Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পর্যটকদের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

গত বছরের করোনা লকডাউনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের পর্যটন স্পটগুলো বন্ধ ছিল, খুলে দেয়ার পর পর্যটন স্পটগুলো আবার হাজারো পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে। নভেম্বর থেকে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, কুয়াকাটা, বঙ্গোপসাগরের প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন, সুন্দরবন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের পর্যটন স্পটগুলোতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে সরগরম হয়ে ওঠার খবর পাওয়া গেছে। সেই সাথে নানা রকম বিশৃঙ্খলা, বিড়ম্বনা, নিরাপত্তাহীনতা ও গলাকাটা বাণিজ্যের খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কক্সবাজারের সৈকত এলাকায় ৮০০ টাকার রুম ভাড়া ১০ গুণ বাড়িয়ে ৮ হাজার টাকায় আদায়, আলুর ভর্তা-ডাল-ভাতের অস্বাভাবিক মূল্য আদায় ইত্যাদি খবরগুলো যখন সারাদেশে মানুষের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা ও বিক্ষোভের জন্ম দিচ্ছিল, ঠিক তখনি ঢাকা থেকে বেড়াতে যাওয়া এক পরিবারের নারী সদস্যের কক্সবাজারে অপহৃত ও ধর্ষিত হওয়ার ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আবারো স্থানীয় প্রশাসন, পর্যটন পুলিশ এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভূমিকা দেশের মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ কক্সবাজার বর্জনের ডাকও দিয়েছেন। তবে বর্জন করে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে সকলের মনোযোগ দিতে হবে।

সন্ত্রাসী, অপরাধী ও বখাটে তরুণদের বিড়ম্বনা থেকে নারী ও শিশু পর্যটকদের রক্ষা করতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা জোন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছিল। সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নের ব্যবস্থা না করে আলাদা জোন করার সিদ্ধান্তে পর্যটকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ায় ১০ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। বুধবার রাত সাড়ে ৯ টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে নারী ও শিশুদের জন্য এক্সক্লুসিভ জোন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা ও সামগ্রিক বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনা না করেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা প্রত্যাহারের এই দৃষ্টান্ত থেকেই বোঝা যায়, কক্সবাজার প্রশাসন সেখানকার বাস্তব পরিবেশ ও পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেকটাই বেখবর। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পর্যটন কেন্দ্রের প্রশাসনকে আরো দক্ষ, দায়িত্বশীল ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। কক্সবাজারসহ দেশের পর্যটন স্পটগুলোর পরিবেশ, নিরাপত্তা ও সেবার মানের উপর দেশের পর্যটনশিল্পের বিকাশ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অনেকাংশে নির্ভরশীল। এবারের পর্যটন মওসুমে কক্সবাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতির আলোকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সেখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সেবার মান ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা।

নাগরিক জীবনের টানপোড়েন ও কর্মব্যস্ততার ফাঁকে অনেক মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে সমুদ্র সৈকত বা পাবর্ত্য এলাকার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বেড়াতে যায়। সামগ্রিক নিরাপত্তায় পরিবেশের উন্নয়ন ও পুলিশি নজরদারি বাড়ানোর বদলে নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা জোন করার সিদ্ধান্ত এখানে গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্বের বড় বড় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সেবার মান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকে লক্ষ রেখে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্রগুলোর সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে হবে। পর্যটনকেন্দ্রে গলাকাটা দামে খাদ্য, হোটেল-মোটেল ও কেটারিং বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। শুধু কক্সবাজারই নয়, কুয়াকাটা, সেন্টমার্টিন, বান্দরবান, সুন্দরবন, সিলেটসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্পটগুলোকে আধুনিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও নিরাপত্তার পাশাপাশি স্বল্প খরচে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে লাখ লাখ দেশি পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকেরও সমাবেশ ঘটবে। প্রকৃতি আমাদের দেশকে উদার হস্তে মহামূল্য সম্পদ দান করেছে। যথাযথ ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতার মাধ্যমে সে সব সম্পদের কার্যকর ব্যবহার ও নিরাাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে পর্যটনশিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের জন্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বয়ে আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারের সঠিক নির্দেশনা এবং স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সমন্বিত ও সচেতন উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন। ওসি প্রদীপের মতো পুলিশ কর্মকর্তা ও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেন কক্সবাজার বা অন্য কোনো পর্যটন কেন্দ্রকে জিম্মি করতে না পারে সেদিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। কক্সবাজারকে বলা হয়, পর্যটন নগরী। এর সুবিধা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা সেই নিরিখে হতে হবে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সৈকত এবং পুরো কক্সবাজারের নিরাপত্তা নিñিদ্র হতে হবে। বলাই বাহুল্য, দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটক


আরও
আরও পড়ুন