Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পর্যটকদের নতুন দিগন্ত তারুয়া দ্বীপ সমুদ্র সৈকত

কামাল গোলদার, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

চরফ্যাশনের মূল খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের নাম ‘ঢালচর’। এ দ্বীপের দক্ষিণ পাশেই অবস্থান একটি সৈকতের। দীর্ঘ মেঘনা নদী এখানে পেয়েছে বিশাল সমুদ্রে তটের দেখা। সেখানেই গড়ে উঠেছে অপরুপ সাজে সেজেছে অপূর্ব লীলাভ‚মি লাল কাকড়ার দ্বীপ তারুয়া।
জেলা সদর থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে তারুয়া সমুদ্র সৈকতের অবস্থান। ১৩৫ কিলোমিটার পাকা সড়কে পর পনের কিলোমিটার নৌ-পথ পেরিয়ে সেখানে যেতে হয়। তারুয়ায় সকালের সূর্যটা যেমন হাসতে হাসতে ওঠে, তেমনি সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে লাল আভা ছড়াতে ছড়াতে মুখ লুকায়। এখানে এলেই বোঝা যাবে, কতটা সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে প্রকৃতিতে।
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের দক্ষিণ প্রান্তেই বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অপরূপ মায়াবি সৌন্দর্যে সেজে আছে তাড়–য়া সমুদ্র সৈকত। এখানে রয়েছে প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, হরিণ, লাল কাঁকড়া, ২৩০ ফুট লম্বা কাঠের তৈরি ল্যান্ডিং স্টেশন, বিশাল কেওড়াও তারুয়া বন। রয়েছে গড়ান, রেইনট্রি, গেওয়াসহ নানা ধরনের গাছ। শীত এলেই দ্বীপে বসে অতিথি পাখির মিলনমেলা।
তারুয়া দ্বীপে ভয়ঙ্কর প্রাণী না থাকলেও রয়েছে শেয়াল, বন বিড়াল, সাপসহ নানা প্রজাতির প্রাণী। সৈকতের সাদা বালিয়ারিতে পর্যটকদের জন্য রয়েছে ছাতা ও চেয়ার। চকচকে সাদা বালু আর এই বালিয়ারিতে লাল কাঁকড়ারা ছোট ছোট পা দিয়ে দৌড়ে চলে। তবে মানুষের উপস্থিতি টের পেলেই ওরা লুকিয়ে যায় গর্তে। মাথার ওপর কিংবা বেলাভ‚মিতে বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো পাখির কলকাকলিতে মুখর চারপাশ। তবে শীতের সময় অতিথি পাখির বিচরণে এক অতি প্রাকৃতিক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের বর্ণিল আলোকচ্ছটা মোহিত করবে যে কাউকে। নাগরিক ব্যস্ততার বন্দিজীবনে অবকাশ যাপনের জন্য প্রকৃতি প্রেমীরা একটু সময় করে এখানে এলে প্রকৃতি তাদের নিরাশ করবে না।
তারুয়া সমুদ্র সৈকতে পর্যটকরা একসঙ্গে উপভোগ করতে পারেন বিশাল সমুদ্রের জলরাশি হরেক রকম পরিযায়ী পাখিদের কল-কাকলি, বালুকাময় মরুপথ আর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের ছায়াঘন মনকাড়া নিবিড় পরিবেশে সময় কাটানোর সুযোগ, বৈচিত্রময় প্রাণী আর সাগরের উত্তাল গর্জন। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে দ্বীপটিকে সাজিয়ে তুলেছে। বর্তমানে তারুয়া দ্বীপটি বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
ব্যস্তময় জীবনের একঘেয়েমি থেকে অবকাশ যাপনের ইচ্ছায় ঘুরে আসার মতো একটি স্থান তারুয়া সমুদ্র সৈকত। উত্তাল ঢেউয়ের গর্জন, কেওড়ার শ্বাসমূল, নির্মল বাতাস, সমুদ্রের তাজা মাছ দেখে যেকেউ প্রেমে পড়ে যাবে। প্রকৃতি প্রেমিরা ঘুরে এলেও মন রয়ে যাবে সেখানেই।
তারুয়া সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটক শাহারুন নেছা জানান, বৈচিত্রের লীলাভ‚মি তারুয়া সৈকত। বিশাল সমুদ্র সৈকতে জলরাশিতে মনমুগ্ধকর করে ঘুরতে আসা পর্যটকদের।
