মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
গত সপ্তাহে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তথ্য শেয়ার করে প্রকাশ করে যে, সউদী আরব চীনের সমর্থনে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। এর কিছুক্ষণ পরেই, ইরান ‘দ্য গ্রেট প্রফেট ১৭’ নামে একটি মহড়া শুরু করে, যেখানে উপসাগরকে আন্তর্জাতিক ফ্রন্ট বার্নারে ফিরিয়ে দিয়ে তারা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করেছিল।
যে দুটি দেশই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উন্নয়নে চীনের কাছ থেকে সহায়তা পাচ্ছে তা চীনকে ঘিরে ফেলার সা¤প্রতিক মার্কিন নীতির জন্য একটি গুরুতর সমস্যা তৈরি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব সম্পর্কে বিশ্ব কৌত‚হলী যে, এই অঞ্চলে তার মিত্ররা সউদীদের এ পদক্ষেপে চীনের সাথে এ পর্যন্ত কৌশলগত ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তুলেছে বলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা বলতে পারি যে, বর্তমান পরিস্থিতি মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির অপ্রত্যাশিততার কারণে এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে তার গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ অনুসরণ করার জন্য চীনা সংকল্পের কারণে।
সউদীদের বিকল্প নিরাপত্তার সন্ধান : যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার বিষয়ে অনৈতিক রয়ে গেছে এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) পূর্ণ সদস্য হিসাবে গৃহীত হয়েছে, ইরান চীনে একটি শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষক পেয়েছে। এর ফলে উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরান-সউদী বৈরিতার মধ্যে সউদী আরবের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অসামঞ্জস্য সম্পূর্ণরূপে উন্মোচিত হয়। সউদী শাসনের প্রতি ইরানি হুমকির জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্রের অনাগ্রহ, ইয়েমেন যুদ্ধে সউদীদের একা পরিত্যাগ করা এবং সউদী রাজধানী রিয়াদের দক্ষিণ থেকে মার্কিন বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে সেপ্টেম্বরে সউদী আরবে প্রতিরক্ষায় বিকল্প খুঁজতে বাধ্য করে।
১৯৮৮ সালে চীন থেকে আমদানি করা ডংফেং-৩ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও সউদী আরব পশ্চিমা দেশগুলো থেকে বিশেষ করে ১৯৩২ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তাদের সমস্ত অস্ত্র ক্রয় করে আসছে যখন সউদী আরব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কিন্তু এখন তাদের প্রতিরক্ষায় পশ্চিমের ওপর নির্ভরশীলতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
প্রতিরক্ষা ও অস্ত্র শিল্পে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্ব›দ্বী চীনের দিকে ফিরে সউদী আরব এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছে যা অতীতে মধ্যপ্রাচ্যকে সোভিয়েতকে ঘিরে রাখা, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ইসরাইলের নিরাপত্তাকে সমর্থন করার জন্য অগ্রাধিকারমূলক বৈদেশিক নীতি বলে মনে করেছিল। ২০১০ এর শুরু পর্যন্ত আমেরিকা উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক অখন্ডতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্যারান্টার ছিল, কিন্তু তারপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে একটি গ্যারান্টার হিসাবে তার ভ‚মিকা থেকে সরে আসতে শুরু করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ অভিমুখীকরণের সাথে, যেটি এ অঞ্চলের শক্তির সম্পদের ওপর আর নির্ভরশীল নয়, ফ্র্যাকিং বিপ্লবের সাথে এবং চীনকে তার ‘এশিয়ান পিভট’ কৌশল দিয়ে সীমিত করার অগ্রাধিকারমূলক বৈদেশিক নীতির লক্ষ্য গ্রহণ করেছে, উপসাগরীয় অঞ্চলটি তার অগ্রাধিকার হারাতে শুরু করেছে। তবে, আইজেনহাওয়ার (১৯৫৭), নিক্সন (১৯৬৯), এবং কার্টার (১৯৮০) মতবাদের সাথে দেশটি উপসাগরীয় অঞ্চলকে মার্কিন স্বার্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসাবে ঘোষণা করেছে এবং ঘোষণা করেছে যে, এ অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থের প্রতি যেকোনো চ্যালেঞ্জের জবাব দেয়া হবে ব্যবহার করে। সব উপায়ে উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোতে শাসনব্যবস্থার নিরাপত্তা গ্যারান্টার হিসাবে মার্কিন মিশনের অবক্ষয় এবং এ অঞ্চলে তার মিত্রদের আত্মরক্ষার জন্য বাধ্য করা সউদী আরব বিভিন্ন বিকল্পের সন্ধান করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
উপসাগরে প্রবেশের চীনা নীতি : আঞ্চলিক-বিস্তৃত ক্ষমতার শূন্যতা তৈরি করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ অঞ্চলে নিরাপত্তা গ্যারান্টার হিসাবে তার ভ‚মিকা ছিনতাই হওয়ার ফলে চীনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি হয়েছে। বহু বছর ধরে দেশটি বৈশ্বিক রাজনৈতিক দৃশ্যে স্থান খুঁজছিল। চীন শক্তি নিরাপত্তা, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের আকারে একটি কৌশলের দিকে মোড় নিচ্ছে, দক্ষিণ চীন সাগরে আমেরিকান সামরিক কার্যকলাপের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে এবং উইঘুর ইস্যুতে আঞ্চলিক জোট তৈরি করছে।
