন ফান্ড থেকেও বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে।
এছাড়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, দ্বিপাক্ষিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট চুক্তি, বিদেশি বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তি সই, ভ্যানক্যুভারে বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল অফিস ও চট্টগ্রামে কানাডার অনারারি কনসাল জেনারেল অফিস স্থাপন, কানাডার নাগরিকদের বাংলাদেশে অন-অ্যারাইভাল ভিসা প্রদান, জিপিটির মেয়াদ বৃদ্ধি এবং বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে ১০০ একর জমিতে কানাডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন ঘোষণার মাধ্যমে দু’দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক দৃঢ় করা সম্ভব বলে মনে করেন ক্যানচ্যাম সভাপতি মাসুদ রহমান।
বৈঠকে উপস্থাপিত আরেক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে পর্যটনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন ভ্রমণ ম্যাগাজিনের সম্পাদক ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডজাক্ট ফ্যাকাল্টি আবু সুফিয়ান।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে ২ বিলিয়ন ডলারে নিতে নির্দিষ্ট কর্মপন্থা ঠিক করার ওপর জোর দেন ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য ও এফবিসিসিআইর পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম। কৃষিখাতে কানাডার বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য কানাডার উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বৈঠকে ৪ থেকে ৫টি খাতকে সুনির্দিষ্ট করে সেসব খাতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন ওয়ার্কিং গ্রুপের আরেক সদস্য ও এফবিসিসিআইর পরিচালক সৈয়দ আলমাস কবির।
যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের শিক্ষা বিষয়ে কাজ করার ব্যাপারে মত দেন কানাডার কো-চেয়ার নুজহাত তাম-জামান। তিনি বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আরও বেশি সংখ্যায় কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে আনতে হবে। তাহলে কানাডার দক্ষ মানবসম্পদ অভিবাসনে বাংলাদেশিদের সংখ্যাও বাড়বে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সাস্কাচেওয়ান ট্রেড অ্যান্ড এক্সপোর্ট পার্টনারশিপের সভাপতি ক্রিস ডেকার, গোলিং ডব্লিউএলজির অ্যানার্জি সেক্টর গ্রুপের প্রধান টম টিমিনস, এফবিসিসিআইর মহাসচিব মোহাম্মদ মাহফুজুল হক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।