পর্যটক নেছার উদ্দিন জানান, ছুটিতে প্রত্যেক শীতেই পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরে আসি তারুয়া দ্বীপে। এ যেন এক অন্যরকম অনুভ‚তি। বিচ্ছিন্ন এলাকায় এমন সমুদ্র সৈকত আর বিশল জলরাশি পর্যটকদের মুগ্ধ করেছে।
ঢাকা সদরঘাট থেকে প্রতিদিন একাধিক লঞ্চ চরফ্যাশনের বেতুয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। লঞ্চগুলো ভোরবেলায় ঘাটে পৌঁছায়। লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০, ডাবল ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা। ডেক ভাড়া জনপ্রতি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। চরফ্যাশনের বেতুয়া ঘাটে নেমে ইজিবাইকে করে ৩০ টাকা দিয়ে চরফ্যাশন বাজারে যেতে হবে। সেখান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে কচ্ছপিয়া অবধি বোরাক ভাড়া ৬০ টাকা। এসব জায়গায় মোটরসাইকেলও চলে, তবে সেক্ষেত্রে ভাড়া গুনতে হবে দ্বিগুণ।
কচ্ছপিয়া ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে (ভাড়া ১০০ টাকা) ঢালচর যেতে হবে। যাওয়ার পথে ছোট ছোট নদ নদী পারাপারের সময় বহু সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি পাখির কল-কাকলি শুনতে পারবেন।
ঢালচর লঞ্চঘাট থেকে সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার পথ দুটি। এর মধ্যে একটি উপায় বনের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায়। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক কষ্ট হবে। কারণ সেখানে কোনো মসৃণ রাস্তা নেই। বেশিরভাগ জায়গা জুড়ে কেওড়া বাগান। নতুন কারও পক্ষে হাঁটা ততটা সহজ নয়। অপরদিকে ট্রলার দিয়েও তারুয়া সমুদ্র সৈকতে যেতে পারবেন। এই একই ভ্রমণে পর্যটকরা চর কুকরি-মুকরি ইকোপার্কও ঘুরে আসতে পারবে।
এ সমুদ্র সৈকতে থাকার কোনো আবাসিক হোটেল বা ডাকবাংলো নেই। তবে এখানে বেশকিছু বাসায় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব ঘরে জনপ্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় থাকা যায়। আর খোলা আকাশের নিচে তাবু করে থাকাটা উত্তম। স্থানীয়দের কাছ থেকেও তাবু ভাড়া নিয়ে এখানে থাকা যাবে। ক্যাম্পিংয়ের জন্য আদর্শ জায়গা বলা যেতে পারে এ সমুদ্র সৈকতকে।
এই দ্বীপে দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এছাড়া নদী ও সাগরের নানা প্রজাতির সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়। তবে এখানকার হাঁসের মাংস ভুনা, মহিষের দুধের দই খুবই জনপ্রিয়। এখানে কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্ট নেই। তবে স্থানীয়দের সহায়তায় ইচ্ছেমতো রান্না করিয়ে খেতে পারবেন। অথবা নিজেরা রান্না করে খেতে হবে।
পর্যটকদের নির্বিশেষে ভ্রমণের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া আছে। যাতে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশি টহল রাখা হয়েছে।



 

Show all comments
  • Md Parves Hossain ৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:২১ এএম says : 0
    খুবই ভালো খবর। যো্গাযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:২২ এএম says : 0
    পর্যাপ্ত পর্যটন অবকাঠামো গড়ে তোলা গেলে প্রচুর পর্যটক টানা যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Rabbul Islam Khan ৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:২২ এএম says : 0
    পর্যটকদের জন্য একটা ভালো খবর।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটক


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