চীনের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উপসাগরীয় অঞ্চল অপরিহার্য গুরুত্বপূর্ণ, যার দ্রæত বর্ধনশীল অর্থনীতির কারণে শক্তির চাহিদা বাড়ছে। উপসাগরীয় অঞ্চল, যা বৈশ্বিক তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদের দুই-তৃতীয়াংশ ধারণ করে এবং ভৌগোলিকভাবে চীনের খুব কাছাকাছি, আজ একাই চীনা তেল আমদানির ৫৫ শতাংশের জন্য দায়ী। ক্লিন এনার্জি ব্যবহার সম্পর্কে সংবেদনশীলতার কারণে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদাও বাড়ছে। চীন, যেটি ২০২১ সালে প্রতিদিন ১৫ মিলিয়ন ব্যারেল তেল ব্যবহার করেছিল, তার ব্যবহার দিনে ২০ মিলিয়নে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং উপসাগরের বাইরে অন্য অঞ্চল থেকে এ ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো প্রায় অসম্ভব। এটি একাই উপসাগরীয় অঞ্চলকে চীনের পররাষ্ট্রনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
আরেকটি উপাদান যা চীনের জন্য উপসাগরকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে তা হল বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের দেওয়া অনন্য অর্থনৈতিক ও ভ‚-রাজনৈতিক সুবিধা। ২০১৩ সালে ঘোষিত চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সাফল্যের জন্য উপসাগরীয় অঞ্চল অপরিহার্য গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু, উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, যাদের তেলের সমৃদ্ধ মজুদ রয়েছে এবং তাদের কাছে থাকা বিশাল তহবিল ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্পের দিকে ঝুঁকছে, তারা চীনা দৃষ্টিকোণ থেকে উল্লেখযোগ্য সুবিধা প্রদান করে, যা বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতি আইটেম হিসাবে বিবেচনা করে।
তৃতীয়ত, চীন যে সা¤প্রতিক মাসগুলোতে, অকাস (যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাষ্ট্র) পারমাণবিক উপ-চুক্তি দ্বারা লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে যেটির লক্ষ্য দক্ষিণ চীন সাগরে চীনকে ধ্বংস করা, এছাড়াও উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করে এই অবরোধ কাটিয়ে উঠতে চায়। বিশেষ করে, ইরানের সাথে সহযোগিতা, যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা সংজ্ঞায়িত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা এবং প্রেরণাসহ একমাত্র অভিনেতা, চীনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অবশেষে, চীন উইঘুর ইস্যু থেকে উদ্ভ‚ত সমস্যাগুলো পরিচালনা করার চেষ্টা করছে, যা এটিকে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে একটি কঠিন অবস্থানে ফেলেছে। দুটি দেশের (ইরান ও সউদী আরব) সাথে একটি জোট গঠন করে যারা ইসলামিক বিশ্বের নেতৃত্ব দেওয়ার দাবি করে। চীনের দৃষ্টিকোণ থেকে, উইঘুর ইস্যুটি একটি বিশ্বব্যাপী জিহাদে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা, যেমনটি ১৯৮০ এর দশকে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ হুমকি আফগানিস্তানে হয়েছিল। ইরান এবং সউদী আরবের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য ধন্যবাদ, চীন উইঘুর ইস্যুতে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির জন্য ইসলামিক বিশ্বের দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সমর্থন পাওয়ার আশা করছে, যা স¤প্রতি পশ্চিমে সামনের দিকে আনা হয়েছে।
উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন-চীন ভ‚-রাজনৈতিক প্রতিদ্ব›িদ্বতা : আমরা যে সময়ের মধ্যে আছি, বিশ্ব রাজনীতি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে তীব্র ভ‚-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার দৃশ্য। এ প্রতিযোগিতায়, উপসাগর তার ভ‚-রাজনৈতিক অবস্থান, আদর্শগত সুবিধা এবং সমৃদ্ধ শক্তি সম্পদের কারণে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসাবে দাঁড়িয়েছে। বহু বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে তার মিত্রদের উন্নত প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের ক্ষেত্রে চীনের সাথে সহযোগিতার তীব্র বিরোধিতা করে। কিন্তু এখন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির অপ্রত্যাশিততা তার মিত্রদের, যাদের ক্রমবর্ধমান হুমকির ধারণা রয়েছে, তাদের বিকল্প খুঁজতে বাধ্য করেছে।
এটা জানা যায় যে, চীন দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে সমর্থন করেছে, কিন্তু আজ ইরানের মতো সউদী আরবও প্রতিরক্ষা পণ্যের ক্ষেত্রে চীনের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছে, যা উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যতের জন্য উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেখে যাওয়া ক্ষমতার শূন্যতা পূরণে চীনের আগ্রহ, যা স¤প্রতি উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার লক্ষণ দেখিয়েছে, তা নির্দেশ করে যে, অদূর ভবিষ্যতে আঞ্চলিক রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে। সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।