Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিলামে বিক্রির তালিকায় শাবানা আজমী, মালালা ইউসুফজাই

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২২, ১:১৩ পিএম

নতুন বছরে ১লা জানুয়ারি ভারত শাসিত কাশ্মীরের সাংবাদিক কুরাতুলাইন রেহবার ঘুম থেকে জেগেই নিজেকে ‘অনলাইনে নিলাম’ তালিকায় দেখতে পান। অনুমতি না নিয়ে তার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে। মেয়েদের বিক্রি করে দেয়া বিষয়ে একটি অ্যাপে আপলোড দেয়া হয়েছে তা। এমন ঘটনার শিকার হয়েছেন কমপক্ষে ১০০ মুসলিম নারী।

এদিকে আবারও ভারতের কিছু প্রথম সারির মুসলিম নারীকে ‘নিলামে বিক্রি’র বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন তারা। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো একশন নেয়া হবে এমনটা আশা করতে পারছেন না। এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০০ নারীকে ‘গৃহকর্মী হিসেবে বিক্রি’ করে দেয়ার বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে অ্যাপস ব্যবহার করে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

এর মধ্যে আছেন সুপরিচিত অভিনেত্রী শাবানা আজমী, দিল্লি হাইকোর্টের একজন বিচারকের স্ত্রী, বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, অধিকারকর্মী এবং রাজনীতিক। ‘বুল্লি বাই’ নামের অ্যাপে এসব নারীকে বিক্রি করে দেয়ার বিজ্ঞাপন দেয়া হয়।
এই তালিকা থেকে বাদ যাননি পাকিস্তানের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই, নিখোঁজ শিক্ষার্থী নাজিব আহমেদের ৬৫ বছর বয়সী মা ফাতিমা নাফিজের নাম। গত জুলাইয়ে ‘সুল্লি ডিলস’ নামের অ্যাপে প্রায় ৮০ জন মুসলিম নারীকে এভাবে বিক্রি করে দেয়ার বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। এক্ষেত্রে এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ‘বুল্লি বাই’ অ্যাপের মাধ্যমে একই প্রচারণা চালানো হয়।

স্থানীয় পর্যায়ে ‘বুল্লি’ এবং ‘সুল্লি’ শব্দ দুটিই মুসলিম নারীদেরকে অবমাননা করতে অশ্লীল শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এবার পাঞ্জাবি ভাষায় ব্যবহার করা হয়েছে ‘বুল্লি বাই’। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ইংরেজি প্রতিশব্দ। অ্যাল্টনিউজে কাজ করেন সাংবাদিক মোহাম্মদ জুবায়ের। তিনিই এসব কথা জানিয়েছেন আল জাজিরাকে।

গত বছর জুলাইয়ে ‘সুল্লি ডিলস’ নিলামে নাম ছিল রেহবারের। তিনি আল জাজিরাকে বলেছেন, ওই অ্যাপে নিজের ছবি দেখে তিনি হতাশ। বলেন, যখন আমার ছবি দেখলাম, তখন আমার গলা ভারি হয়ে গেল। মনে হলো হাত পাথরের মতো ভারি হয়ে গেছে। আমি অসাড় হয়ে পড়েছিলাম। আমার জন্য এটা ছিল অপমানের।

বাস্তবে কোনো নারীকে বিক্রি করা না হলেও মাইক্রোসফট মালিকানাধীন সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক সাইট গিটহাবে সৃষ্টি করা হয়েছে ওই অ্যাপ। এর মধ্য দিয়ে মুসলিম নারীদের অবমাননা ও অপমানিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ নিয়ে যখন সোরগোল শুরু হয়, তখন শনিবার ওই অ্যাপটি নামিয়ে ফেলা হয়েছে। এর শিকারে পরিণত হয়েছেন যারা তারা বলছেন, যারাই ‘সুল্লি ডিলস’ করেছিল, সেই একই চক্র গিটহাবে ‘বুল্লি বাই’ সৃষ্টি করেছে। কারণ, দুটি বিষয়ই একই রকম।

এমন অ্যাপে নিজেদের ছবি দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শনিবার রাতেই সোচ্চার হয়েছেন কয়েক ডজন মুসলিম নারী। এতে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে আছেন রাজধানী নয়া দিল্লিতে অবস্থানরত সাংবাদিক ইসমত আরা। তিনি একই দিনে দিল্লি পুলিশের কাছে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মুসলিম নারীদের হয়রানি ও অবমাননার অভিযোগে মামলা করেছেন। বলেছেন, মুসলিম নারীদের ছবিকে কারসাজি করে অগ্রহণযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তাতে যুক্ত করা হয়েছে অশ্লীল শব্দ।

তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে রোববার দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট একটি এফআইআর নিবন্ধিত করেছে। ওই অ্যাপে ব্যবহার করা হয়েছে এমন আরেকজন হলেন সিদ্ধার্থ নামে এক নারী। তিনিও অভিযোগ দিয়েছেন। তার অভিযোগ নিবন্ধিত হয়েছে ভারতের অর্থনীতির রাজধানী বলে পরিচিত মুম্বইয়ে। তবে ইসমত আরা পুলিশের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন। তিনি মনে করছেন পুলিশি তদন্তে ঘাপলা আছে। কারণ, এর আগে ‘সুল্লি ডিলস’ ঘটনায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

‘সুল্লি’ এবং ‘বুল্লি বাই’ ডিলসে নাম এসেছে মুম্বইয়ের আইনজীবী ফাতিমা জোহরা খানের। তিনিও গত বছর মুম্বই পুলিশে অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, টুইটার, গিটহাব অথবা গো-ড্যাডি থেকে কোনো জবাব পাইনি। পুলিশ তাদের কাছে ডাটা চেয়ে অনুরোধ করলেও কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। কোর্টের কোনো নির্দেশনা ছাড়া এসব ওয়েবসাইট কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সর্বশেষ নিলামের ঘটনায় যোগাযোগ করা হলে নয়া দিল্লি বা মুম্বই পুলিশের কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য জানাননি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